আরও একবার নাকভিকে ট্রফি ফেরত দিতে বলল ভারত, দিল সতর্কবার্তাও
নবমবারের মতো এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ট্রফি বুঝে না পাওয়ায় এবার মহসিন নাকভিকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছে ভারত।
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভাপতি মহসিন নাকভির সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) চলমান টানাপোড়েন নতুন মোড় নিয়েছে। এশিয়া কাপ ট্রফি ইস্যুতে বিসিসিআই নতুন করে নাকভিকে সতর্কবার্তা দিয়েছে।
অবশ্য এটিকে সতর্কবার্তা না বলে প্রচ্ছন্ন হুমকিও বলা যায়। কারণ, নাকভিকে ই–মেইলে পাঠানো সর্বশেষ চিঠিতে বিসিসিআই লিখেছে, ভারতীয় দলকে ট্রফি না দিলে তাঁকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে ও এনডিটিভি এবং বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দুবাইয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপ ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, সূর্যকুমার যাদবের দল নাকভির কাছ থেকে ট্রফি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ, নাকভি শুধু এসিসির সভাপতিই নন; পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান।
ভারত মনে করে, এপ্রিলে পেহেলগামে যে হামলাকে কেন্দ্র করে মে মাসে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাত শুরু হয়েছিল, তাতে মদদ ছিল নাকভির। এ কারণে তাঁর কাছ থেকে ট্রফি নেননি সূর্যকুমার–বুমরা–কুলদীপ–অভিষেকরা।
তবে নাকভি যেন নাছোড়বান্দা! ভারতীয় দল তাঁর কাছ থেকে এশিয়া কাপ ট্রফি না নেওয়ায় তিনি তা নিয়ে চলে যান এবং সাফ জানিয়ে দেন, ভারতীয় দল বা বিসিসিআইয়ের কোনো প্রতিনিধিকে তাঁর কাছ থেকেই ট্রফি নিতে হবে।
ট্রফিটি বর্তমানে দুবাইয়ে এসিসির সদর দপ্তরে রাখা আছে। বিসিসিআই তা পাওয়ার জন্য নাকভিকে এর আগে কয়েকবার অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু নবমবারের মতো এশিয়ার সেরা হওয়ার তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ট্রফি বুঝে না পাওয়ায় এবার রীতিমতো নাকভিকে হুমকি দিয়েছে ভারত।
এ ব্যাপারে বিসিসিআইয়ের সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া ইন্ডিয়া টুডেকে বলেছেন, ‘বোর্ড ইতিমধ্যেই নাকভিকে ই–মেইল পাঠিয়ে ট্রফি হস্তান্তরের অনুরোধ করেছে। কিন্তু বিষয়টি এখন আনুষ্ঠানিক বিরোধে রূপ নিয়েছে। যদি নাকভি কোনো জবাব না দেন, তাহলে বিষয়টি আইসিসিতে তোলা হবে।’
এদিকে নাকভির ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বার্তা সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, সুযোগ হলে নাকভি নিজ হাতে ভারতীয় দল বা বিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিকে ট্রফি তুলে দেবেন, ‘ট্রফিটি এখনো দুবাইয়ে এসিসির দপ্তরে আছে। নাকভি পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁর অনুমতি বা উপস্থিতি ছাড়া কেউ ট্রফিটি নিতে পারবেন না। যখন সময় হবে, তখন তিনিই ট্রফি হস্তান্তর করবেন।’
এর আগে নাকভি দাবি করেন, এশিয়া কাপ ফাইনালের পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে ট্রফি নিতে না গিয়ে ভারতীয় দল তাঁকে ‘উপহাসের পাত্র’ বানিয়েছে।
সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) বিসিসিআইয়ের অবস্থানকে সমর্থন করেছে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অবস্থান সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। যদিও এশিয়া কাপ ফাইনালে পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে নাকভির অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
এবারের এশিয়া কাপে শুরু থেকেই ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈরিতার ছায়া পড়েছে। টসের সময় পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগার সঙ্গে হাত মেলাননি ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। এমনকি ম্যাচ শেষেও আফ্রিদি–রউফ–ফখরদের সঙ্গে বুমরা–স্যামসন–গিলরা হাত মেলাননি। পাকিস্তানের কোনো ক্রিকেটার যেন ভারতীয়দের সঙ্গে দেখা করতে না পারেন, সে জন্য ড্রেসিংরুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া সূর্যকুমার যাদব সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ জানায় পিসিবি। বিসিসিআইও পাকিস্তানি পেসার হারিস রউফের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ আনে। তারা দাবি করে, বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিংয়ের সময় বিমান ভূপাতিত হওয়ার অঙ্গভঙ্গি করে ভারতের সামরিক বাহিনীকে কটাক্ষ করেছেন রউফ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুজনকেই জরিমানা করে আইসিসি।