সৌম্যর যে দুর্ভাগ্যের হ্যাটট্রিক হলো মিরপুরে
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ বিপিএল এলিমিনেটরে রংপুর রাইডার্স–খুলনা টাইগার্স ম্যাচের দ্বিতীয় বল। দুবাই থেকে সকালে ঢাকায় পৌঁছে ভরদুপুরে খেলতে নামা রংপুরের ইংলিশ ব্যাটসম্যান জেমস ভিন্স বলটা শর্ট মিড অনে পাঠিয়ে রান নিতে চাইলেন। কিন্তু বিপদ বুঝে পরক্ষণে আর দৌড়ালেন না।
তবে ভিন্সের ডাকে সাড়া দিয়ে সঙ্গী সৌম্য সরকার ততক্ষণে পিচের প্রায় মাঝবরাবর চলে যান। খুলনা টাইগার্সের পাকিস্তানি অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নেওয়াজের থ্রো থেকে বল ধরে অধিনায়ক মেহেদী মিরাজ যখন বেল ফেলে দিলেন, সৌম্যর ব্যাট তখন ক্রিজ থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে।
ব্যস, উদ্বোধনী সঙ্গীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে আবারও বিব্রতকর ইতিহাসে সৌম্য। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের মধ্যে স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশিবার ‘ডায়মন্ড ডাক’ মারার রেকর্ডে যৌথভাবে শীর্ষে এখন সৌম্য। ২০ ওভারের ক্রিকেটে সৌম্য এ নিয়ে তিনবার কোনো বল খেলার আগেই আউট হলেন। এর আগে আরাফাত সানিও তিনবার ডায়মন্ড ডাক মেরেছেন।
বিপিএলে ডায়মন্ড ডাকের ২৩তম ঘটনা এটি। এর মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশি ১৫ বার কোনো বল খেলার আগেই আউট হয়েছেন। বিপিএলে আরাফাত সানি এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন দুবার—২০২০ সালে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ঢাকা প্লাটুনের বিপক্ষে এবং ২০২২ সালে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার হয়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে। আরেকবার তিনি কোনো বল না খেলেই শূন্য রানে আউট হয়েছেন ২০১৩ সালে বিজয় দিবস টি–টোয়েন্টি কাপে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১৩ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন সৌম্য। ৩১ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান এবারই প্রথম বিপিএলে কোনো বল না খেলে আউট হলেন। আগের দুই ডায়মন্ড ডাকের একটি তিনি মেরেছিলেন ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ সিরিজে, অন্যটি ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। কাকতালীয়ভাবে স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিতে সৌম্য তিনবারই ডায়মন্ড ডাক মেরেছেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে।
বিপিএলেও ডায়মন্ড ডাকের ঘটনা বেশি ঘটেছে মিরপুরে। ২৩ বারের মধ্যে ১৭ বারই এই মাঠে। বিপিএলে প্রথমবার কোনো বল না খেলে শূন্য রানে আউট হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন স্মিথ, ২০১২ সালে উদ্বোধনী আসরে খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের হয়ে বরিশাল বার্নার্সের বিপক্ষে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথমবার এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন মুমিনুল হক, একই বছর ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস–বরিশাল বার্নার্স ম্যাচে।
এ নিয়ে দ্বিতীয় ওপেনার হিসেবে বিপিএলে কোনো বল না খেলেই আউট হলেন সৌম্য। প্রথমজন খুলনা টাইটানসের হাসানুজ্জামান, ২০১৬ আসরে চট্টগ্রামে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে।
টেস্টে বাংলাদেশিদের ডায়মন্ড ডাক মারার ঘটনা একটিই। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ফতুল্লা টেস্টে শূন্য বলে শূন্য রানে আউট হন জুবায়ের হোসেন। স্ট্রাইকে থাকা তাইজুল ইসলাম ৩ রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু থার্ডম্যান থেকে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের থ্রোতে ঋদ্ধিমান সাহা বেল ফেলার আগে ক্রিজে ঢুকতে পারেননি জুবায়ের। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রানআউট হন তিনি।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সাতজন ব্যাটসম্যান ডায়মন্ড ডাক মেরেছেন। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার এই অভিজ্ঞতা হয় আকরাম খানের, সর্বশেষ ২০১৩ সালে মুমিনুল হকের। অন্য পাঁচজন নাঈমুর রহমান, হাবিবুল বাশার, এনামুল হক জুনিয়র, নাঈম ইসলাম ও জুনায়েদ সিদ্দিকী।
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশিদের মধ্যে সৌম্য ছাড়াও কোনো বল না খেলে শূন্য রানে আউট হয়েছেন নাসির হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মাহমুদুল হাসান ও মেহেদী হাসান।
সৌম্যর দুঃস্বপ্নের দিনে তাঁর দল রংপুর রাইডার্সও বিপিএল থেকে ছিটকে পড়েছে। রংপুরকে মাত্র ৮৫ রানে অলআউট করে ৯ উইকেটের অনায়াস জয় পাওয়া খুলনা টাইগার্স পৌঁছে গেছে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে।