ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দী ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এবার পাকিস্তানের কাছে হার
সম্প্রতি বাংলাদেশে টি–টোয়েন্টি সিরিজ হারলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুরুটা ভালো হয়েছে পাকিস্তানের। শাহিন আফ্রিদি–হারিস রউফদের ফেরার ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান।
প্রতিপক্ষ বদলাল, ভেন্যু বদলাল, বদলাল দেশও; কিন্তু ভাগ্য বদলাল না। সম্প্রতি নিজেদের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে টেস্ট ও টি–টোয়েন্টি মিলিয়ে টানা ৮ ম্যাচ হারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার যুক্তরাষ্ট্রে হারল পাকিস্তানের কাছে।
ফ্লোরিডার লডারহিলে তিন ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান। সেন্ট্রাল ব্রোয়ার্ড রিজিওনাল পার্ক স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ১৭৮ রান করেছিল আগা সালমানের দল। জবাবে ক্যারিবীয়রা ৭ উইকেটে ১৬৪ রান করতে পেরেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে টি–টোয়েন্টি সিরিজ হেরে যাওয়া পাকিস্তান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলে ফিরিয়েছে অভিজ্ঞ দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফকে। আফ্রিদি ৪ ওভারে ২৭ রানে ১ উইকেট নিলেও রউফ ছিলেন খরুচে। ৪ ওভারে ৪১ রান দিয়ে উইকেট–শূন্য থেকেছেন তিনি।
ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ম্যাচ থেকে প্রাপ্তি বলতে যদি কিছু থেকে থাকে, সেটা টসে জয়! এর আগে ক্যারিবীয় অধিনায়কেরা টানা ৯ ম্যাচে টসে হেরেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজের পাঁচ ম্যাচেই ‘মুদ্রা ভাগ্য’ শাই হোপের বিপক্ষে গেছে। সব ম্যাচেই তাঁর দলকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মিচেল মার্শ।
অবশেষে শাই হোপ আজ টসে জিতে পাকিস্তানকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান। তবে তাঁর সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে পারেননি বোলাররা। পাওয়ারপ্লেতে শুধু সাহিবজাদা ফারহানকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলতে পারেন শামার জোসেফ। এরপর অভিজ্ঞ ফখর জামানের সঙ্গে ৫১ বলে ৮১ রানের জুটি গড়েন আরেক ওপেনার সাইম আইয়ুব। শেষ দিকে ফাহিম আশরাফ ও মোহাম্মদ হারিসের ‘ক্যামিও’তে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুড়ে দেয় পাকিস্তান।
আইয়ুব পেয়েছেন আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ফিফটি। পরে বোলিংয়েও ঝলক দেখিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে তাঁর হাতে।
দারুণ ফর্মে থাকা ব্র্যান্ডন কিং ও শিমরন হেটমায়ারের পেশিতে টানা লাগায় এ সিরিজে খেলতে পারছেন না। তাঁদের অভাব ভালোভাবেই টের পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে কিংয়ের সঙ্গে ইনিংস শুরু করতে নেমেছিলেন অধিনায়ক হোপ। তবে আজ দেখা গেল নতুন উদ্বোধনী জুটি—দলে ফেরা জনসন চার্লসের সঙ্গে অভিষিক্ত উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান জুয়েল অ্যান্ড্রু।
উদ্বোধনী জুটিতে চার্লস ও অ্যান্ড্রু ৭২ রান তুললেও তা মোটেও টি–টোয়েন্টির দাবি মেটাতে পারেনি। দুজনে মিলে যে গিলে ফেলেছেন ৬৭ বল!
পাকিস্তান দলে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপটা শাহিন আফ্রিদিই তৈরি করেন। নিজের প্রথম ২ ওভারে দেন মাত্র ৫ রান। তিন স্পিনার মোহাম্মদ নেওয়াজ, সুফিয়ান মুকিম ও সাইম আইয়ুবও দারুণ বোলিং করতে থাকেন। এতে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজনীয় রান রেট ১২ ছাড়িয়ে যায়।
এই পরিস্থিতি থেকে মেরে খেলা ছাড়া উপায় ছিল না ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের। সেটা করতে গিয়ে লাগাতার উইকেটে বিলিয়ে দিয়ে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭২/০ থেকে ১১০/৭–এর দলে পরিণত হয় তারা। ৩৮ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারানোর পর হোপের দলের আশা শেষ হয়ে যায়। ফলে অষ্টম উইকেটে জেসন হোল্ডার ও শামার জোসেফের ২৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রানের জুটিও কোনো কাজে আসেনি।
লডারহিলেই সিরিজের দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৭৮/৬ (আইয়ুব ৫৭, ফখর ২৮, হাসান ২৪, ফাহিম ১৬*; শামার ৩/৩০, শেফার্ড ১/২৯, আকিল ১/৩১, হোল্ডার ১/৩৬)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৪/৭ (অ্যান্ড্রু ৩৫, চার্লস, হোল্ডার ৩০*, শামার ২১*; নেওয়াজ ৩/২৩, আইয়ুব ২/২০, মুকিম ১/২০, আফ্রিদি ১/২৭)।
ফল: পাকিস্তান ১৪ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাইম আইয়ুব।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।