মিরাজদের বিশ্রামের দিনে প্রাপ্তি জয়াসুরিয়ার সান্ত্বনা

ছবিটি ৩০ জুনের, প্রথম ওয়ানডের আগে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের। যদিও আজ কোনো অনুশীলন করেনি বাংলাদেশ দল।বিসিবি
গতকালে হারের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পারা বাংলাদেশ দল আজ বৃহস্পতিবার অনুশীলন করেনি। পুরো দিন সবাই বিশ্রামে।

৫ রানে ৭ উইকেট! কীভাবে এ রকম একটা বিপর্যয় ঘটে গেল, তার স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই কারও কাছে। তবে এ রকম ঘটা যে উচিত হয়নি, সে উপলব্ধি বাংলাদেশ দলের সবার। কারও না কারও তো উচিত ছিল, বিপর্যয়ে বাঁধ দেওয়া।

কাল রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হার নিয়ে যত আলোচনা, তার চেয়ে বড় বিস্ময় যেন ওই ৫ রানের ব্যবধানে ৭ উইকেট হারানো। এ রকম একটা বিপর্যয় না ঘটলে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে যেত, সেটি নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। তবে কখনো কখনো ম্যাচের একটা মুহূর্তও বড় হয়ে উঠতে পারে হার–জিতের চেয়ে। হতবাক করে দেওয়া রাতের বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে না পারা টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য আজ বলছিলেন, ‘‌এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, এ রকম কিছু হয়েছে। কী ঘটে গেল! আমরা কিন্তু এ রকম দল নই।’

গতকালে হারের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পারা বাংলাদেশ দল আজ বৃহস্পতিবার অনুশীলন করেনি। পুরো দিন সবাই বিশ্রামে। বিকেলের দিকে মিটিং হয়েছে, কেউ কেউ জিমে গেছেন। দুপুরের দিকে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাস, কোচ ফিল সিমন্স এবং সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে হোটেলেই বসে ছিলেন টি–টোয়েন্টি দল নিয়ে আলোচনায়।

সংবাদ মাধ্যমের সামনেও আজ বাংলাদেশ দলের কেউ আসেননি। তবে মেহেদী হাসান মিরাজের দলের ব্যাটিং–বিপর্যয় নিয়ে কথা বলেছেন শ্রীলঙ্কার কোচ ও সাবেক অধিনায়ক সনাৎ জয়াসুরিয়া। আজ বিকেলে টিম হোটেলে বসে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অবশ্য বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ওপরই ছাতা ধরেছেন, ‘আপনি তো প্রতিদিন এ রকম পরিস্থিতিতে পড়বেন না। এটা একদিন হতেই পারে। তাই বলে মানুষ যেন খেলোয়াড়দের অকারণে চাপে ফেলে না দেয়। এ রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরাও গিয়েছি, আমি গিয়েছি।’

টিম হোটেলে শ্রীলঙ্কা কোচ সনাৎ জয়াসুরিয়া।
প্রথম আলো

উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘সম্প্রতি ক্যান্ডিতে ভারতের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে আমাদের অল্প কিছু রানই লাগত জিততে, কিন্তু ম্যাচটা ভারত জিতে যায় (সুপার ওভারে)। সূর্যকুমার বোলিংয়ে এসে উইকেট নিয়ে নিল, বিশ্বাস হয়!’ বাংলাদেশ দল দিনটা বিশ্রামে কাটালেও জয়াসুরিয়া অবশ্য দুপুরে ক্রিকেটারদের নিয়ে রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুশীলনে গেছেন।

শ্রীলঙ্কা কোচের কথা বাংলাদেশের জন্য হয়তো সান্ত্বনার প্রলেপ জোগাবে, তবে ও রকম বিধ্বস্ত হয়ে হারের যন্ত্রণা ভুলতে মাঠে ক্রিকেটারদেরই ভালো কিছু করতে হবে। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শনিবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেটাই লক্ষ্য থাকবে দলের।

আরও পড়ুন

তবে চিন্তাটা শুধু এই একটা ম্যাচ বা একটা সিরিজ নিয়ে তো নয়। সাকিব, তামিমদের পর মুশফিক, মাহমুদউল্লাহও ওয়ানডেকে বিদায় বলার পর এই প্রথম বাংলাদেশ দল সিরিজ খেলছে দীর্ঘদিন দলকে প্রতিনিধিত্ব করা কোনো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছাড়া। ওয়ানডেতে নতুন শুরুর প্রথম ম্যাচেই ও রকম ধাক্কা খাওয়াটাই তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার খোরাক জোগাচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বড় উদাহরণ হতে পারে শ্রীলঙ্কা দলই। এ বছরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে ব্যর্থ দলটি এখন ঘরের মাঠে ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো শ্রীলঙ্কা দলেও তরুণ ক্রিকেটাররা আসছেন, তবু মনে হচ্ছে না, দলটা কোনো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

কারণটা পরিষ্কার, শ্রীলঙ্কা দলে নতুন আসা ক্রিকেটাররাও আসেন বয়সভিত্তিক আর ঘরোয়া ক্রিকেটের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন জগতেও তাই তাঁরা সহজেই ধাতস্থ হয়ে যান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটের মানের বিস্তর ফারাকের কারণেই বাংলাদেশ এদিক দিয়ে পিছিয়ে, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে অভিজ্ঞদের চলে যাওয়ার পর এই ‘ট্রানজিশন পিরিয়ডে।’

আরও পড়ুন