দুই স্পিনারে শ্রীলঙ্কার বাজিমাত

মাহিশ তিকশানা ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাগ্রাফিকস: প্রথম আলো

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে শ্রীলঙ্কা তাদের আট ম্যাচের পাঁচটিতে ব্যাট করেছে আগে। এর মধ্যে পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পেরেছে মাত্র একটিতে। ব্যাটিংয়ে এমন ভঙ্গুরতার পরও একটি ম্যাচেও হারেনি। আট ম্যাচের সব কটি জিতে বিশ্বকাপ বাছাই টুর্নামেন্টে হয়েছে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।

আরও পড়ুন

ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা দেখাতে না পারলেও টানা আট জয়ের রহস্য তো বোঝাই যাচ্ছে, বোলারদের টানা সাফল্য। গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে সুপার সিক্স হয়ে ফাইনাল, স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে থেকে শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হয়ে ফাইনালে ওঠা নেদারল্যান্ডস—সব পর্বে সব প্রতিপক্ষকেই অলআউট করেছে শ্রীলঙ্কার বোলাররা।

এক ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া আর কোনো প্রতিপক্ষ দুই শ রানই পার হতে পারেনি। আট দলের ৮০ উইকেটের অর্ধেকের বেশি তুলে নিয়েছেন মাত্র দুজন—ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও মাহিশ তিকশানা। দুই স্পিনারের যৌথ শিকার ৪৩ উইকেট, যার মধ্যে হাসারাঙ্গার ২২টি, তিকশানার ২১টি। ১০ দলের ৩৪ ম্যাচের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট এ দুজনেরই।

এখন আগস্ট–সেপ্টেম্বরের এশিয়া কাপ আর অক্টোবর–নভেম্বরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ঘিরে শ্রীলঙ্কার যে আশা–ভরসা, তাঁর অনেকখানি জুড়ে থাকছে এই স্পিন জুটি।

আরও পড়ুন

২৫ বছর বয়সী হাসারাঙ্গা লেগ স্পিনার, বড় অস্ত্র গুগলি। ২০২১ ও ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করে আগে থেকেই বেশ পরিচিত। তবে কুড়ি ওভার ক্রিকেটের তুলনায় ওয়ানডেতে কিছুটা অসফলই ছিলেন।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগপর্যন্ত ৪০ ম্যাচে ছিল ৪৫ উইকেট। নিজেকে নতুন করে চেনানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েই যেন জিম্বাবুয়েতে খেলতে নেমেছিলেন হাসারাঙ্গা। প্রথম ম্যাচেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২৪ রানে ৬ উইকেট। যা তাঁর ক্যারিয়ার–সেরা। পরের ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে শিকার ১৩ রানে ৫ উইকেট। হাসারাঙ্গার স্পিন ভেলকিতে আটকা পড়েন আয়ারল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরাও।

বুলাওয়েতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে নেন ৭৯ রানে ৫ উইকেট। ১৯৯০ সালে নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে টানা তিন ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছিলেন পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার ওয়াকার ইউনিস। ৩৩ বছর পর তাঁর রেকর্ডে ভাগ বসান হাসারাঙ্গা।

প্রথম তিন ম্যাচে ১৬ উইকেট তুলে নেওয়া হাসারাঙ্গা এরপর একটু শ্বাস ফেলেছেন, পরের চার ম্যাচে নিয়েছেন ৮ উইকেট। অনেকটা রিলে দৌড়ের মতো করেই যেখানে হাসারাঙ্গা থেমেছেন, সেখান থেকে নতুন উদ্যমে দৌড়েছেন তিকশানা।

আরও পড়ুন

২২ বছর বয়সী এই ডানহাতি মূলত অফ স্পিনার। উইকেট–টু–উইকেট বল করে থাকেন, রহস্য স্পিনার হিসেবে পরিচিতি তাঁর। হাসারাঙ্গার ১৬ উইকেটের ৩ ম্যাচে তিকশানার সংগ্রহ ছিল মোটে ৩ উইকেট। তবে পরের পাঁচ ম্যাচেই নিয়েছেন ১৮ উইকেট।

এর মধ্যে সুপার সিক্স পর্বে তিন উইকেট করে নিয়েছেন স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে, গতি বাড়িয়ে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শিকার চারটি করে। পরে ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নেন আরও চার উইকেট।

আবার একের পর এক উইকেট তোলার পথে রান খরচও কমই করেছেন তিকশানা, ৬৩.৫ ওভার ঘুরিয়ে রান দিয়েছেন ৪.০২ গড়ে। যা হাসারাঙ্গার তুলনায়ও বেশ ভালো (৫.১৩)।

একজনের সর্বোচ্চ উইকেটশিকার আর অন্য একজনের সেরা ইকোনমি ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটে ভর করে শ্রীলঙ্কা পেয়েছে বিশ্বকাপের টিকিট, সেই সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাই টুর্নামেন্টের শিরোপাও। যা নিয়ে ম্যাচশেষে গর্ববোধের কথাই শুনিয়েছেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা, ‘আমরা কখনোই বাছাইপর্ব খেলতে চাইনি। তবে খেলতে এসে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা এবং ভারতের টিকিট কাটতে পারায় আমরা গর্বিত।’

আরও পড়ুন

শ্রীলঙ্কা ১৯৯৬ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, ফাইনাল খেলেছে ২০০৭ ও ২০১১ আসরেও। সর্বশেষ আসরগুলোতে অন্যতম ফেবারিট হিসেবে শুরু করলেও এবার বাছাইপর্বে নেমে যাওয়ায় অনেকের চোখে শ্রীলঙ্কা শিরোপার বড় দাবিদার নয়।

তবে বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করে হাসারাঙ্গা বলেছেন, এখানকার মোমেন্টামই তাঁরা ভারতে নিয়ে যেতে চান, ‘দল হিসেবে এবং ব্যক্তিগতভাবে এই মোমেন্টাম আমরা ভারতে নিয়ে যেতে চাই। গত দুই বছরে ভারতে অনেক ম্যাচ খেলেছি। কন্ডিশনও ভালো জানি।’

ভারতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বিশ্বকাপের স্মৃতিও নিশ্চয়ই শ্রীলঙ্কার জন্য বাড়তি প্রেরণা।