বাবা–ছেলে দুজনকেই আউট করে বোথাম–আকরামদের পাশে অশ্বিন

তেজনারায়ণ চন্দরপলকে আউট করে প্রথম ভারতীয় হিসেবে বাবা–ছেলে দুজনেরই উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনছবি : এএফপি

বাবা-ছেলে দুজনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন, এমন অনেক বিখ্যাত পরিবার আছে। সংখ্যাটা হয়তো নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে বাবা-ছেলে দুজনই একই বোলারের বলে আউট হয়েছেন, এমন ঘটনা বিরলই বলা যায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে আজ নিয়ে এ কীর্তি গড়লেনই মাত্র পাঁচজন বোলার!

ডমিনিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ভারতের দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটি শুরু হয়েছে আজ। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবীয়রা এখন পর্যন্ত ৪৪ ওভারে ৫ উইকেটে হারিয়ে তুলেছে ১০২ রান। ইনিংসের ১৩তম ওভারে সফরকারী ভারতকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন তেজনারায়ণ চন্দরপলকে।

এর মধ্য দিয়েই নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন অশ্বিন। প্রথম ভারতীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাবা-ছেলে দুজনকেই শিকার বানিয়েছেন। ২০১১ সালে নিজের অভিষেক টেস্টে তেজনারায়ণের বাবা শিবনারায়ণ চন্দরপলকেও যে আউট করেছিলেন ভারতীয় অফ স্পিনার।

শিবনারায়ণ আর তেজনারায়ণকে প্রথমবার শিকার বানানোর ক্ষেত্রেও অশ্বিন রেখেছেন দারুণ মিল। দুজনকে আউট করতে সতীর্থ ফিল্ডারের দরকার পড়েনি তাঁর।

আজ তেজনারায়ণকে বোল্ড করার কথা তো আগেই বলা হলো। আর এক যুগ আগে শিবনায়ারণকে করেছিলেন এলবিডব্লু। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ ১৬৪ টেস্ট খেলা শিবনারায়ণকে মোট চারবার আউট করেছেন অশ্বিন। সব কয়বার টেস্টেই।

তেজনারায়ণের উইকেট নিয়ে ইয়ান বোথাম, ওয়াসিম আকরাম, মিচেল স্টার্ক ও সাইমন হারমারের কীর্তি স্মরণ করিয়ে দিলেন অশ্বিন। তাঁর আগে বাবা-ছেলে দুজনকেই আউট করার কীর্তি ছিল এই চারজনের। অশ্বিন ও হারমার অফ স্পিনার এবং বোথাম, আকরাম ও স্টার্ক ফাস্ট বোলার হিসেবে বিচিত্র রেকর্ড গড়েছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও বাবা-ছেলেকে একই বোলারের শিকার হতে বিশ্ব প্রথম দেখেছে ৩১ বছর আগে। সে সময় ইয়ান বোথাম ও ল্যান্স কেয়ার্নসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল তুঙ্গে। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি দুই অলরাউন্ডার প্রায়ই মুখোমুখি হতেন। একে অপরের উইকেটও তুলে নিয়েছেন বেশ কয়েকবার।

ল্যান্স কেয়ার্নসকে বেশ কয়েকবার আউট করেছেন ইয়ান বোথাম
ছবি : টুইটার

বোথাম ১৯৭৮ সালে প্রথমবার ল্যান্স কেয়ার্নকে আউট করেন। কিউইদের জার্সিতে ৪৩ টেস্ট ও ৭৮ ওয়ানডে খেলা ল্যান্স অবসরে যান ১৯৮৫ সালে। দেশের হয়ে তিনি খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলার ৪ বছর পরেই আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা পড়ে তাঁর ছেলে ক্রিস কেয়ার্নসের। আর ক্রিকেট বিশ্ব বাবা-ছেলেকে একই বোলারের বলে আউট হওয়ার সাক্ষী হয় আরও ৩ বছর পর; ১৯৯২ সালে ওয়েলিংটন টেস্টে ক্রিস কেয়ার্নস বোথামের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার মধ্য দিয়ে।

