এজবাস্টন যেন ভারতের জন্য এক দুঃস্বপ্নের নাম
মনসুর আলী খান পতৌদি থেকে এস ভেঙ্কটরাঘবন, কপিল দেব থেকে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, মহেন্দ্র সিং ধোনি থেকে বিরাট কোহলি—কেউই পারেননি। হালের সেরা ফাস্ট বোলার যশপ্রীত বুমরাকেও ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে।
তাঁদের ব্যর্থতা কি এবার ঢাকতে পারবেন নতুন টেস্ট অধিনায়ক শুবমান গিল? এজবাস্টন টেস্ট ভারতের জন্য এখনো যে এক দুঃস্বপ্নের নাম হয়ে আছে!
পাঁচ ম্যাচের চলমান সিরিজ দিয়েই অ্যান্ডারসন–টেন্ডুলকার ট্রফি নামে যাত্রা শুরু করেছে ইংল্যান্ড–ভারত টেস্ট সিরিজ। লিডসের হেডিংলিতে বেন স্টোকসের দলের কাছে ৫ উইকেটে হেরে সিরিজে ১–০ ব্যবধানে পিছিয়ে গিলের দল।
আগামী বুধবার বার্মিংহামের এজবাস্টনে শুরু দ্বিতীয় টেস্ট। এই ম্যাচ জিতে নিশ্চয় সিরিজে সমতা ফেরাতে চাইবে সফরকারী ভারত। কিন্তু এই মাঠে ভারতীয়দের টেস্ট–অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়।
১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব ওয়ারউইকশায়ারের মাঠ। সেখানে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় ১৯০২ সালে।
আর ভারত প্রথমবার খেলে ১৯৬৭ সালে পতৌদির নেতৃত্বে। তখন থেকে সর্বশেষ ২০২২ সাল পর্যন্ত বুমরার নেতৃত্বে এজবাস্টনে মোট ৮ টেস্ট খেলে ৭টিতেই হেরেছে ভারত। এর মধ্যে ৩টি হার ইনিংস ব্যবধানে। একমাত্র ড্র ১৯৮৬ সালে কপিল দেবের অধিনায়কত্বে। ৮ টেস্টের ১৬ ইনিংসে মাত্র দুবার ভারতের সংগ্রহ ৩০০ ছুঁয়েছে। সর্বনিম্ন ৯২ রানে অলআউট হয়েছে প্রথম ম্যাচেই।
২০১১ সালে এজবাস্টনেই ৭ উইকেটে ৭১০ রান তুলে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করে ইংল্যান্ড, যা এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে এবং একুশ শতকে দেশের মাটিতে ইংলিশদের দলীয় সর্বোচ্চ। সেই ম্যাচেই ক্যারিয়ারসেরা ২৯৪ রানের ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন স্যার অ্যালিস্টার কুক, যা ভারতের বিপক্ষে কোনো ইংলিশ ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (সেরা ইনিংস গ্রাহাম গুচের ৩৩৩, লর্ডসে ১৯৯০ সালে)। ধোনির ভারতকে সেই টেস্টে ইনিংস ও ২৪২ রানে হারায় ইংল্যান্ড।
এজবাস্টনে ভারত সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে এর আগের সফরেই। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও চোটের কারণে সহ–অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ২০২২ সালের সেই টেস্টে খেলতে পারেননি। তাই প্রথমবারের মতো নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয় বুমরাকে।
বোলিং দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে সুনাম কুড়ানো বুমরা টেস্ট অধিনায়কত্বের অভিষেকে ব্যাট হাতে গড়েন বিশ্ব রেকর্ড! বিস্ময়কর মনে হলেও সত্যি, ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে কোনো বোলারের এক ওভারে সর্বোচ্চ রান নেওয়ার নজির ওই ম্যাচেই গড়েন বুমরা।
এজবাস্টনে ভারতের প্রথম ইনিংসে স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভার থেকে আসে ৩৫ রান। বুমরা ৪টি চার, ২টি ছক্কা ও ১ সিঙ্গেলে একাই নেন ২৯ রান (আগের রেকর্ড ছিল ব্রায়ান লারার নেওয়া ২৮ রান)।
ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৩৭৮ রানের লক্ষ্য দেয় ভারত। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংলিশরা ১০০ পেরোনোর পরেই ২ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায়। প্রতিপক্ষকে ৩৫০–এর বেশি লক্ষ্য দিয়ে এর আগে কখনো টেস্ট না হারায় অনেকে ভেবেছিলেন, সেই ম্যাচও বুঝি জিততে চলেছে ভারত।
কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ২৬৯ রানের জুটি গড়েন জো রুট ও জনি বেয়ারস্টো। তাতে ৩৭৮ রানের লক্ষ্য ৭ উইকেট হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলে ইংল্যান্ড, যা তাদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড।
আরেকটি এজবাস্টন টেস্টের আগে ভারতের অতীত দুঃস্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুশ্চিন্তা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, চোটপ্রবণ বুমরাকে চোটমুক্ত রাখতে এবং তাঁর ওপর থেকে বাড়তি চাপ কমাতে এই সিরিজের দুটি ম্যাচে তাঁকে বিশ্রামে রাখা হতে পারে। সেই দুই ম্যাচের একটি হয়তো এজবাস্টনেই।
কিন্তু দল সিরিজে পিছিয়ে থাকায় বিশ্রামের চিন্তা বাদ দিয়ে বুমরা খেলতেও পারেন। গতকাল এজবাস্টনে তাঁকে অনুশীলন করতেও দেখা গেছে।
শেষ পর্যন্ত বুমরাকে নিয়ে হোক কিংবা তাঁকে বসিয়ে রেখে—ভারত এজবাস্টন–জুজু কাটিয়ে উঠতে পারবে কি না, এখন সেটাই দেখার বিষয়।