বাদ পড়ার রাগ থেকেই কি লিটন এমন বিধ্বংসী

ঝোড়ো সেঞ্চুরির পথে লিটন দাস। আজ সিলেটেছবি: শামসুল হক

রান পাচ্ছেন না, রান পাচ্ছেন না। সর্বশেষ সাত ওয়ানডেতে এক অঙ্ক। চলমান বিপিএলেও প্রথম চার ম্যাচে রান না পাওয়ার পর বাদ পড়েছিলেন পরের ম্যাচ থেকে। তামিম ইকবালের অবসর ঘোষণা করার পরও তাই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দরজা খোলেনি লিটন দাসের জন্য। আলোচনায় থেকেও শেষ মুহূর্তে কাটা পড়েছে তাঁর নাম।

মিরপুরে আজ দুপুরে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন জানালেন, তাঁদের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে লিটন নেই এবং ঠিক আজ সন্ধ্যায়ই সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে লিটন যেন আফসোসের সমুদ্রে ছুড়ে ফেললেন পুরো নির্বাচক কমিটিকেই। এই লিটন দলে নেই!

৪৩ বলে ৭৩ রান করে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে আগের ম্যাচে রানে ফেরার বার্তা দিয়েছিলেন। আজ তো দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ৪৪ বলেই করে ফেললেন টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। রাজশাহীর পেসার শফিউল ইসলামের বলে স্ট্রেট ড্রাইভে নিখুঁত বাউন্ডারি মেরে তিন অঙ্কে। তবু লিটনের শরীরী ভঙিতে উদ্‌যাপনের কোনো লক্ষণ নেই। শুধু ব্যাটটা একটু তুললেন কি তুললেন না!

রেগেমেগে সেঞ্চুরি করলে এ রকমই হয় কি না, কে জানে! এ রকম সময়ে তেড়েফুড়ে উদ্‌যাপনের নজিরও আছে অবশ্য। কিন্তু লিটনের চরিত্রটাই বোধ হয় এমন যে প্রতিবাদও জানাবেন ভাষাহীন ভাষায়। তাঁর হয়ে যা বলার ব্যাটই বলবে।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে জায়গা না হওয়ার খবর পাওয়ার দিনেই স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন লিটন দাস।
ছবি: শামসুল হক

ভালো কথা, এই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছেন লিটনের সঙ্গী ওপেনার তানজিদ হাসানও। আট ছক্কা ও ছয় বাউন্ডারিতে ৬৪ বলে ১০৮ রান করে তিনি আউট হয়ে গেছেন শেষ ওভারে। আর লিটন অপরাজিত ৯ ছক্কা ও ১০ চারে ৫৫ বলে ১২৫ রানে। ১৯.৩ ওভারে গড়া দুজনের ২৪১ রানের জুটি, যেটি যেকোনো উইকেট জুটিতেই বিপিএলের সর্বোচ্চ। তাতে ঢাকার রানও বিপিএলের সর্বোচ্চ ২৫৪। টি–টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিও এই প্রথম।

তানজিদের ইনিংসটাও যথেষ্টই প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু এমন দিনে তিনি তা করলেন, যেদিন লিটন একটা ৮০ রানের ইনিংস খেললেও তিনিই বেশি পাদপ্রদীপের আলোয় থাকতেন। দল থেকে বাদ পড়ার দিনেই লিটনের এই সেঞ্চুরি যে চরম নাটকীয় এক ঘটনা!

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে লিটনের এই রূপ নতুন নয়। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে করা তাঁর পাঁচ সেঞ্চুরির দুটিই এ মাঠে। ২০২০ সালের মার্চে জিম্বাবুয়ে সিরিজে অপরাজিত ১২৬ রানের পর খেলেছেন ১৭৬ রানের আরেকটি ইনিংস। এখনো যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড হয়ে আছে।

নির্বাচকদের জবাব দেওয়ার সুযোগটাও লিটন পেয়ে গেলেন তাঁর প্রিয় এই মাঠে। ব্যক্তিগত ৫ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচের মতো দিয়েও একবার বেঁচেছেন। আরেকবার ক্যাচ আউটের হাত থেকে বেঁচেছেন ১০৪ রানে। কিন্তু জীবন পেয়েও তো সব সময় তা কাজে লাগানো যায় না। লিটন আজ তা পেরেছেন। কে জানে, অদৃষ্টও হয়তো চেয়েছে তাঁর ব্যাট খুঁজে পাক জবাবের ভাষা।

আরও পড়ুন

ব্যাট হাতে লিটন যা করতে চেয়েছেন, তা–ই করেছেন আজ। এটা ঠিক যে এলোমেলো লাইন–লেংথ, ফুলটস আর হাফভলি মিলিয়ে রাজশাহীর বোলিংও ছিল আগের ম্যাচগুলোর মতোই নির্বিষ। কিন্তু এমন বোলিংয়ের সামনেও তো ব্যাটসম্যানরা ভুল করে বসেন। সম্ভাবনাময় ইনিংসের অপমৃত্যু ঘটে।

১২৫ রানে অপরাজিত ছিলেন লিটন দাস, যা বিপিএলে কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ছবি: প্রথম আলো

কিন্তু লিটন আজ ওই দুটি সুযোগ দেওয়া ছাড়া সে রকম ভুল করেননি বললেই চলে। ব্যাট হাতে ছন্দে থাকলে যেমন খেলেন, সেটাই খেলে গেলেন শেষ পর্যন্ত। সাহসী, আক্রমণাত্মক এবং দৃষ্টি আকর্ষক ব্যাটিং। প্রতিটি শটে আত্মবিশ্বাস। স্কয়ার কাটে মারা বাউন্ডারি, লং অন, লং অফ, কিংবা বোলারের মাথার ওপর দিয়ে মারা ছক্কা— সব শটেই তাঁর আসল ব্যাটিংয়ের ছবি। প্রতিটি শট যেন গিয়ে আঘাত করছিল নির্বাচক কমিটির দরজায়।