বাবা-ছেলে দুজনকেই নিজের শিকারে পরিণত করা দ্বিতীয় বোলার ওয়াসিম আকরাম। পাকিস্তান কিংবদন্তিও আউট করেন ল্যান্স ও ক্রিস কেয়ার্নকে। ১৯৮৫ সালে ডানেডিন টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রথমবার ল্যান্সকে আউট করেন আকরাম।

তবে ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের স্মৃতি সম্ভব হলে ভুলে যেতে চাইতেন ল্যান্স কেয়ার্নস। আকরামের ভয়ংকর বাউন্সারে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে হাসপাতালে যেতে হয় তাঁকে। দায়টা অবশ্য নিজেরই। আকরামের মতো বোলারের বিপক্ষে হেলমেট ছাড়াই ব্যাটিং করার ‘বাহাদুরি’ দেখাতে গিয়েছিলেন। যাই হোক, ১০ বছর পর ল্যান্সের ছেলে ক্রিস কেয়ার্নকে আউট করে বোথামের সঙ্গী হন আকরাম।

বাবা-ছেলে দুজনকেই আউট করার বাকি দুই ঘটনা সাম্প্রতিক। দুটি ক্ষেত্রেই অশ্বিনের মতো ‘দুই চন্দরপলকে’ ফিরিয়েছেন স্টার্ক ও হারমার। অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার স্টার্ক শিবনারায়ণকে একবারই আউট করেছিলেন; ২০১২ সালে। এক দশক পর আউট করেছেন তাঁর ছেলে তেজনারায়ণকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্টে খেলে দুবার স্টার্কের বলে আউট হয়েছেন ২৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। স্টার্ক তাঁকে একবার রানআউটও করেছেন।

সরাসরি থ্রোতে তেজনারায়ণকে রানআউট করারও সুখস্মৃতি আছে স্টার্কের
ছবি : এএফপি

আর অশ্বিনের মতো নিজের অভিষেক টেস্টে শিবনারায়ণকে শিকার বানিয়েছেন হারমার। সেটা ২০১৫ সালের কেপটাউন টেস্টে। দুই বছর পর কলপ্যাক চুক্তিতে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান দক্ষিণ আফ্রিকার এই অফ স্পিনার।

গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে আবারও জাতীয় দলে সুযোগ পান। এ বছরের মার্চে জোহানেসবার্গ টেস্টে নেন তেজনারায়ণের উইকেট। মজার ব্যাপার হলো, ১০ টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেছেন হারমার। একটিতে নিয়েছেন বাবার উইকেট, অন্যটিতে ছেলের। সবচেয়ে কম সময়ে (৮ বছরের ব্যবধানে) বাবা-ছেলেকে আউট করার রেকর্ডটা তাঁরই দখলে।

সবচেয়ে কম সময়ের ব্যবধানে বাবা–ছেলেকে আউট করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাইমন হারমার
ছবি : এএফপি

বাবা-ছেলে দুজনকেই আউট করেছেন যাঁরা

ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড)
উইকেট : ল্যান্স কেয়ার্নস (১৯৭৮) ও ক্রিস কেয়ার্নস (১৯৯২)

ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান)
উইকেট: ল্যান্স কেয়ার্নস (১৯৮৫) ও ক্রিস কেয়ার্নস (১৯৯৫)

মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
উইকেট: শিবনারায়ণ চন্দরপল (২০১২) ও তেজনারায়ণ চন্দরপল (২০২২)

সাইমন হারমার (দক্ষিণ আফ্রিকা)
উইকেট: শিবনারায়ণ চন্দরপল (২০১৫) ও তেজনারায়ণ চন্দরপল (২০২৩)

রবিচন্দ্রন অশ্বিন (ভারত)
উইকেট: শিবনারায়ণ চন্দরপল (২০১১) ও তেজনারায়ণ চন্দরপল (২০২৩)