মুম্বাই হামলার পর প্রথমবার পাকিস্তানে যাচ্ছেন বিসিসিআই সভাপতি

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি রজার বিনি এশিয়া কাপের খেলা দেখতে পাকিস্তানে যাবেনছবি : বিসিসিআই

ভারত-পাকিস্তানের শীতল সম্পর্কের বরফ তাহলে গলতে শুরু করেছে?

ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই ও পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও টিভির খবর কিন্তু সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। পিটিআই ও জিও টিভির দাবি, এশিয়া কাপের ম্যাচ দেখতে পাকিস্তানে যাবেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) সভাপতি রজার বিনি ও সহ–সভাপতি রাজীব শুক্লা।

৩০ আগস্ট শুরু হচ্ছে ‘হাইব্রিড’ মডেলের এশিয়া কাপ। মুলতানে সেদিন উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে পাকিস্তান-নেপাল। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) আমন্ত্রণে বিনি ও শুক্লা দেশটিতে যাবেন আগামী ৪ সেপ্টেম্বর, থাকবেন ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই সময় লাহোরে এশিয়া কাপের দুটি ম্যাচ দেখবেন তাঁরা। একটি ৫ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কার, অন্যটি ৬ সেপ্টেম্বর সুপার ফোর পর্বের প্রথম ম্যাচ। সে ম্যাচে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ হতে পারে বাংলাদেশ অথবা আফগানিস্তান।

পিটিআই বলছে, বিনি ও শুক্লাকে সস্ত্রীক আমন্ত্রণ জানিয়েছে পিসিবি। সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন তাঁরা। তবে জিও টিভি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিনি-শুক্লার সঙ্গে বিসিসিআই সচিব ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভাপতি জয় শাহকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল পিসিবি। তবে জয় শাহ এখনো তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। মানে, তাঁর পাকিস্তানে যাওয়ার ইচ্ছা নেই।

বিনি (বাঁয়ে) ও শুক্লা (ডানে) পাকিস্তানে যেতে রাজি হলেও জয় শাহ (বাঁয়ে) যাবেন না
ছবি : বিসিসিআই

একটি গোপন সূত্র পিটিআইকে জানিয়েছে, বিনি, শুক্লা ও জয় শাহ ২ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখবেন। পরদিন তাঁরা ভারতে ফিরবেন। আর ৪ সেপ্টেম্বর বিনি ও শুক্লা আটারি-ওয়াগাহ সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানের লাহোরে পৌঁছাবেন। ওই দিন রাতে পাঞ্জাবের গভর্নরের বাসভবনে রাতের খাবার খাবেন তাঁরা।

বিনি বিসিসিআইয়ের প্রধান হিসেবে প্রথমবার পাকিস্তানে যেতে চললেও এটা হবে শুক্লার দ্বিতীয় সফর। ২০০৪ সালেও ভারতীয় দলের সফরসঙ্গী হিসেবে গিয়েছিলেন তিনি। সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বাধীন সেই দলটা পাকিস্তানে ওয়ানডে-টেস্ট দুই সিরিজই (তখন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি চালু হয়নি) জিতেছিল।

আরও পড়ুন

আর জিও টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জয় শাহ পাকিস্তানে না গেলেও এসিসির অন্য বোর্ড সদস্যরা যাবেন। এমনকি আইসিসি চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে, প্রধান নির্বাহী জিওফ অ্যালারডাইস ও মহাব্যবস্থাপক ওয়াসিম খানেরও সেই সময় পাকিস্তানে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০০৪ সালে সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে পাকিস্তানে টেস্ট–ওয়ানডে দুই সিরিজই জেতে ভারত
ছবি : এএফপি

জয় শাহ শেষ পর্যন্ত তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলেও বিনি ও শুক্লা যদি পাকিস্তানে যান, তাহলে ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর এটাই হবে বিসিসিআই প্রতিনিধির প্রথম দেশটিতে সফর। সর্বশেষ ২০০৮ সালে এশিয়া কাপ হয়েছিল পাকিস্তানে। সেবার পিসিবির আমন্ত্রণে সেখানে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন বিসিসিআইয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। সেই সময় ভারতীয় বোর্ডের সভাপতি ছিলেন শারদ পাওয়ার।

২০০৮ সালে জুন-জুলাইয়ে হয়েছিল এশিয়া কাপ। এর পাঁচ মাস পরেই ভারতের বৃহত্তম শহর মুম্বাইয়ের অন্তত আটটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলা চালায় পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা। চার দিন ধরে চলা সেই ধ্বংসযজ্ঞে ১৭৫ জন মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন ৩০০ জনেরও বেশি। এর পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দূরত্ব তৈরি হয় দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যেও।

আরও পড়ুন

এবারও এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ নিয়ে বিসিসিআই ও পিসিবি কম জলঘোলা করেনি। জয় শাহ শুরু থেকে বলে এসেছেন, তাঁরা এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে দল পাঠাবেন না। পাল্টা হুমকি দিয়ে পিসিবির সাবেক সভাপতি নাজাম শেঠিও জানান, ভারতীয় দল এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে না এলে তাঁরা ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপ বয়কট করবেন

বিসিসিআইয়ের সর্বশেষ সভাপতি হিসাবে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন শারদ পাওয়ার
ছবি : এএফপি

তবে শেষ পর্যন্ত একটা সমাধানে পৌঁছেছে দুই বোর্ড। এশিয়া কাপে ভারতের সব ম্যাচ শ্রীলঙ্কায় রেখে টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে পিসিবি; যেটার নাম দেওয়া হয়েছে হাইব্রিড মডেল। পাকিস্তান সরকারও বাবর আজম-শাহিন আফ্রিদিদের বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এখন বিনি ও শুক্লার পিসিবির ডাকে সাড়া দেওয়ার খবরে দুই বোর্ডের রেষারেষির সুরাহা হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।