বাংলাদেশকে হারিয়ে জিম্বাবুয়ের ইতিহাস

৩ উইকেটের জয়ের পর জিম্বাবুয়ের রিচার্ড এনগারাভা ও ওয়েসলি মাধেভেরেশামসুল হক

বৃষ্টি আসি আসি করেও আসেনি! সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আলোকস্বল্পতায় চতুর্থ দিনের খেলা বন্ধ হতেও হতেও হয়নি!  আর তাতে সিলেট টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে  চার দিনের মধ্যেই হেরে গেল বাংলাদেশ। টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে আঁধারে ঢেকে যাওয়া মাঠে ফ্লাডলাইটের কৃত্রিম আলোর নিচে জিম্বাবুয়ের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেই মিরাজকে রিভার্স সুইপে বাউন্ডারি মেরে জিম্বাবুয়েকে জিতিয়ে দেন ওয়েসলি মাধেভেরে। ২০২১ সালের পর এটিই  জিম্বাবুয়ের প্রথম টেস্ট জয়।

বাংলাদেশের দেওয়া ১৭৪ রানের লক্ষ্য জিম্বাবুয়ে ছুঁয়েছে ৭ উইকেট হারিয়ে, যা জিম্বাবুয়ের টেস্ট ইতিহাসে রেকর্ড রান তাড়া করে জয়। আগের রেকর্ডটা ১৬২। ১৯৯৮ সালে পেশোয়ার পাকিস্তানের দেওয়া ১৬২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৭ উইকেটে জিতেছিল দলটি।

চতুর্থ ইনিংস হলেও সিলেটের উইকেটে ১৭৪ রান ছোঁয়া খুব কঠিন কিছু ছিল না। সেটা টেস্টের চতুর্থ দিন হলেও। তবে জিম্বাবুয়ের এত রান করে জেতার অতীত রেকর্ড না থাকায় বাংলাদেশের অনেক সমর্থকই আশা খুঁজে পেয়েছিলেন।

১০ উইকেট নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ
প্রথম আলো

কিন্তু ওপেনিং জুটিতে জিম্বাবুয়ে ৯৫ রান তুলে ফেলায় শেষ দিকে বাংলাদেশ ভালো করলেও ম্যাচ জেতা সম্ভব হয়নি। এই ইনিংসেও ফিফটি পেয়েছেন জিম্বাবুয়ের ওপেনার ব্রায়ান বেনেট। আরেক ওপেনার বেন কারেন করেছেন ৪৪ রান। দুজনকেই ফিরিয়েছেন মিরাজ। ওপেনিং জুটি ভাঙার পর মিরাজ-তাইজুল নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়েছেন। তবে দলকে জয় এনে দিতে পারলেন না তাঁরা। টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ১০ উইকেট নেওয়াটাই হয়ে রইল মিরাজের সান্ত্বনা। তবে হাতে আর কিছু রান বেশি থাকলে কী হতো কে জানে! দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোরে যে আরও কিছু রান যোগ হলো না, তার দায় ব্যাটসম্যানদের।

আরও পড়ুন

সিলেটে আজ বাংলাদেশ দিন শুরু করে অধিনায়ক নাজমুলের ভুলে। ব্লেসিং মুজারাবানির পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চতুর্থ দিনের প্রথম বলটা ইয়র্কার দিয়ে নাজমুলকে অপ্রস্তুত করে ফেলেন মুজারাবানি। অপ্রস্তুত নাজমুলকে পরের বলটিতে মুজারাবানি দেন বাউন্সার। ব্যস! উইকেটে এসেই পুল খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন নাজমুল। গতকাল ধৈর্যের পরীক্ষায় পাস করে ৬০ রানে অপরাজিত থাকা নাজমুলের ইনিংস শেষ তাতে।

৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা ব্লেসিং মুজারাবানি
প্রথম আলো

বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের বাকি সময়েও ছিল ভুলের প্রাধান্য। মিরাজ এদিনও ছিলেন ব্যর্থ। এক চার ও এক ছক্কায় ইনিংস শুরু করা মিরাজ ফেরেন মুজারাবানির বলে গালিতে ক্যাচ দিয়ে।

আরও পড়ুন

ভুল খুঁজলে ফিফটি করা জাকের আলীর ব্যাটিংয়েও পাওয়া যাবে। ২১৩ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর যেভাবে বোলার হাসান মাহমুদকে ওভারের পর ওভার স্ট্রাইক দিয়েছেন, সেটাও দৃষ্টিকটুই লেগেছে। হ্যাঁ, হাসান ৫৮ বল খেলেছেন। জাকেরের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটিতে তাঁর অবদান ছিল ১২ রানের। তবু হাসানের মতো টেলএন্ডারের ব্যাটসম্যানদের ভুল করার সম্ভাবনা বেশিই থাকে। সেটাই হয়েছে শেষ পর্যন্ত। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে ছক্কা মারতে গিয়েই ফিরেছেন তিনি। আরেক পেসার খালেদ আহমেদ ফিরেছেন প্রথম বলেই। তাতে ৭ উইকেটে ২৪৮ থেকে মুহূর্তেই ৯ উইকেটে ২৪৮ হয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশ যোগ করতে পারে আর ৭ রান।

৫৮ রান করার পথে জাকের আলী
প্রথম আলো

মরিয়া জাকের লিড বাড়াতে গিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান ব্যক্তিগত ৫৮ রানে। এ নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ৪ টেস্টেই ফিফটি পেয়েছেন জাকের। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এ কীর্তি গড়লেন উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান। তবে এটি নিশ্চিত সান্ত্বনা হতে পারছে না জাকেরের।

জাকেরকে ফিরিয়ে ইনিংসে ষষ্ঠ উইকেট পেয়ে যান জিম্বাবুইয়ান পেসার মুজারাবানি। টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ইনিংসে ৬ উইকেট পেলেন দীর্ঘদেহী এই পেসার। ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি। ১১ টেস্টের ক্যারিয়ারে এই প্রথম এক ম্যাচে ৯ উইকেট পেলেন মুজারাবানি।

আরও পড়ুন

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ১৯১ ও ২৫৫ (নাজমুল ৬০, জাকের ৫৮, মুমিনুল ৪৭, মাহমুদুল ৩৩; মুজারাবানি ৬/৭২, মাসাকাদজা ২/২০)। জিম্বাবুয়ে: ২৭৩ ও ৫০.১ ওভারে ১৭৪/৭ (বেনেট ৫৪, কারেন ৪৪, মাধেভেরে ১৯*; মিরাজ ৫/৫০, তাইজুল ২/৭০)। ফল: জিম্বাবুয়ে ৩ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ব্লেসিং মুজারাবানি। সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে জিম্বাবুয়ে ১–০–তে এগিয়ে।