হেডের বিজ্ঞাপনে কোহলিদের অবমাননার মামলা খারিজ
আইপিএল চলতে থাকায় অনেক দিন ধরেই ভারতে অবস্থান করছেন ট্রাভিস হেড। অস্ট্রেলিয়ার এই তারকা ওপেনার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে তো খেলছেনই, অবসরে অংশ নিয়েছেন বিজ্ঞাপনেও।
কিন্তু উবারের সেই বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে যেন বিপদ ডেকে এনেছিলেন হেড। কারণ, তাঁর বিজ্ঞাপনে যে বিরাট কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে খোঁচা দেওয়া হয়েছে! তা দেখার পর বেঙ্গালুরু কর্তৃপক্ষ মোটেও ভালোভাবে নেয়নি।
বিজ্ঞাপনে হেডকে দিয়ে বেঙ্গালুরুকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটিকে অপমানজনক মনে হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকপক্ষ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স স্পোর্টস প্রাইভেট লিমিটেডের। উবারের বিরুদ্ধে তাই দিল্লি উচ্চ আদালতে মামলা করেছিল তারা। তবে রায় উবার ও ট্রাভিস হেডের পক্ষে গেছে। আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন।
আজ রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারপতি সৌরভ ব্যানার্জি বলেছেন, ‘বিজ্ঞাপনটি ক্রিকেট খেলার প্রেক্ষাপটে এবং খেলোয়াড়ি মনোভাব থেকে বানানো হয়েছে। এতে এই আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’
সৌরভ ব্যানার্জি আরও বলেছেন, ‘বিজ্ঞাপনে একধরনের সুস্থ ধারার রসিকতা করা হয়েছে এবং কিছুটা হাস্যরস আছে। এতে কোনো আইন লঙ্ঘনের উপাদান পাওয়া যায়নি, কাউকে অবমাননাও করা হয়নি। বরং এটি একটি সৃজনশীল চিত্র, যা দর্শকদের হাস্যরসের স্বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু মালিকপক্ষের মনে হয়েছিল, উবার তাদের ব্র্যান্ডকে নিয়ে উপহাস করেছে। এ ব্যাপারে বিচারপতি সৌরভ ব্যানার্জির অভিমত, ‘বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য, পদ্ধতি এবং বার্তাকে সামগ্রিক চেতনা, প্রেক্ষাপট বা এর অন্তর্নিহিত যুক্তির সঙ্গে দেখা হয়েছে। এতে আদালত ভুল খুঁজে পাননি। ক্রিকেট খেলার সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞাপনকে এত সংকীর্ণ মনোভাব নিয়ে দেখা যাবে না।’
এবারের আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পরিবহন পৃষ্ঠপোষক হয়েছে উবার। নিজেদের বিজ্ঞাপনে তাই হায়দরাবাদের খেলোয়াড় ট্রাভিস হেডকে মডেল বানিয়েছিল মোবাইল অ্যাপভিত্তিক পরিবহন পরিষেবা কোম্পানিটি।
গত ৫ এপ্রিল ৫৮ সেকেন্ডের সেই বিজ্ঞাপনের ভিডিও প্রকাশ করে উবার। ভিডিওতে দেখা যায়, উবার–চালককে সঙ্গে নিয়ে ট্রাভিস হেড একটি স্টেডিয়ামে যান (যেটিকে বেঙ্গালুরুর ঘরের মাঠ এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম বোঝানো হয়েছে)। সেখানে বেঙ্গালুরুর-হায়দরাবাদ ম্যাচ হওয়ায় কথা।
বিজ্ঞাপনের শুরুতে হেড বলেন, ‘বেঙ্গালুরু, তোমরা কি হেডেকের (মাথাব্যথা) জন্য প্রস্তুত?’ এরপর স্টেডিয়ামের গেটে গিয়ে পাহারাদারদের জানান, তিনি সম্প্রচারকর্মী। এই কথা বলে স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকে পড়েন।
এরপর সঙ্গে নিয়ে আসা স্প্রে পেইন্টিং বের করে বেঙ্গালুরুর নামের ওপর ‘রয়্যালি চ্যালেঞ্জড’ লিখে দেন হেড। পাহারাদাররা সেটি বুঝতে পেরে হেড ও তাঁর এক সঙ্গীকে তাড়া করেন। বিপদ আঁচ করতে পেরে হেড সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন এবং বাইরে অপেক্ষারত উবারের বাইকে চড়ে পালিয়ে যান। পালিয়ে যেতে যেতে হেড বলেন, ‘আমি ট্রাভিস হেড এবং আমরা হায়দরাবাদি।’
শুধু তা–ই নয়, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অনুমতি না নিয়েই তাদের জনপ্রিয় স্লোগান বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করেছিল উবার। আইপিএলের শুরু থেকেই খেলে আসা বেঙ্গালুরু এখন পর্যন্ত একটিবারও শিরোপা জিততে পারেনি। এরপরও তারা একটি স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিবছর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে খেলতে নামে।
কন্নড় ভাষায় স্লোগানটি হলো ‘এ সালা কাপ নামদে’ (এর অর্থ—এ বছর কাপ আমাদের)। কিন্তু কোনোবারই কাপ তাদের হয় না বলে অন্য দলের সমর্থকেরা বেঙ্গালুরুকে খোঁচা দেয়। বিজ্ঞাপনেও এই স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছিল।
বেঙ্গালুরুর আইনি প্রতিনিধি শ্বেতশ্রী মজুমদার দাবি করেছিলেন, বেঙ্গালুরুর ব্র্যান্ডকে ছোট করতেই ইচ্ছাকৃতভাবে এমন বিজ্ঞাপন বানানো হয়েছে। এটা করতে উবার বেঙ্গালুরুর সাবেক ক্রিকেটার ট্রাভিস হেডকে ব্যবহার করেছে।
তবে উবারের আইনজীবী শুরু থেকেই বলে এসেছেন, ‘কারও অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপনটি তৈরি করা হয়নি। বিজ্ঞাপনে বেঙ্গালুরু শহরের যানজটের কথা বলা হয়েছে, বিরাট কোহলি-রজত পাতিদারদের দলের কথা বলা হয়নি। উবারের বিরুদ্ধে মামলা করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ভারতীয় জনগণের রসবোধকে বাজেভাবে অবমূল্যায়ন করেছে। এটি একটি সৃজনশীল বিজ্ঞাপন। এর মাধ্যমে কারও ক্ষতি করা হয়নি।’
বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদ ভারতের দক্ষিণের দুই রাজ্য কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানার রাজধানী। নানা বিষয়ে তাদের মাঝেমধ্যে ঝামেলায় জড়াতে দেখা যায়।
আইপিএলে ট্রাভিস হেড আবার দুই রাজ্যের দলের হয়েই খেলেছেন। ২০১৬ ও ২০১৭ মৌসুম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে কাটানো হেড এখন খেলছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদে। বিজ্ঞাপনে বেঙ্গালুরুকে খোঁচা দিতে তাই হেডকেই ‘উপযুক্ত মডেল’ মনে হয়েছিল উবারের।