হৃদয়ভাঙার যে পথ ধরে প্রথম ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিতের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের উল্লাসআইসিসি

গ্রায়েম স্মিথের এক শব্দের টুইট—‘অবিশ্বাস্য’। সঙ্গে আগুনের ইমোজি। একটি নয়, তিনটি।

চাইলে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়কের ছোট্ট টুইটেই গল্পের মূল কথাটা বুঝে নিতে পারেন। ‘অবিশ্বাস্য’—কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকা যে আইসিসির টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালের চৌকাঠ পার হয়ে ফাইনালে উঠতে পারে, সে বিশ্বাসটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন স্মিথরা। শুধু স্মিথের দল নয়, তাঁর আগে হানসি ক্রনিয়ে, শন পোলক আর পরে এবি ডি ভিলিয়ার্স, ফাফ ডু প্লেসিরাও পারেননি।

সেমিফাইনাল ‘জুজু’ কাটাতে পারেননি মেয়েরাও। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে তাই দিনে দিনে ফাইনাল হয়ে উঠেছে দূর আকাশের নক্ষত্র, দেখা যায়, কিন্তু ছোঁয়া যায় না। ছেলেদের ক্রিকেট কি মেয়েদের ক্রিকেট, পঞ্চাশ ওভার প্রতিযোগিতা কি কুড়ি ওভার ক্রিকেট—সেমিফাইনাল মানেই যেন দক্ষিণ আফ্রিকার অবধারিত হার। আইসিসি টুর্নামেন্টে ফাইনাল না খেলার অতৃপ্তি নিয়েই ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছে অন্তত দুটি প্রজন্ম।

ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেট মিলিয়ে টানা ১১টি সেমিফাইনালে হৃদয়–ভঙ্গের পর অবশেষে কেটেছে ‘সেমিফাইনাল-গেরো’। শুক্রবার মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৬ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১২তম চেষ্টায় প্রথম ফাইনাল—দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের ইতিহাসগড়া মুহূর্তটি উদ্‌যাপনে তাই গ্রায়েম স্মিথের ওই ‘অবিশ্বাস্য’ প্রতিক্রিয়া।

ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেট মিলিয়ে এই প্রথম আইসিসি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা
রয়টার্স

রোববার নিউল্যান্ডসের ফাইনালে প্রোটিয়াদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। এর আগে পাঁচবার শেষ চার থেকে বিদায় নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েরা। প্রথম ফাইনালের আগে ফিরে দেখা যাক পেছনের সেসব গল্প।

ছেলেদের বিশ্বকাপ ১৯৯২, ইংল্যান্ডের কাছে ১৯ রানে হার

বৃষ্টির কারণে ৪৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করে ২৫২ রান তোলে ইংল্যান্ড। রান তাড়ায় শেষ ১৩ বলে ২২ রান দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। তবে বৃষ্টি এসে প্রোটিয়াদের জয়কে অসম্ভব করে তোলে। ১০ মিনিট বিরতির পর খেলা শুরু হলে পরিবর্তিত লক্ষ্য দাঁড়ায়, ১ বলে দরকার ২২ রান।

ছেলেদের বিশ্বকাপ ১৯৯৯, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টাই

অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাট করে ২১৪ রানের লক্ষ্য দেয়। রান তাড়ায় শেষ চার বলে মাত্র ১ রান দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার, উইকেটে শেষ দুই ব্যাটসম্যান ল্যান্স ক্লুজনার ও অ্যালান ডোনাল্ড। ওভারের চতুর্থ বলে চরম ঝুঁকি নিয়ে সিঙ্গেল নিতে গেলে রান আউট হন ডোনাল্ড। ম্যাচ টাই হলে টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকায় অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে ওঠে, বাদ পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

মেয়েদের বিশ্বকাপ ২০০০, অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৯ উইকেটে হার

প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের সবাই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছেন, কিন্তু একজনও পঞ্চাশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে না পারার খেসারতে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৮০ রানে আটকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বেলিন্ডা ক্লার্ক, লিসা কেইটলি ও কারেন রোলটনদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে মাত্র এক উইকেট হারিয়েই জিতে যায় অস্ট্রেলিয়া, ১৮.৪ ওভার হাতে রেখেই।

আরও পড়ুন

ছেলেদের বিশ্বকাপ ২০০৭, অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে হার

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেইন্ট লুসিয়ায় অনুষ্ঠিত এই সেমিফাইনালে পাত্তাই পায়নি শন পোলকের দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্লেন ম্যাকগ্রার দুর্দান্ত বোলিংয়ের (৫/২৭) মুখে পড়ে ১৪৯ রানে গুটিয়ে যায় প্রোটিয়ারা। ৩১.৩ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া।

ছেলেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০০৯, পাকিস্তানের কাছে ৭ রানে হার

ট্রেন্ট ব্রিজের সেমিফাইনালটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে লক্ষ্য ছিল ১৫০ রানের। রান তাড়ায় শুরুতে মন্থর গতির কারণে শেষ ওভারে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৩ রানের। জেপি ডুমিনির একটি ছয় ও একটি চারের পরও ৭ রানে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

ছেলেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০১৪, ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হার

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ১৭২ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। রান তাড়ায় ভারতকে জয়ের দিকে নিয়ে যান বিরাট কোহলি। তাঁর ৪৪ বলে ৭২ রানের সুবাদে শেষ ওভারের প্রথম বলে জয় নিশ্চিত হয় ভারতের, হেরে যায় ফাফ ডু প্লেসির দল।

আরও পড়ুন

মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০১৪, ইংল্যান্ডের কাছে ৯ উইকেটে হার

এই ম্যাচে আগে ব্যাট করে মাত্র ১০১ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুজন বাদে বাকি নয় ব্যাটসম্যান এক অঙ্কের ভেতরে আউট হন। রান তাড়ায় সহজেই জিতে যায় ইংল্যান্ড।
ছেলেদের বিশ্বকাপ ২০১৫, নিউজিল্যান্ডের কাছে
বৃষ্টির কারণে ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচটিতে নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য ছিল ২৯৮ রান। শেষ দুই বলে যখন ