সৌম্যর অভিমান: আমরা তো কেউ বিশ্বাসই করি না যে আমরা পারব

অনুশীলন শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সৌম্য সরকার। আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেছবি: শামসুল হক

বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বও প্রায় শেষ। কাল–পরশু দুই দিনে চারটি ম্যাচ। এরপরই টুর্নামেন্টের শেষাংশ। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম থেকে খেলা চলে যাবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে।

এখন পর্যন্ত আট ম্যাচ খেলে আটটিতেই জিতে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে রংপুর রাইডার্স আছে শীর্ষে, প্লে–অফ নিশ্চিত করা একমাত্র দলও ২০১৭ আসরের চ্যাম্পিয়নরাই।

কিন্তু রংপুরের জয়যাত্রায় সৌম্য সরকার এখনো শুধু দর্শকের ভূমিকায়। কাল দলের সঙ্গে রংপুরে গিয়েছিলেন ট্রফি ট্যুরে। রাইডার্সের পক্ষে এখন পর্যন্ত তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ এটুকুই।

তবে আশার কথা, গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পাওয়া আঙুলের চোট অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। ব্যাটিং–ফিল্ডিং অনুশীলন করছেন। ফিজিও–চিকিৎসকদের সবুজসংকেত পেলে হয়তো এই বিপিএলে খেলতেও দেখা যাবে।

খেলায় ফেরার অপেক্ষায় থাকা সৌম্য আজ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আউটারে অনুশীলন শেষে কথা বলেছেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। সেখানে অনুশীলনে ফিরতে পারার আনন্দের সঙ্গে তাঁর কথায় ধরা পড়েছে একটা আফসোসও।

এবারের বিপিএল হচ্ছে দারুণ রানপ্রসবা উইকেটে। ২০০ রান প্রায় নিয়মিতই হচ্ছে, সেটা তাড়া করতে গিয়ে পরে ব্যাট করা দলও অনেক সময় লক্ষ্য প্রায় ছুঁয়ে ফেলছে। এমন উইকেটে ব্যাটিং করার লোভ সবারই হবে। সৌম্যরও সেটির ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। যদিও বলেছেন, এ নিয়ে ততটা আফসোস নেই, যতটা আফসোস এখনো খেলতে না পারায়।

আরও পড়ুন

‘যেহেতু খেলোয়াড়, মাঠে ফিরেছি, এটাই সবচেয়ে ভালো। ইনজুরি ছিল, একটু কঠিন সময় গেছে। সবচেয়ে কষ্ট ছিল, বাসায় বসে খেলাগুলো দেখছিলাম। খেলাগুলো খেলতে পারছিলাম না, এটাই কষ্টের ছিল। খেলা চলছে, ইচ্ছা ছিল শুরু থেকে খেলার। তাই একটা আফসোস ছিল’—বলেছেন সৌম্য।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ৭৩ বলে ৭৩, পরে টি–টোয়েন্টি সিরিজেও ৩২ বলে ৪৩ রানের একটি ইনিংস ছিল সৌম্যর। সব মিলিয়ে ব্যাটিংটাকে আগের জায়গায় আনার প্রক্রিয়া খারাপ চলছিল না। এর মধ্যেই আঙুলের চোট, ছিটকে যান মাঠের বাইরে। মাঝে আক্রান্ত হয়েছিলেন ভাইরাসেও।

তবে যেটা চলে গেছে, সেদিকে আর ফিরে না তাকিয়ে সৌম্যর দৃষ্টি এখন সামনে। যখনই সুযোগ পান, ভালোভাবে শুরু করাটাই আশা। অবশ্য বাস্তবতাও ভুলে থাকতে পারছেন না।

আঙুলের চোট থেকে অনেকটাই সেরে উঠেছেন সৌম্য সরকার
ছবি: শামসুল হক

দুই মাসের বেশি সময় খেলা থেকে দূরে। অনুশীলনে ফিরেছেন বেশি দিন হয়নি। মাঠে ফেরার জন্য তাই মানসিক প্রস্তুতিটাকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন জাতীয় দলের হয়ে ১৬টি টেস্ট, ৭৫টি ওয়ানডে ও ৮৭টি টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা এই ক্রিকেটার, ‘পরিস্থিতিটা তো মাথার ভেতরে থাকে। ওখানে (মাঠে) তো আমাকে সহজ কিছু দেবে না, ফিল্ডিংয়ের সময় বলেন আর ব্যাটিংয়ের সময় বলেন না। ওখানে পরিস্থিতি পুরোটাই আলাদা। ওইটার জন্য যত বেশি কঠিন অনুশীলন করতে পারব, মানসিকভাবে ততই ভালো হবে।’

আরও পড়ুন

সামনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। আর সবার মতো সৌম্যরও লক্ষ্য থাকবে বড় আসরে বড় কিছু করা। তার জন্য আত্মবিশ্বাসটা নেওয়া যেতে পারে গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে। টেস্ট সিরিজ ড্র করার পর ওয়ানডে সিরিজ হারলেও টি–টোয়েন্টি সিরিজটা ৩–০–তে জিতেই দেশে ফিরেছিল বাংলাদেশ দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই সাফল্যকে ধরা হচ্ছিল টি–টোয়েন্টিতে নিজেদের সামর্থ্যের একটা জানান দেওয়াও।

সে প্রসঙ্গ উঠতেই সৌম্যর কণ্ঠে কিছুটা অভিমানী সুর, ‘সবাই যদি বিশ্বাস করি আমরা পারি, তাহলে আমরা পারব। আমরা তো কেউ বিশ্বাসই করি না যে আমরা পারব! আগে থেকে নেতিবাচক কথা বললে তো হবে না। সিরিজের শুরু থেকে বলেছিলাম, আমরা যদি তিন বিভাগে ভালো করতে পারি, তাহলে যেকোনো দলের বিপক্ষে জিতবে পারব।’

অনুশীলনে সৌম্য সরকার। আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে
ছবি: শামসুল হক

উন্নতির ধারা ধরে রাখাটাই অবশ্য বড় চ্যালেঞ্জ। একটা ধাপে পৌঁছে যাওয়ার পর পরের ধাপটাকে পাখির চোখ করতে হয়। সেই ধারায় কি থাকতে পারবে বাংলাদেশ? প্রশ্নটা সৌম্যরও, ‘ওখানে ভালো করেছি, কিন্তু সেখান থেকে কতটা উন্নতি করতে পারব, সেটা হলো দেখার। বিপিএলে অনেক রান হচ্ছে। বোলাররা ভালো করছে। যদি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি, তাহলে টি-টোয়েন্টিতেও উন্নতি করতে পারব। কারণ, আমরা জানব নিয়মিত ২০০ রান কীভাবে করতে হয়। ১০টা উইকেট কীভাবে নিতে হয়।’