কোহলির বেঙ্গালুরু না আইয়ারের পাঞ্জাব, প্রথমবার আইপিএল জিতবে কারা

এবারের আইপিএলে এর আগে ৩ বার মুখোমুখি হয়েছে শ্রেয়াস আইয়ারের পাঞ্জাব ও বিরাট কোহলির বেঙ্গালুরু। আজ ফাইনালে আবার মুখোমুখি তাঁরাবিসিসিআই

ক্রিস গেইল—তর্কযোগ্যভাবে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান।

এবি ডি ভিলিয়ার্স—উদ্ভাবনী ব্যাটিংয়ে গেইলের চেয়েও এগিয়ে রাখতে হবে এই দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানকে।

বিরাট কোহলি—তর্কযোগ্যভাবে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান।

একটা সময় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু একাদশে জ্বলজ্বল করত এই ত্রয়ীর নাম। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আইপিএলে বেঙ্গালুরুর হয়ে একসঙ্গে ৭৯টি ম্যাচ খেলেছেন এই তিনজন। তো কোহলি-গেইল-ডি ভিলিয়ার্সের মতো খেলোয়াড়কে নিয়ে গড়া শক্তিশালী বেঙ্গালুরু কয়বার আইপিএল জিতেছে, এমন প্রশ্ন কেউ করতেই পারেন। তবে উত্তরটা শুনে তাঁরা হতাশই হবেন। সেই সময়ে তো নয়ই, এখনো আইপিএলের চ্যাম্পিয়নের ট্রফি অধরা বেঙ্গালুরুর জন্য।

অথচ বেঙ্গালুরু বরাবরই আইপিএল শুরু করে অন্যতম ফেবারিট। তিনবার তো অপেক্ষা ঘুচানোর শেষ মঞ্চ ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েও প্রতিপক্ষকে ট্রফি নিয়ে উল্লাস করতে দেখেছে বেঙ্গালুরু। যার শেষ দুটিতে কোহলি-গেইল-ডি ভিলিয়ার্স; তিনজনই ছিলেন বেঙ্গালুরু দলে।

২০১৬ সালে তৃতীয়বার আইপিএল ফাইনালে হারের পর বিমর্ষ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর খেলোয়াড়েরা
এএফপি

তিনবার ফাইনালে উঠে তিনবারই রানার্সআপ—বেঙ্গালুরুর সঙ্গে তুলনা চলতে পারে ফুটবলের নেদারল্যান্ডস দলের। তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে তিনবারই যে রানার্সআপ হয়েছে ডাচরা, যার সর্বশেষটি ২০১০ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকায় সেবার প্রথমবার ফাইনালে উঠেই ডাচদের হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় স্পেন।

বেঙ্গালুরু বলতে পারে এমন ইতিহাস তো আমাদেরও। ২০১৬ সালে আইপিএলে ফাইনালে উঠল বেঙ্গালুরু ও  সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। যেটি ছিল বেঙ্গালুরু তৃতীয় ও হায়দরাবাদের প্রথম ফাইনাল। ঠিক যেন ২০১০ বিশ্বকাপ। ফলও হলো ২০১০ সালের মতোই। প্রথমবার ফাইনালে উঠেই কোহলিদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ।

আরও পড়ুন

২০১৬ সালের পর ২০২৫, ৯ বছর পর এবার আবার আইপিএলের ফাইনালে কখনো চ্যাম্পিয়ন না হওয়া দুই দল। একটি দলের নাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। অন্যটি পাঞ্জাব কিংস। তিন ফাইনালে ব্যর্থ বেঙ্গালুরু কি পারবে চতুর্থ ফাইনালে শিরোপা-উৎসব করতে? নাকি দ্বিতীয়বার ফাইনালে ওঠা পাঞ্জাব প্রীতি জিনতাকে প্রথম ট্রফি উপহার দিয়ে অপেক্ষা বাড়াবে বেঙ্গালুরুর?

