ক্রিকেটের সবচেয়ে বিখ্যাত আম্পায়ার ডিকি বার্ড আর নেই

লর্ডসে ঘণ্টা বাজাচ্ছেন ডিকি বার্ড। ছবিটি ২০১৫ সালে তোলাএএফপি

ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় ও বিখ্যাত আম্পায়ার হ্যারল্ড ‘ডিকি’ বার্ড আজ ৯২ বছর বয়সে মারা গেছেন।

১৯৩৩ সালে ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের বার্নসলিতে জন্ম বার্ডের। সেখানকার কাউন্টি দল ইয়র্কশায়ারের হয়ে ১৯৫৬ সালে ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরে ইয়র্কশায়ারের সভাপতিও হন। ক্লাবটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে করা পোস্টে বার্ডের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। ইয়র্কশায়ারের পোস্টে জানানো হয়, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব জানাচ্ছে, ক্রিকেটের অন্যতম প্রিয়ভাজন ব্যক্তিত্ব হ্যারল্ড ডেনিস “ডিকি” বার্ড ৯২ বছর বয়সে নিজের বাসায় মারা গেছেন।’

তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনালসহ ৬৬টি টেস্ট ও ৬৯টি ওয়ানডেতে আম্পায়ারিং করেন বার্ড। ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৬ সালে ‘এমবিই’ ও ২০১২ সালে ‘ওবিই’ সম্মান পান তিনি। সর্বজন শ্রদ্ধেয় আম্পায়ার হিসেবে অসামান্য খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন এই কিংবদন্তি।

চোটের কারণে প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার বড় হয়নি বার্ডের। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত ইয়র্কশায়ার ও লিস্টারশায়ারের হয়ে মোট ৯৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে অবসর নেন। বার্ড এরপর আম্পায়ার হন। মাঠে তাঁর আম্পায়ারিংয়ের আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য ছিল। বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতাও করতেন খেলোয়াড়দের সঙ্গে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আম্পায়ারিং থেকে অবসর নেন ১৯৯৮ সালে।

উইজডেনের সাবেক সম্পাদক শিল্ড বেরির চোখে, ‘ডিকি বার্ড সব আম্পায়ারের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। ফ্রাঙ্ক চেস্টার, সিড বুলের ও ডেভিড শেফার্ডও সব জায়গায় সম্মানিত এবং (ইংল্যান্ডের) বাইরের আম্পায়ারদের মধ্যে স্টিভ বাকনার ও আলিম দারও তা–ই। কিন্তু ডিকি বার্ডের নাম সবার মুখে মুখে ছিল।’

আরও পড়ুন

সময়ানুবর্তিতার জন্যও বিখ্যাত ছিলেন বার্ড। ১৯৭০ সালের মে মাসে আম্পায়ারিংয়ে অভিষেকের পর নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ পরিচালনার জন্য ওভালে যান। ম্যাচটি ছিল সারে বনাম ইয়র্কশায়ারের মধ্যে, শুরু হওয়ার কথা ছিল বেলা ১১টায়। কিন্তু বার্ড সকাল ৬টায় সেখানে পৌঁছান। স্টেডিয়ামের গেট বন্ধ থাকায় দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করায় পুলিশ আটক করেছিল তাঁকে।

এলবিডব্লুর আবেদনের ক্ষেত্রেও সহজে আউট দিতেন না। ডিআরএসের এ সময়ে তাঁর কিছু সিদ্ধান্তও ভুল প্রমাণিত হতো। ব্যাটসম্যানদের ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দিতে চাইতেন, শুধু একটি সময়ে এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। ১৯৯৬ সালে লর্ডস টেস্ট ছিল তাঁর আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সেই টেস্টের দিন সকালে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সম্মানসূচক গার্ড অব অনার পেয়ে চোখ মুছতে মুছতে আম্পায়ারিংয়ে দাঁড়ান বার্ড। এরপর ম্যাচের প্রথম ওভারেই ইংল্যান্ড ওপেনার মাইকেল আথারটনকে এলবিডব্লু আউট দেন।

১৯৯৫ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টে মাঠে সূর্যের অতিরিক্ত আলোর জন্য খেলা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বন্ধ করেছিলেন বার্ড। সূর্যের আলো মাঠের পাশের এক জানালার কাচে প্রতিফলিত হয়ে সমস্যা তৈরি করছিল।

আরও পড়ুন

বার্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দেরও ছিল দারুণ সম্পর্ক। মাঝেমধ্যেই তাঁর সঙ্গে মজা করতেন অনেক খেলোয়াড়। ইংল্যান্ড কিংবদন্তি ইয়ান বোথাম এবং তাঁর সতীর্থ অ্যালান ল্যাম্ব এ ক্ষেত্রে এককাঠি সরেস ছিলেন। একবার ল্যাম্ব পকেটে মুঠোফোন নিয়েই ক্রিজে ব্যাট করতে আসেন। বার্ড সেটা জব্দ করে নিজের আম্পায়ারিং কোর্টের পকেটে রাখেন। বোথাম এরপর ল্যাম্বের নম্বরে ফোন করে বার্ডকে বলেন তাঁর সতীর্থের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে!

বার্ড বিশ্বাস করতেন, ফুটবল খেললে তিনি বেশি সফল হতেন। নিজের আত্মজীবনীতে তিনি জানিয়েছেন, ১৫ বছর বয়সে হাঁটুর অস্ত্রোপচারে সেই স্বপ্নের পিছু আর ছোটা হয়নি। তবে বার্নসলিতে বেড়ে ওঠার সময় ফুটবল খেলতেন। টমি টেলরকে ক্রস দেওয়ার অনুশীলন করতেন। ইংল্যান্ডের হয়ে ১৯ ম্যাচে ১৮ গোল করা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সেন্টার ফরোয়ার্ড ১৯৫৮ সালে মিউনিখ বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।

বার্ডের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শোক প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট, ‘ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের সবাই ডিকি বার্ডের মৃত্যুতে শোকাহত। গর্বিত ইয়র্কশায়ারম্যান এবং সবাই তাঁকে ভালোবাসতেন। শান্তিতে ঘুমান ডিকি।’ ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের এক্স হ্যান্ডলে লেখা হয়, ‘ডিকি বার্ড (জীবনের) স্টাম্প তুলেছেন জেনে খুব খারাপ লাগছে। তিনি ছিলেন জাতীয় সম্পদ এবং তাঁর সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ৯২ বছর বয়স ভালো ইনিংস। বিদায় বন্ধু।’