কেপটাউনে ২৩ উইকেটের অদ্ভুত দিনে এগিয়ে ভারতই

দক্ষিণ আফ্রিকা–ভারত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে ব্যাটসম্যানদের মাঠ ছেড়ে উঠে যাওয়ার দৃশ্য ছিল নিয়মিতএএফপি

মুকেশ কুমারের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পথে বিরাট কোহলির আলিঙ্গনে সিক্ত হলেন ডিন এলগার, ভারত দলের অন্যরাও এসে অভিবাদন জানিয়ে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের অন্যতম সেরা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এলগার কি টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সময় জানতেন, ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টের প্রথম দিনই শেষ দুটি ইনিংস খেলে ফেলতে হবে তাঁকে!

কেপটাউন টেস্টের প্রথম দিনে ঘটেছে এমন অদ্ভুত ঘটনাই। বলের মুভমেন্ট, পিচের অসম বাউন্সে ব্যাটসম্যানদের জীবন হয়ে পড়েছিল দুর্বিষহ। প্রথম দিনই পড়েছে ২৩ উইকেট—যা কোনো টেস্টের প্রথম দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যে কোনো দিনই যৌথভাবে সর্বোচ্চ। এমন উইকেট-বৃষ্টির দিনে ভারত এগিয়ে ৩৬ রানে, দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার বাকি ৭ উইকেট।

দিনটি শুরু হয়েছিল মোহাম্মদ সিরাজের আগুনে। ১৮তম ওভারে সিরাজ যখন নিজের টানা নবম ওভার শেষ করলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর তখন ৪৫ রানে ৭ উইকেট! তখন সিরাজের বোলিং স্পেল ছিল এমন—৯ ওভার, ৩ মেডেন, ১৫ রান, ৬ উইকেট! মাঝে ত্রিস্টান স্টাবসের উইকেট নেন বুমরা, এর বাইরে ৬টিই সিরাজের।

দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা দুঃস্বপ্নের করে তোলেন মোহাম্মদ সিরাজ
এএফপি

মার্করাম, এলগার, টনি ডি জর্জি ও স্টাবস—এমন দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম চার ব্যাটসম্যানের সবাই ফিরেছেন এক অঙ্কে। কেউই ৫ রানও ছুঁতে পারেননি। পঞ্চম উইকেটে কাইল ভেরেইনা ও ডেভিড বেডিংহাম যোগ করেন ১৯ রান। ইনিংসে সর্বোচ্চ জুটি হয়ে থেকেছে সেটিই। বুমরা ও মুকেশ কুমার এসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে থামান ৫৫ রানের মধ্যেই, ১৯৩২ সালের পর যেটি তাদের সর্বনিম্ন স্কোর। ভারতের বিপক্ষে কোনো দলেরও এটিই সর্বনিম্ন। আর দেশের মাটিতে গত ১২৫ বছরের মধ্য এত কম রানে থামেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।

আরও পড়ুন

প্রথম ইনিংসে ভারতের স্কোর এক সময় ছিল ৪ উইকেটে ১৫৩ রান। সেখান থেকে আর কোনো রান যোগ না করতেই অলআউট হয়ে গেছে তারা। তৃতীয় ওভারে যশস্বী জয়সোয়াল ফিরলেও ভারত শুরুটা পেয়েছিল দারুণ। ১ উইকেট হারিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের স্কোর পেরিয়ে যায় তারা। ৫০ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে রোহিত শর্মা ও ৫৫ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলা শুবমান গিল ছিলেন ইতিবাচক। রোহিতের সঙ্গে ৫৫ রানের পর কোহলির সঙ্গে গিলের জুটিতে ওঠে ৩৩ রান।

অসম বাউন্সে হিমশিম খেয়েছেন ব্যাটসম্যানরা
এএফপি

মাঝে ৩ ওভারের মধ্যে গিল ও শ্রেয়াস আইয়ার ফিরলেও লোকেশ রাহুল ও কোহলির জুটিতে ভারত এগোচ্ছিল ভালোভাবেই। রাহুল অবশ্য শুধু সঙ্গই দিচ্ছিলেন কোহলিকে, ৪৩ রানের জুটিতে তাঁর অবদান ছিল ৮ রান। লুঙ্গি এনগিডির করা ৩৪তম ওভারেই শুরু হয় ভারতের অভূতপূর্ব ধসের।

আরও পড়ুন

এনগিডির সে ওভারেই রাহুলের পর ফেরেন রবীন্দ্র জাদেজা ও যশপ্রীত বুমরা। বাড়তি বাউন্সের বলে উইকেটকিপার কাইল ভেরেইনার হাতে ক্যাচ দেন রাহুল। জাদেজা ও বুমরাও বাড়তি বাউন্সের শিকার—তাঁরা দুজনই ক্যাচ দেন গালিতে মার্কো ইয়ানসেনের হাতে। এ ডামাডোলে রাবাদার বলে ক্যাচ দিয়ে থামেন কোহলিও। এরপর মোহাম্মদ সিরাজ হন রানআউট, প্রসিধ কৃষ্ণা দেন ক্যাচ। এনগিডির মতো রাবাদার ওভারেও পড়ে ৩ উইকেট। এবং এত কিছু যে ঘটেছে, এর মধ্যে কোনো রানই করতে পারেনি ভারত!

এক দিনে ২৩ উইকেট—টেস্টের প্রথম দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ
এএফপি

দিনে দ্বিতীয়বারের মতো ব্যাটিং করতে নেমে তুলনামূলক ভালো শুরু পায় দক্ষিণ আফ্রিকা, এলগার ও মার্করামের উদ্বোধনী জুটিতে ওঠে ৩৭ রান। তবে এমন উইকেটে ব্যাটসম্যানদের জীবনের নিশ্চয়তা নেই কোনো। ৮ রানের মধ্যেই তাই স্বাগতিকেরা হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। এলগার ও টনি ডি জর্জি মুকেশের শিকার, স্টাবসকে দিনে দ্বিতীয়বারের মতো আউট করেন বুমরা। বেডিংহামকে নিয়ে মার্করাম অবশ্য অবিচ্ছিন্ন থেকেই শেষ করে কেপটাউনের অদ্ভুত প্রথম দিন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫৫ (ভেরেইনা ১৫; সিরাজ ৬/১৫, মুকেশ ২/০, বুমরা ২/২৫) ও ৬২/৩ (মার্করাম ৩৬*, বেডিংহাম ৭*; মুকেশ ২/২৫, বুমরা ১/২৫)

ভারত ১ম ইনিংস: ১৫৩ (কোহলি ৪৬, রোহিত ৩৯, গিল ৩৬; এনগিডি ৩/৩০, রাবাদা ৩/৩৮, বার্গার ৩/৪২)