এবার প্রথম তিন দেখায় পাঞ্জাবকে দুবার হারিয়েছে বেঙ্গালুরু
বিসিসিআই

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে তাহলে আজ ফেবারিট কে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতেও  গলদঘর্ম হতে হয়। লিগ পর্ব দুই দলই শেষ করেছিল সমান ১৯ পয়েন্ট নিয়ে। তবে নেট রান রেটে ০.০৭১ পয়েন্টে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে ছিল শ্রেয়াস আইয়ারের পাঞ্জাব, রজত পাতিদারের বেঙ্গালুরু ছিল দুইয়ে।

এরপর অবশ্য প্রথম কোয়ালিফায়ারে পাঞ্জাবকে হারিয়েই সরাসরি ফাইনালে উঠে যায় বেঙ্গালুরু। যে ম্যাচটি ছিল এবারের আইপিএলে দুই দলের মুখোমুখি হওয়া তৃতীয় ম্যাচ। সর্বশেষ দুটি ম্যাচই জিতেছে বেঙ্গালুরু—এই হিসাবে অবশ্য একটু এগিয়ে রাখা যায় কোহলিদের। কিন্তু আজ তো ফাইনাল। আর ফাইনালে তো আগের ফলের কোনো মূল্য নেই। ভালো খেলতে হবে প্রতিপক্ষের চেয়ে, মূল কথা এটিই।

আরও পড়ুন

তবে দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচটি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে মানসিকভাবে এগিয়ে থেকে ফাইনালে মাঠে নামতে পারে বেঙ্গালুরু। মুল্লানপুরে সেদিন পাঞ্জাবকে ১০১ রানে অলআউট করে দিয়েছিল বেঙ্গালুরু। এরপর রানটা ১০ ওভারেই মধ্যেই পেরিয়ে ফাইনালে উঠে যায় আরসিবি নামেও পরিচিত বেঙ্গালুরু

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা পাঞ্জাব অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার কি পারবেন প্রীতি জিনতাকে প্রথম আইপিএল শিরোপা উপহার দিতে?
বিসিসিআই

পাঞ্জাবে অনুপ্রেরণা অবশ্য এখনো টাটকাই আছে। পরশু আহমেদাবাদে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দুর্দান্ত এক রান তাড়ায় মুম্বাইকে বিদায় করে ফাইনালে উঠেছে পাঞ্জাব। ২০৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের অসাধারণ এক ইনিংসে ১ ওভার হাতে থাকতেই জিতে যায় পাঞ্জাব। ৪১ বলে ৮ ছক্কায় ৮৭ রানে অপরাজিত ছিলেন এবারই পাঞ্জাবে যোগ দেওয়া আইয়ার।

এবার আইয়ারই পাঞ্জাবের সেরা ব্যাটসম্যান। ১৬ ইনিংসে ৬০৩ রান করেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান। এবারের আইপিএলে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ছয়ে আছেন আইয়ার। ফাইনাল শেষে আরও ওপরে ওঠার সুযোগ তাঁর।

আরও পড়ুন

বেঙ্গালুরুতেও আছেন ৬০০ পেরোনো এক ব্যাটসম্যান—বিরাট কোহলি। আইয়ারের চেয়ে দুই ইনিংস কম খেলে ৬১৪ রান কোহলি। আটবার ৫০ ছাড়িয়েছে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান।

বোলিংয়ে বেঙ্গালুরুর হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট অস্ট্রেলীয় পেসার জশ হ্যাজলউডের
বিসিসিআই

বোলিংয়ে বেঙ্গালুরুর হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট অস্ট্রেলীয় পেসার জশ হ্যাজলউডের। ১১ ম্যাচেই ২১ উইকেট তাঁর। পাঞ্জাবের সেরা অর্শদীপ সিং—১৬ ম্যাচে পেয়েছেন ১৮ উইকেট।

তবে আজ ফাইনালে এসব পরিসংখ্যান ভুলেই মাঠে নামবে দুই দল। মাঠে নিজেদের সেরাটা দিয়ে শেষ পর্যন্ত কারা প্রথমবার নামের পাশে চ্যাম্পিয়ন লিখতে পারবেন কে জানে!

আরও পড়ুন