বিপিএলে সন্দেহজনক কিছু দেখছে অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজিও

সন্দেহের তির বিপিএলের সাত ফ্র্যাঞ্চাইজির দিকেইছবি: প্রথম আলো গ্রাফিক্‌স

সন্দেহ শুধু বাইরে নয়, ঘরেও। ঘরে মানে বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোতে।

সাত ফ্র্যাঞ্চাইজির কয়েকটির মালিকপক্ষেরই সন্দেহ— টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত হওয়া অনেক ম্যাচেই ঘটেছে অস্বাভাবিক ঘটনা, যেগুলোর সঙ্গে স্পট ফিক্সিংয়ের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।

সব ফ্র্যাঞ্চাইজিরই একই দাবি, তাদের খেলোয়াড়েরা উল্টাপাল্টা কিছু করছেন না। তবে ‘অন্য’ ফ্র্যাঞ্চাইজির ‘কিছু ক্রিকেটার’ তাঁদেরও সন্দেহের বাইরে নন।

চলমান একাদশ বিপিএলের সন্দেহজনক কিছু ঘটনা নিয়ে আজ প্রথম আলোতে ‘সন্দেহের বিপিএল: ৫ রানের ওয়াইড আর ওভারে ১১–১৫ রান’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এবারের বিপিএলে ওয়াইড বাউন্ডারির আধিক্য এবং আরও কিছু অস্বাভাবিক প্রবণতার কারণে ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা, বিপিএলে ব্যাপক হারে স্পট ফিক্সিং হচ্ছে।

এবারের বিপিএলে কয়েকজন বোলার ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়াইড বল করছেন বলেও অভিযোগ আছে
প্রতীকী ছবি

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল বিপিএলের সাত ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষের কাছে। তাঁদের কাছে প্রশ্ন ছিল, এবারের বিপিএলে স্পট ফিক্সিং নিয়ে কোনো সন্দেহ তাঁদের মনে এসেছে কি না? নিজ দল বা অন্য দলের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েছে কি না?

আরও পড়ুন

এখন পর্যন্ত সব ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা রংপুর রাইডার্সের টিম ডিরেক্টর শাহনিয়ান তানিম মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘এবার কখনো কখনো কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজির খেলোয়াড়দের খেলা দেখে মনে হয়েছে, সন্দেহজনক কিছু একটা হচ্ছে। কিছু অস্বাভাবিক কাজ তাঁরা করছেন। তবে তথ্য–প্রমাণ ছাড়া নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে কিছু বলা উচিত হবে না।’

নিজেদের ফ্র্যাঞ্চাইজির কোনো খেলোয়াড়ের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু দেখেছেন কি না জানতে চাইলে তাঁর উত্তর, ‘আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিতে এ রকম কোনো সমস্যা নেই। আমাদের প্রত্যেক খেলোয়াড় দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তারা তাদের সর্বস্ব দিয়ে দলকে ভালো ফলাফল এনে দিতে চায়।’

ফিক্সিং শব্দটাই আমার জানা নেই, এটা কীভাবে করে সেটা তো আরও জানা নেই।
শফিকুর রহমান, দুর্বার রাজশাহীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক

বিপিএলে সত্যি সত্যি স্পট ফিক্সিংয়ের মতো কিছু চলতে থাকলে সেটা সবারই ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করে শাহনিয়ান বলেছেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশের এই টুর্নামেন্টটাকে পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদেরও নেওয়া উচিত।’

নিজ দলের খেলোয়াড়েরা ফিক্সিংয়ে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন টিম ডিরেক্টর শাহনিয়ান তানিম
ছবি: বিসিবি

নিজেদের ক্রিকেটারদের প্রতি পূর্ণ আস্থা খুলনা টাইগার্সের মালিক ইকবাল আল মাহমুদেরও, ‘আমার দলের কথা বলতে পারি, এখানে সব ভালো ভালো স্থানীয় ও বিদেশি ক্রিকেটার খেলছে। জাতীয় পর্যায়ে তাদের সবার সুনাম আছে। কাজেই আমাদের দলে এ রকম কিছুর সুযোগ নেই।’

আরও পড়ুন

নিজের দলের বাইরে খুব বেশি ম্যাচ দেখেন না দাবি করে অন্যদের নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করেননি খুলনা টাইগার্সের মালিক। তবে নেতিবাচক গুঞ্জনটা তাঁর কানেও পৌঁছেছে, ‘এ রকম কিছু ঘটনা নাকি ঘটছে, এটা আমার কানেও এসেছে। তবে সব না জেনে মন্তব্য করা কঠিন।’

সিলেট স্ট্রাইকার্সের মালিকপক্ষ এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। দলের মিডিয়া ম্যানেজারের মাধ্যমে ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া তিনি এ নিয়ে কথা বলতে চান না। তবে তাঁর বিশ্বাস, কিছু ঘটলে বিসিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ তা খতিয়ে দেখবে।

মিডিয়া ম্যানেজারের মাধ্যমে এ নিয়ে কথা বলবেন না বলে জানিয়েছেন ঢাকা ক্যাপিটালের সিইও আতিক ফাহাদও। ফোন করা হয়েছিল ফরচুন বরিশালের মালিক মিজানুর রহমানকেও। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

আরও পড়ুন

দুর্বার রাজশাহীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান দাবি করেছেন, স্পট ফিক্সিং কী; সেটাই তিনি জানেন না! ক্রিকেটে নিজেকে ‘নতুন’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি আসলে বিপিএলে একেবারেই নতুন। আর ক্রিকেটটাও বেশ কম বুঝি। আমার ক্রিকেটের সঙ্গে কাজ করা এবারই প্রথম। আমি একজন ডেভেলপার। ফিক্সিং শব্দটাই আমার জানা নেই, এটা কীভাবে করে সেটা তো আরও জানা নেই। আমি খুবই দুঃখিত, এ বিষয়ে আপনাকে কোনো কিছু বলতে পারলাম না।’

গত ৭ জানুয়ারির ম্যাচে এমনই এক নো বল করেন ঢাকা ক্যাপিটালসের আফগান স্পিনার আমির হামজা
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন চিটাগং কিংসের ম্যানেজার লাভলু রহমান। তিনি অবশ্য এড়িয়েই গেছেন বিষয়টি, ‘আমাদের দলের মধ্য এ রকম কিছু নেই। অন্য দলের সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত নই, তাদের ব্যাপারে বলতে পারি না। তবে আমাদের চোখে এমন কিছু ধরা পড়েনি।’