হাথুরুসিংহের চাকরিচ্যুতি নিয়ে কী আছে বোর্ড সভার কার্যবিবরণীতে

ফারুক আহমেদ ও চন্ডিকা হাথুরুসিংহেপ্রথম আলো

আবারও আলোচনায় চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আলোচনায় তাঁকে এনেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি বদল নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক। আজ আবার পেশাজীবীদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে এক মন্তব্য করে হাথুরুসিংহে নিজেও সে আলোচনার অংশ হয়েছেন।

বিসিবির সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে আট বোর্ড পরিচালক ক্রীড়া উপদেষ্টা বরাবর যে অনাস্থাপত্র দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশ দলের কোচের পদ থেকে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করে সভাপতি ফারুক এককভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

যদিও গত বছরের ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের জরুরি ভার্চ্যুয়াল সভার কার্যবিবরণী সে কথা পুরোপুরি বলে না। প্রথম আলোর হাতে আসা কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, সভার আলোচ্যসূচিতে থাকা সাতটি বিষয়ের মধ্যে সেদিন প্রথম আলোচনা হয় জাতীয় দলের প্রধান কোচকে চাকরিচ্যুতি করা নিয়ে।

ইংরেজিতে লেখা কার্যবিবরণীর এ অংশে যা আছে তা বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘মাননীয় বোর্ড সভাপতি ভারতে অনুষ্ঠিত ২০২৩ বিশ্বকাপের (২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর ২০২৩) খারাপ পারফরম্যান্স নিয়ে বোর্ডের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি উত্থাপন করেন।’

বিসিবির সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ
প্রথম আলো

‘বোর্ড সভাপতি বোর্ডকে জাতীয় দলের কোচ মি. চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অসদাচরণ (শৃঙ্খলাজনিত বিষয় ও প্রাপ্য ছুটির চেয়ে বেশি ছুটি ভোগ করা) সম্পর্ক অবগত করেন। বোর্ড সভাপতি সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করেন।’

এরপর সিদ্ধান্তের জায়গায় লেখা রয়েছে, ‘অসদাচরণের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করার নোটিশ বোর্ড অনুমোদন করেছে।’

একই সভায় জাতীয় দলের নতুন কোচ হিসেবে ফিল সিমন্সের নিয়োগও অনুমোদন করা হয়।

আরও পড়ুন

ভার্চ্যুয়াল সভাটিতে অংশ নেওয়া বিসিবি পরিচালকদের তালিকার প্রথমেই আছে মাহবুবুল আনামের নাম। এরপর যথাক্রমে আছে আকরাম খান, কাজী ইনাম আহমেদ, সালাহউদ্দিন চৌধুরী, ইফতেখার রহমান, সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, ফাহিম সিনহা, মনজুর আলম, নাজমূল আবেদীন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর নাম।

সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ। সভাপতি ছাড়াও কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর আছে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বোর্ড অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজারের।

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আবারও আলোচনায় এসেছে আমার নাম। ক্রিকইনফোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিসিবি সভাপতির অপসারণের পেছনে একটি কারণ ছিল আমাকে বরখাস্ত করার পদ্ধতি, যেখানে বোর্ডের যথাযথ পরামর্শ ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
লিংকডইনে লিখেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে

অথচ ক্রীড়া উপদেষ্টাকে আট পরিচালকের দেওয়া ফারুকের ওপর অনাস্থার চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে জনাব ফারুক আহমেদ তার একক সিদ্ধান্তে ও পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে কোনোরূপ আলাপ আলোচনা না করেই জাতীয় ক্রিকেট দলের তৎকালীন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে অপসারণ করেন। যাহা আমরা অন্যান্য পরিচালকগণ পরবর্তীতে বোর্ড সভাপতির প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানতে পারি।’

আরও পড়ুন

চিঠিতে হাথুরুসিংহেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে আরও বলা হয়েছে, ‘জাতীয় দলের কোচ পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিসিবির সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪ (ব) মোতাবেক পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলেও ফারুক আহমেদ সেই নিয়মের তোয়াক্বা না করেই প্রধান কোচকে অপসারণ করেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল ওই সভায় যোগ দেওয়া এক বোর্ড পরিচালকের কাছে, যিনি ফারুকের প্রতি অনাস্থা জানানোর চিঠিতেও সই করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আসলে বিষয়টি সভাপতি সভায় তুলেছিলেন সিদ্ধান্ত নিয়ে।’ সভায় পরিচালকদের কেউ সে সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে অবশ্য তিনি কিছু বলেননি।

চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। যখন বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন
প্রথম আলো

ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোতে ফারুককে বিসিবি সভাপতি পদ থেকে অপসারণের খবর পড়ে আজ লিংকডইনে হাথুরুসিংহে লেখেন, ‘আমার বিদায়টি এখন বৃহত্তর ঘটনার একটি অংশ—ইএসপিএনক্রিকইফোর প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।’

পরে তিনি যোগ করেছেন, ‘এমনিতে আমি চাই, আমার কাজই আমার হয়ে কথা বলুক। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আবারও আলোচনায় এসেছে আমার নাম। ক্রিকইনফোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিসিবি সভাপতির অপসারণের পেছনে একটি কারণ ছিল আমাকে বরখাস্ত করার পদ্ধতি, যেখানে বোর্ডের যথাযথ পরামর্শ ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।’ লেখার শেষ অংশে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত এই কোচ লিখেছেন, ‘স্বচ্ছতা, প্রক্রিয়া আর সম্মান—মাঠে হোক বা মাঠের বাইরে—এই মূল্যবোধগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও পড়ুন