এশিয়া কাপে পাকিস্তান ম্যাচ কেন বর্জন করেনি ভারত—ব্যাখ্যা দিল বিসিসিআই
আওয়াজটা গত মাসে তুলেছিলেন ভারতের সাবেক অফ স্পিনার হরভজন সিং। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ভারতের বর্জন করা উচিত কি না—‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এ প্রশ্নের উত্তরে ‘টার্বুনেটর’ বলেছিলেন, ‘রক্ত ও ঘাম একসঙ্গে বইতে পারে না। সীমান্তে লড়াই চলছে আর আমরা ক্রিকেট খেলতে নেমে পড়ছি, এটা হতে পারে না।’
ভারতের আরেক সাবেক ক্রিকেটার কেদার যাদবও গত মাসে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমকে, ‘(এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে) এই ম্যাচটা খেলা উচিত নয় এবং ভারত খেলবে না। আমি এটার নিশ্চয়তা দিতে পারি।’
কিন্তু বাস্তবতা হলো, আরব আমিরাতে আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে ভারত। গ্রুপ পর্বে ১৪ সেপ্টেম্বর মুখোমুখি হবে দুই প্রতিবেশী দেশ। এরপর সুপার ফোরে তাঁদের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। ফাইনালেও মুখোমুখি হতে পারে দুই দল।
হরভজন ও কেদার যাদবদের এমন দাবি তোলার কারণ—গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। মর্মান্তিক এ ঘটনার পর যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চলে গিয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। দুই দেশ একে অপরের ভূখণ্ডে হামলাও চালায়। এরপর সাবেকদের টুর্নামেন্ট ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডসে (ডব্লিউসিএল) পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচ বর্জন করেন ভারতের খেলোয়াড়েরা।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভি’ জানিয়েছে, ভারতীয় ক্রিকেটের সমর্থকদের একটি অংশও মনে করে পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁদের ম্যাচটি খেলা উচিত নয়। তবু কেন ভারত এশিয়া কাপে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে—সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া। এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এটা নিয়ে কথা বলেন তিনি।
সাইকিয়ার দাবি, পাকিস্তানের সঙ্গে খেলাধুলা–সম্পর্কিত বিষয়ে ভারতীয় সরকারের নির্দেশনা মেনেই এশিয়া কাপে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে সূর্যকুমার যাদবের দল, ‘ক্রিকেট কিংবা অন্য যেকোনো খেলায় ভারতীয় দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রীড়া বিভাগ সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন ও নীতিমালা তৈরি করেছে। আমি নিশ্চিত, এই নীতিমালা প্রণয়নের সময় কেন্দ্রীয় সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে জাতীয় স্তরের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো উপকৃত হয়। এই নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে আমরা যেকোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’
সব খেলাতেই ভারত কেন পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়া বর্জন করে না—এ প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন সাইকিয়া। তাঁর ব্যাখ্যা, বহুদলীয় টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে না খেললে ভারত ওই খেলার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিষেধাজ্ঞার সন্মুখীন হতে পারে, ‘কেন্দ্রীয় সরকার সব দিক বিবেচনা করেছে—ফেডারেশনগুলোর স্বার্থ থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের উদ্বেগ পর্যন্ত। একটি টুর্নামেন্ট যদি বহুজাতিক হয়, আর সেখানে কোনো দল অংশ না নেয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট সেই ফেডারেশনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এমন পরিস্থিতি নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের ও তাদের ক্যারিয়ারকে বঞ্চিত করবে।’
এবারের এশিয়া কাপের আনুষ্ঠানিক আয়োজক দেশ ছিল ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরী রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নিজেদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলার জন্য তিন বছরের সমঝোতা চুক্তি হয়। এ কারণে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এবারের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আরব আমিরাতে।