‘এখন মনে হয়, টি-টোয়েন্টির ছন্দটা ধরতে পেরেছি’

প্রতিভা, সামর্থ্য ও নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ছিল না খুব একটা। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণের সঙ্গে মানিয়ে ব্যাট করতে না পারা এবং ধারাবাহিকতার অভাবে বারবার সমালোচিত হয়েছেন নাজমুল হোসেন। তবে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই কিছুটা ধারাবাহিকতার আভাস মিলছে। যা ধরে রেখেছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে বিপিএলেও। কাল প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাজমুল জানালেন রানে ফেরার স্বস্তির কথা—

নাজমুল হোসেন বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সে খেলছেনছবি: শামসুল হক

প্রশ্ন :

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই এ সংস্করণে রান পাচ্ছেন। কিছুটা কি আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে নিজেকে?

নাজমুল হোসেন: ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাসের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার ক্ষেত্রে সেটা এখন ভালো অবস্থানে আছে। দলের একটা ব্যাটিং পরিকল্পনা থাকে। আমি সে অনুযায়ী ব্যাট করতে পারছি। যার কারণে আমি ব্যাট করার সময়ও পাচ্ছি। দলের পরিকল্পনা থাকে টপ অর্ডারের কেউ একজন ১৫-১৬ ওভার পর্যন্ত যেন ব্যাট করে। আমি সে চেষ্টাই করছি। দলও লাভবান হচ্ছে। এটা সাধারণত কেউ জানে না। জানার কথাও নয়। কারণ, দলের পরিকল্পনা, সেটা দলের মধ্যেই থাকে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

এ দায়িত্বটা কি আপনার সহজাত দক্ষতার সঙ্গে যায়?

নাজমুল: দলের চাহিদা আর আমার খেলার ধরনের সংমিশ্রণটা ভালো হলে ফল ভালো আসবে। এ মুহূর্তে আমার পরিকল্পনার সঙ্গে দলের পরিকল্পনার একটা মিল আছে। যে কারণে আমাকে খুব বেশি কিছু মানিয়ে নিতে হচ্ছে না। আমি আমার সহজাত খেলাটাই খেলছি। মারতে হলে মারছি। একটু ধরে খেলার দরকার হলে সেটাই করছি।

নাজমুল হোসেনের ব্যাটে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই কিছুটা ধারাবাহিকতার আভাস মিলছে
ছবি: শামসুল হক

প্রশ্ন :

বিশ্বকাপে ভালো করায় আত্মবিশ্বাস বেড়েছে নিশ্চয়ই…

নাজমুল: অবশ্যই। বিশ্বকাপে এবারের কন্ডিশন কঠিন ছিল। টি-টোয়েন্টিতে যাঁরা সফল টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, তাঁদের কেউই বড় রান করেননি। এর মধ্যে আমি রান করতে পেরেছি, এটা আমার জন্য গর্বের ব্যাপার। আর সাধারণত যে কুকাবুরা বলে আমরা খেলি, সেটাতেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। যে কারণে বল স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি সুইং করে। এর মধ্যে রান করায় সাহস বেড়েছে।

প্রশ্ন :

নতুন আর পুরোনো কুকাবুরায় পার্থক্যটা কী?

নাজমুল: আগে এক-দুই ওভার সুইং করত। কিন্তু খুব বড় সুইং হতো না। এখন সুইং একটু বেশি হচ্ছে। সিমে হিট করলে নড়াচড়া একটু বেশি করে। আগের তুলনায় একটু কঠিন। খেয়াল করে দেখবেন বিশ্বকাপে কিন্তু রিজওয়ান, বাবর, ওয়ার্নাররা স্বাভাবিকভাবে যেমন রান করে, বিশ্বকাপে কিন্তু তেমন করেনি। কারণ বল, কন্ডিশন, সব মিলিয়েই টপ অর্ডারে ব্যাটিং কঠিন ছিল।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

কৌশলগত বিষয় তো আর দর্শকেরা দেখবে না। কিন্তু বিশ্বকাপে রান করার পরও আপনি অনেক সমালোচিত হয়েছেন...

