কেন পাকিস্তানের এমন হার—ব্যাখ্যা দিলেন আকরাম, আফ্রিদি ও গাভাস্কার
রাজনৈতিক বিষয় বাদে শুধু ক্রিকেটীয় বিষয়েই অনেক কথা হয়েছিল এই ম্যাচ নিয়ে। সেটা অস্বাভাবিক কিছুও নয়, কারণ, ম্যাচটা যে ভারত-পাকিস্তানের। ক্রিকেটের চিরকালীন এ দ্বৈরথে যেমন লড়াইয়ের আশায় ছিলেন সমর্থকেরা, দুবাইয়ে গতকাল কি তা দেখা গেল?
অবশ্যই না। নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ বলতে যা বোঝায়, ভারতের কাছে ঠিক সেটাই করেছে পাকিস্তান। আগে ব্যাট করে ইনিংসের ১০ ওভারের মধ্যে ৫০ রান তোলার আগেই পাকিস্তান হারিয়েছে ৪ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার খেললেও ৯ উইকেটে ১২৭ রানের সাদামাটা সংগ্রহে থেমেছে পাকিস্তান। ভারতের তারকাখচিত ব্যাটিং এই রান তাড়া করে ৭ উইকেটে জিতেছে ২৫ বল হাতে রেখে। তাহলে বলুন তো, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো কোথায়? বরং ম্যাচটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা বলতে পারেন ম্যাচে কখনো, কোনো পরিস্থিতিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি পাকিস্তান।
কেন পাকিস্তানের এমন হার, এই প্রশ্নের উত্তরে দেশটির সাবেক অধিনায়ক ও অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি নির্দিষ্ট কোনো কারণ বলেননি। সালমান আগার দলের ব্যাটিং ও বোলিং নিয়ে কিছু বলেছেন আফ্রিদি। ‘সামা টিভি’তে কথাগুলো বলার সময় তাঁর চোখেমুখেই ছিল হতাশার প্রতিচ্ছবি। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ওপেনার সাইম আইয়ুব স্কয়ার কাট তুলে খেলতে গিয়ে ‘গোল্ডেন ডাক’ মেরে আউট হন। মূলত, ব্যাটিংয়েই পাকিস্তানের ধীরে ধীরে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ার শুরুও তখন থেকেই।
আফ্রিদি সাইমের আউটটি ধরে ব্যাটিং নিয়ে বলেছেন, ‘ম্যাচ জিততে হলে এসব ব্যাটসম্যানকে রান করতে হবে। সাইম আইয়ুবের মাথা ঠান্ডা রাখা উচিত, নিজেকে তার এটা বলা উচিত। কন্ডিশন ও পিচ দেখে প্রথম বলটা খেলতে হবে। কিন্তু তুমি প্রথম বল থেকেই শহীদ আফ্রিদি হওয়ার চেষ্টা করছ।’
হারিস রউফ ও হাসান আলীর মতো অভিজ্ঞ দুই পেসারকে বিশ্রামে রেখে ভারতের মুখোমুখি হওয়ারও সমালোচনা করেন আফ্রিদি, ‘জেনুইন ফাস্ট বোলারদের বিশ্রাম দেওয়া হলো। ভারতের বিপক্ষে উদ্যমহীন আক্রমণভাগে কাজ হবে না। এ মুহূর্তে দলকে জেতানোর মতো একটি ব্যাটসম্যানও নেই।’
ভারতের তিন স্পিনার কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল ও বরুণ চক্রবর্তীকে ভালোভাবে খেলতে পারেননি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। বাঁ হাতি কবজির স্পিনার কুলদীপ ১৮ রানে নেন ৩ উইকেট। তাঁর বৈচিত্রের সামনে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা ভুগেছেন বলে মনে করেন দেশটির কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম।
সনি স্পোর্টসকে আকরাম বলেছেন, ‘তাকে তারা (পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান) বুঝতে পারেনি। সানি ভাইও (সুনীল গাভাস্কার) বলেছেন, হাত থেকে তাকে পড়তে না পারলে বোলিং বোঝা সম্ভব নয়। কুলদীপের এক বল পরপর সুইপ করার অর্থ হলো, কেউ তার বোলিং বুঝতে পারছে না।’
ভারতের জয়ের পর সনি স্পোর্টসে আলাপচারিতায় গাভাস্কারও পাকিস্তান দলকে ধুয়ে দেন, ‘আমার কাছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল বলে মনে হয়নি। দেখে মনে হয়েছে “পোপাটওয়াড়ি দল”।’
ভারতের ক্রিকেটের কিংবদন্তি গাভাস্কার মুম্বাই থেকে উঠে এসেছেন। মুম্বাইয়ের ক্রিকেটে ‘পোপাটওয়াড়ি দল’ বেশ প্রচলিত শব্দ। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার দিলীপ সারদেশাই মুম্বাইয়ের ক্লাব ক্রিকেটে এই শব্দের প্রচলন করেছিলেন বলে ২০১৩ সালে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল দেশটির সাময়িকী ‘ওপেন’। বোলিংয়ে দুর্বল দলকে ‘পোপাটওয়াড়ি’ বলতেন তিনি।
ভারতীয় ক্রিকেটারদের ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট পরিভাষায় জায়গা করে নেওয়া এ শব্দ দলের ক্ষেত্রে ‘মাঝারিমানের দল’ বোঝায় বলে জানিয়েছে ইএসপিএনক্রিকইনফো। মারাঠি ভাষায় ‘পোপাট’ শব্দের অর্থ তোতাপাখি।