শেষ বলে নিষ্পত্তি হওয়া টেস্টে ওয়াইড নিয়ে বিতর্ক

প্রবাথ জয়াসুরিয়ার ওভারে ওয়াইড নিয়ে বিতর্ক হয়েছেছবি: এএফপি

টেস্ট ম্যাচে ওয়াইড ঠিক কখন ওয়াইড?

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে আজ শেষ দিনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড শেষ বলে জেতার পর এই প্রশ্ন উঠেছে। বিতর্কটা খোলাসা করার আগে এই ম্যাচের শেষ ওভারের সমীকরণ জানিয়ে রাখা ভালো। তাতে বিতর্ক ওঠার কারণটা বোঝা যায়। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ৮ রান দরকার ছিল নিউজিল্যান্ডের।

আসিতা ফার্নান্দোর করা শেষ ওভারের পঞ্চম বল পর্যন্ত ৭ রান তুলেছে কিউইরা। শেষ বলের ফল তো প্রায় সবারই জানা। শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। স্বাগতিকেরা শেষ বলে রানটা নিতে না পারলে ম্যাচ ড্র হতো। শ্রীলঙ্কাকে অন্তত হারতে হতো না।

আরও পড়ুন

এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। আজ নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৮তম ওভারে লঙ্কান স্পিনার প্রবাথ জয়াসুরিয়াকে সতর্ক করে দেন মাঠের আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানি। সেই ওভারের দ্বিতীয় বলটি লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরে করেন জয়াসুরিয়া। আম্পায়ারের সতর্কবার্তা কানে তোলেননি। ওই ওভারে পরের সব কটি ডেলিভারিই লেগ স্টাম্পের বাইরে করেন এবং পরিণামে ৩টি ওয়াইড হজম করতে হয়।

শ্রীলঙ্কা দল যে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে সন্তুস্ট ছিল না, তা বোঝা গেছে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস আম্পায়ারের সঙ্গে এ নিয়ে ওভারের শেষে কথা বলার সময়। নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ‘স্টাফ ডট কো এনজেড’ জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার এই সিনিয়র ক্রিকেটার গ্যাফানির কাছে জানতে চান, পেসাররা যখন লেগ স্টাম্পের বাইরে বল করেছে, তখন ওয়াইড দেওয়া হয়নি কেন?

শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে ম্যাচ শেষে এ নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর দল জানতে চেয়েছে, আম্পায়াররা শুধু স্পিনারদের কেন লক্ষ্যবস্তু করলেন? দুই প্রান্ত থেকেই পেসারদের ক্ষেত্রে কেন আম্পায়ারা কিছু বলেননি?

নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম করুণারত্নের মন্তব্য প্রকাশ করেছে, ‘আমরা জানতে চেয়েছি ফাস্ট বোলাররা যখন ৭–২ ফিল্ডিং সাজিয়ে এমনকি লেগে ৬–৩ ফিল্ডিং সাজিয়ে বল করেছে, তখন তারা কেন ওয়াইড ডাকেননি। তাই আমাদের প্রশ্ন ছিল, একই কাজ জয়াসুরিয়া করার সময় কেন অন্যথা ঘটল। জয়াসুরিয়ার জন্য কোনো (পিচে) ভালো জায়গা ছিল না। লেগে অমসৃণ একটা জায়গা ছিল, আমরা তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি, সেটি মোটেই নেতিবাচক বোলিং ছিল না।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

মাঠে ম্যাথুসের প্রশ্নের উত্তরে গ্যাফানি বলেছেন, ‘আমরা এ নিয়ে পরে কথা বলব।’ ম্যাথুসের উত্তর ছিল, ‘আমি যতটুকু বুঝি, সিমার ও স্পিনার—দুই পক্ষের ক্ষেত্রেই ন্যায়বান হতে হবে।’ জয়াসুরিয়ার ওভার শেষে করুণারত্নে নিজেও আম্পায়ারের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেছেন।

নিউজিল্যান্ডের ‘স্পার্ক স্পোর্ট’–এর ধারাভাষ্যে দুই সাবেক ক্রিকেটার মার্ক রিচার্ডসন ও স্টিফেন ফ্লেমিংও ওয়াইড নিয়ে যুক্তি–তর্ক করেন। টেস্টে কোনটা ওয়াইড—এটাই ছিল তর্কের বিষয়। রিচার্ডসনের যুক্তি ছিল, টি–টোয়েন্টি ও ওয়ানডের মতো টেস্টে বোলারদের ওয়াইড নিয়ে এত বাঁধাধরা নিয়ম নেই। ব্যাটসম্যানরা চাইলে যেকোনো ডেলিভারিই ব্যাটে খেলতে পারেন। আর বোলাররাও একটু অন্য রকম ডেলিভারি করতে পারেন, ‘(সিদ্ধান্তটা) পছন্দ হয়নি। এটা তো ওয়ানডে না, টেস্ট ম্যাচ।’ ফ্লেমিং পাল্টা যুক্তি দিয়ে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকেই ঠিক বলে যুক্তি দেন, ‘দ্বিমত পোষণ করি (রিচার্ডসনের সঙ্গে)। এটা (ওয়াইড দেওয়া) করা হয়েছে খেলাটির চেতনা ঠিক রাখতে। ধরা যাক, দুই ওভারে ১২ রান দরকার, এমন মুহূর্তে কেউ লেগ স্টাম্পের দুই ফুট বাইরে বল করলে সেটি নেতিবাচক বোলিং।’

জয়াসুরিয়া এরপর আর লেগ স্টাম্পের বাইরে বল করেননি। আম্পায়ারও ওয়াইড দেননি। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার সেটি যে হয়ে গেছে, তা বোঝা গেছে ম্যাচের শেষ বলটির পর। শেষ বলে ১ রান দরকার ছিল নিউজিল্যান্ডের। ওই তিনটি ওয়াইড না হলে দরকার হতো মোট ৪ রান। লক্ষ্যটা আরও কঠিন হতো নিউজিল্যান্ডের জন্য। ভুল গেলে চলবে না, কেইন উইলিয়ামসন কিন্তু ফার্নান্দোর শেষ বলটি ব্যাটে খেলতে পারেননি।

শ্রীলঙ্কার আপত্তির জায়গাটা পরিষ্কার।

আরও পড়ুন