নাজমুল: কিছু করার নেই। এটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগ, যে কাউকে নিয়ে মন্তব্য করে ফেলা যায়। তবে আরেকটু জেনে–বুঝে যদি বলি, তাহলে যাকে নিয়ে বলা হচ্ছে, সেই ক্রিকেটারের জন্য ভালো। কারণ আমারও পরিবার আছে। নিজের ভালো লাগা, খারাপ লাগা আছে। যতই বলি যে আমি এসব থেকে দূরে থাকি, কিন্তু মাঝেমধ্যে সামনে চলেই আসে।

প্রশ্ন :

এই উপলব্ধি কখন হলো?

নাজমুল: প্রথম দিকে খুব অস্বস্তি লাগত। অনেক বেশিই খারাপ লাগত। পরে মনে হলো, বাংলাদেশে যত বড় বড় প্লেয়ার আছে, সবাইকে নিয়েই সমালোচনা হয়েছে। আমি তো এমন কিছু না।

প্রশ্ন :

সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়েও ভালো খেলছেন…

নাজমুল: একদম স্বাধীনতা নিয়ে খেলা যাকে বলে, সিলেটে সেটাই পাচ্ছি। আমাদের যা খুশি, তা করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কোনো চাপ নেই। ম্যাচ জিততেই হবে, এমন চাপ নেই।

আরও পড়ুন
আমাদের সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ লিগ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রতিবছর আমি ভালো করি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো ভালো করিনি। এটা নিয়ে আমি নিজের ওপর অনেক আপসেট। এটা নিয়েও কাজ করছি। একটা কথা বলি, আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, আমি চেষ্টার ক্ষেত্রে, অনুশীলনের ক্ষেত্রে খুবই সৎ
নাজমুল হোসেন

প্রশ্ন :

টেস্টে আপনার ১০০০ রান পূর্ণ হয়েছে। ছোট অর্জন। কিন্তু এত সমালোচনার ভিড়ে নিশ্চয়ই এই মাইলফলকটা কিছুটা তৃপ্তি দিয়েছে?

নাজমুল: ১০০০ রান হয়তো অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ জন্য কারও মনে নেই। কিন্তু আমার কাছে টেস্টে ১ রানও অনেক বড় ব্যাপার। টেস্ট ক্রিকেটটাকে আমি এভাবেই দেখি। তবে আমার অনেক অনেক দূর যাওয়া বাকি। টেস্ট ব্যাটিং নিয়ে আমি নিজেও খুশি নই। আমার আরও ধারাবাহিক হওয়া উচিত। আরও বড় ইনিংস খেলতে হবে।

প্রশ্ন :

তিন সংস্করণের মধ্যে কোনটা আপনার পছন্দের?

নাজমুল: তিনটাই পছন্দ। তবে সবচেয়ে বেশি পছন্দ ওয়ানডে। কারণ, এই সংস্করণে আমার সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ছিল। আমাদের সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ লিগ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রতিবছর আমি ভালো করি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো ভালো করিনি। এটা নিয়ে আমি নিজের ওপর অনেক আপসেট। এটা নিয়েও কাজ করছি। একটা কথা বলি, আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, আমি চেষ্টার ক্ষেত্রে, অনুশীলনের ক্ষেত্রে খুবই সৎ। কোনো দিন কাজে ফাঁকি দিই না। তবে ভাগ্যেরও একটা ব্যাপার আছে, জানি না কবে ভাগ্য বদলাবে।

প্রশ্ন :

গত কয়েক বছরে লিটন দাস তিন সংস্করণে ধারাবাহিকতা অর্জন করেছেন। আপনিও নিশ্চয়ই নিজেকে একই জায়গায় দেখতে চাইবেন?

নাজমুল: এখন মনে হয়, টি-টোয়েন্টির ছন্দটা ধরতে পেরেছি। টেস্টে ইনিংস বড় হচ্ছে না। তবে আমি টেস্টে রান করতে পারি, এই আত্মবিশ্বাসটা আমার আছে। ওয়ানডেতে ভালো না করলেও এই সংস্করণে আমি ভালো করব, এই বিশ্বাস আমার আছে।