কুফা ভেবে মাঠে যেতেন না বাবা, গিয়েই দেখলেন ছেলের রেকর্ড সেঞ্চুরি
উড়ন্ত শুরু যাকে বলে, সেটিই করেছিলেন অভিষেক শর্মা। প্রথম ৮ বলের ৬টিকেই বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে তুলে ফেলেছিলেন ২৮ রান। কিন্তু নবম বলে আরেকটি বাউন্ডারি মারতে গিয়েই গড়বড়, সরাসরি ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সব সমর্থকের উচ্ছ্বাস থেমে গেল মুহূর্তেই।
তবে অন্য অনেকের চেয়ে একটু বেশিই খারাপ লাগল রাজ কুমার শর্মার। অভিষেক যে তাঁর ছেলে! আগে কখনো আইপিএলে ছেলের খেলা দেখতে মাঠে আসেননি। আজ প্রথম এলেন, আর ছেলেও আউট হয়ে গেল শুরুতেই! রাজ কুমার শর্মা নিজের ওপরই ক্ষুব্ধ হলেন—কুফা বাবা মাঠে আছে বলেই ছেলের ইনিংসটা বড় হলো না।
শনিবার রাতে হায়দরাবাদ-পাঞ্জাব কিংস ম্যাচে অভিষেক ২৮ রানে আউট হননি। মাঠ ছেড়েছেন আইপিএলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪১ রানের ইনিংসের রেকর্ড গড়ে। তবে অভিষেকের বাবা রাজ কুমার শর্মার কথাগুলো মিথ্যাও নয়।
হায়দরাবাদের ব্যাটিংয়ে ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই যশ ঠাকুরের বলে ক্যাচ তুলেছিলেন অভিষেক। তবে বলটি নো হওয়ায় বেঁচে যান এই বাঁহাতি। এরপরই একের পর চার-ছক্কার বাউন্ডারিতে করেন সেঞ্চুরি, গড়েন আইপিএল রেকর্ড।
ম্যাচ শেষে অভিষেকের বাবা হাসতে হাসতে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানান, আইপিএলে ছেলের খেলা দেখতে আগে কখনো স্টেডিয়ামে আসেননি, ‘আমি কুসংস্কারে বিশ্বাসী মানুষ। ভাবতাম, আমি মাঠে গেলে ছেলে ভালো খেলতে পারবে না। আজ সে যখন “নো” বলে আউট হলো, (চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত) ৩০ সেকেন্ড সময় আমি নিজেই নিজেকে দোষারোপ করছিলাম। এরপর অভি যখন গ্যালারিতে ছয় মেরে বল পাঠাতে শুরু করল, আমি পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পেলাম।’
২০১৮ সালে আইপিএলে অভিষেক হওয়া অভিষেক শর্মা হায়দরাবাদে খেলছেন ২০১৯ থেকে। এর মধ্যে গত বছর ছিলেন সেরা ছন্দে, ১৬ ইনিংসে ৪৮৪ রান তুলেছিলেন ২০৪ স্ট্রাইক রেটে। তবে এ বছর শুরু থেকেই রানখরা। পাঞ্জাবের বিপক্ষে ম্যাচের আগ পর্যন্ত ৫ ম্যাচে মাত্র ৫১ রান। এমন ছন্দহীনতার মধ্যেই পাঞ্জাবের অমৃতসরে থাকা বাবা-মাকে হায়দরাবাদে আমন্ত্রণ জানান ছেলে অভিষেক। বিমানের টিকিটও কেটে দিয়েছিলেন।
‘এরপরও আমি কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম। তবে সে আবার ফোন দিয়ে আমাকে রাজি করাল। বিমানে চড়ে হায়দরাবাদে এলাম’—বলছিলেন রাজ কুমার।
ম্যাচের পর অভিষেক জানান, হায়দরাবাদের পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁর মা–বাবার অপেক্ষায় ছিল, ‘সবাই অপেক্ষায় ছিল। পুরো দল মনে করেছিল আমার মা–বাবা হায়দরাবাদের জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক হবেন।’
সবার ধারণা শেষ পর্যন্ত ফলেও গেছে। টানা চার ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর পাঞ্জাবের বিপক্ষে ৮ উইকেটে জিতেছে হায়দরাবাদ।