বিপিএলে পিচেও বল রাখতে পারছেন না—এরা কারা, কোত্থেকে এল এরা
চোখের ব্যথা নিশ্চয়ই কমেনি? বিপিএলে গতকাল শুবম রঞ্জনরা যে বোলিং দেখিয়েছেন, তাতে নিয়মিত ক্রিকেট দেখা চোখগুলো একটু ব্যথা করাই স্বাভাবিক। বল ফেলা হচ্ছে পিচের বাইরে, স্টাম্পের বাইরে একের পর এক লং হপ, বিমার—স্বীকৃত টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে এক বোলারের কাছে থেকে এমন অপ্রত্যাশিত সব ‘বৈচিত্র্য’ তো আর প্রতিদিন দেখা যায় না!
গতকাল ঢাকা ক্যাপিটালসের বোলার শুবম এমন ‘ভানুমতির খেলই’ দেখালেন! শুধু শুবমই নন, আরও আছেন, যাঁদের দেখে প্রশ্নটি উঠতেই পারে, ‘এরা কারা? কোত্থেকে এল এরা?’
শুবমের চেয়ে তবু ফারমানউল্লাহ ভালো। আফগান এই অলরাউন্ডার অন্তত পিচে প্রতিটি বল রাখতে পারেন। বল ব্যাটসম্যানদের পর্যন্ত ঠিকভাবে যাবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য দর্শকদের চিন্তায় থাকতে হয় না!
দলটির এতটাই দুরবস্থা যে তাঁদের দিয়ে বোলিং কোটা পূরণ করাতে হয়। ঢাকায় কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমানও আছেন। তবে ঢাকার বোলাররা যে ভয়াবহ বোলিং করছেন, এর বিজ্ঞাপন হয়ে উঠছেন শুবমরাই। শুবমদের কার্যকলাপ যেহেতু বলা হচ্ছে, কিন্তু তাঁদের চেনানোরও বোধ হয় দরকার আছে।
ভারতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা শুবম এখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটে খেলছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিমিয়ার লিগের সর্বশেষ আসরে সিরিজসেরা ক্রিকেটার তিনি। এই টুর্নামেন্টে ২৭৭ রান করার পাশাপাশি ৮ উইকেট নিয়েছেন। খেলেছেন মেজর লিগ ক্রিকেটে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটে এটিই সবচেয়ে বড় ঘরোয়া টুর্নামেন্টে। মানের দিক থেকেও ভালো। সেখানে ১২ ম্যাচে তাঁর রান ১৫১। এই ১২ ম্যাচে শুবম বোলিং করেছেন মাত্র ১ ওভার। সেই তাঁকেই কিনা শিশিরস্নাত বিপিএলে ৪ ওভার করে বোলিং করাতে হচ্ছে। আফগানিস্তান ‘এ’ দলে খেলা অলরাউন্ডার ফারমানউল্লাহ তো আফগানিস্তানের বাইরে কোনো দলেই খেলেননি।
অন্য বেশ কয়েকটি দলেও এমন অনেক ক্রিকেটার আছেন, যাঁদের নাম রেকর্ড বইয়ে খুঁজে বের করতে হয়। উইলিয়াম বোসিস্টের কথাই ধরুন। ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার ছিলেন। অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে এবারের বিপিএলে খুলনার হয়ে মাঠে নামার আগে ৪ বছরে স্বীকৃত কোনো টি-টোয়েন্টি খেলেননি। বিপিএলের আগে সর্বসাকল্যে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন ১২টি। এর ১১টি আবার বিগ ব্যাশ লিগে। যেখানে তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস অপরাজিত ৩৬।
টানা ৬ ম্যাচে হারা ঢাকার দলে আছেন স্টিভেন এসকিনেজি, যে নামটা তেমন পরিচিত নয়, অথচ ১০০–এর বেশি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা তাঁর। এই ঢাকাতেই আছেন আমির হামজা নামের এক আফগান স্পিনার, যিনি আফগানিস্তানের হয়ে ২০২১ সালের পর আর খেলেননি। লিগ বলতে খেলেছেন আফগানিস্তানের প্রিমিয়ার লিগে। তাঁদের দিয়েই চলছে বিপিএল!
তারকা ক্রিকেটার দূরে থাক, বিশ্ব ক্রিকেটে প্রাসঙ্গিক নামগুলোকেও বিপিএলে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ একই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি লিগে ট্রেন্ট বোল্টরা আগুন ঝরাচ্ছেন। আজ শুরু হবে আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি লিগ, যে টুর্নামেন্টে উত্তাপ ছড়াবেন সুনীল নারাইন, নিকোলাস পুরানরা। ওসব দেখে বিপিএলে চোখ রাখলে এটাকে অন্য গ্রহের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টও লাগতে পারে!