ইংল্যান্ডের চার-ছক্কার জবাবে বাংলাদেশকে নিতে হবে উইকেট

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ধর্মশালায় এভাবেই উইকেট উৎসবে মেতে উঠতে হবে সাকিব–মিরাজদেরছবি: এএফপি

বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের যারা প্রতিপক্ষ, তাদের বিপক্ষে এ বছরই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলার সুযোগ পেয়েছেন সাকিব আল হাসানরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গত জুলাই মাসে ঘরের মাঠে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। মার্চে বাংলাদেশে এসে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে গেছে ইংল্যান্ডও। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার সুযোগ হয়েছে বাংলাদেশের। গতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা কী করতে পারে, তা নিশ্চয়ই ভালোই জানা সাকিবের দলের। কাল ধর্মশালার ম্যাচে রণকৌশলও সেভাবেই সাজানোর সম্ভাবনা।

আগুন আগুন খেলা

ইংলিশদের খেলার ধরনটা সবারই জানা। ইংল্যান্ডই প্রথম দল, যারা ওয়ানডে ক্রিকেটে ধারবাহিকভাবে ওভারপ্রতি ৬-এর বেশি রান রেটে খেলা শুরু করেছে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের ছুঁয়ে ফেলেছে। অস্ট্রেলিয়া, ভারতও পিছিয়ে নেই। তবে ইংলিশ ডিএনএ মানেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট। পরিস্থিতি যেমনই হোক, বাটলাররা মেরে খেলবেনই।

আরও পড়ুন
বাটলারদের আজ এভাবে থামাতে পারবেন সাকিবরা?
ছবি: প্রথম আলো

ব্যাটিংয়ে এমন শক্তিধর দলকে থামানোর উপায় একটাই—উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করে যাওয়া। আগুনের সঙ্গে খেলতে হবে আগুন নিয়েই। নিতে হবে উইকেট, ভাঙতে হবে জুটি। রান তরতরিয়ে বাড়তে থাকলেও বোলিং করতে হবে উইকেটের জন্য, রান থামানোর জন্য নয়।

তাহলে কী করতে হবে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে? বাউন্সার, স্লোয়ার বাউন্সারের সঙ্গে বোলারদের দিতে হবে ইয়র্কার। ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা ‘লেংথ বল হিটার’। তাঁদের এক জায়গায় বলে থিতু হতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে সেটা মোটামুটি করতে পেরেছে। বৃষ্টির কারণে ছোট হয়ে আসা সে ম্যাচে ইংলিশদের যে ৬টি উইকেট বাংলাদেশ নিয়েছে, সেটা ওই আক্রমণাত্মক বোলিংয়েরই ফল। গত ফেব্রুয়ারিতে ইংলিশদের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও বাংলাদেশ হারিয়েছে আক্রমণাত্মক বোলিং করে।

আরও পড়ুন
লিটন দাস আজ পারবেন তো?
ছবি: প্রথম আলো

বল থেমে আসবে তো?

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচে ধর্মশালার উইকেট ছিল কিছুটা অসম গতির। বাংলাদেশ দলের দুই বিশেষজ্ঞ স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ সেই উইকেট থেকে যথেষ্ট টার্ন পেয়েছিলেন। সেটি কাজে লাগিয়ে আফগান ব্যাটিংয়ে ধস নামান দুজন। মন্থর উইকেট পছন্দ মোস্তাফিজুর রহমানেরও। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যদি ভাগ্যক্রমে একই রকম উইকেটে খেলা হয়, তাহলে ‘ইংলিশ হিটিং’ থামানোটা সহজ হবে।

কোন লিটনকে দেখা যাবে আজ

ভালো বলে মারার দক্ষতা লিটন দাসের মতো খুব কম ক্রিকেটারই আছেন বাংলাদেশ দলে। সমস্যা হলো এ মুহূর্তে তিনি সেরা ছন্দে নেই। প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিফটি করলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় রান করতে পারেননি। আগের ১০টি ওয়ানডে ইনিংসেও লিটনের ফিফটি মাত্র একটি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর ব্যাট থেকে রান চাইবে বাংলাদেশ দল। খেলা যেহেতু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, লিটনও চাইবেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে। কে জানে, সেটাই হয়তো তাঁর সেরাটা বের করে আনবে।

আরও পড়ুন
ইংল্যান্ডের লেগ স্পিনার আদিল রশিদ
ছবি: এএফপি

আরেকটি রশিদ-ফ্যাক্টর

বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা লেগ স্পিনে বরাবরই দুর্বল। লেগ স্পিনও খেলতে হয়েছে, গত দুই বছরে এমন অন্তত ১০টি ইনিংস খেলা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ৫০ গড়ে রান আছে একমাত্র মুশফিকুর রহিমের। দ্বিতীয় সেরা মাহমুদউল্লাহর গড় ৩০.৪০। যদিও আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে রশিদ খানের বিপক্ষে ভালোই খেলেছেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা। তবে সেদিন রান রেটের চাপ ছিল না, তাই ঝুঁকিও নিতে হয়নি তেমন।

ইংল্যান্ডের আছেন আদিল রশিদ। তাঁর বোলিংয়ের সৌজন্যে গত মার্চে বাংলাদেশকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। সেই সিরিজে ৩ ম্যাচ খেলে রশিদের শিকার ৮ উইকেট। বাংলাদেশকে এর আগেও ভুগিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচ খেলে রশিদ উইকেট নিয়েছেন ১৯টি। কাল ধর্মশালায়ও রশিদের ১০ ওভার হতে পারে বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি।

কেমন করবেন ওকস-কারেনরা

ইংলিশ বোলিং অনেকটাই গতিনির্ভর। ক্রিস ওকস, স্যাম কারেন, মার্ক উডরাই দলটার মূল শক্তি। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়া রিস টপলিও আছেন এই দলে। কিন্তু এই পেস বোলিং আক্রমণও আহমেদাবাদে ডেভন কনওয়ে–রাচিন রবীন্দ্রর ২৭৩ রানের জুটি ভাঙতে পারেনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁরা কেমন করেন, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা। বাংলাদেশের টপ অর্ডার এমনিতেই নড়বড়ে, ইংলিশ পেসাররাও আছেন আত্মবিশ্বাসের সন্ধানে।

আরও পড়ুন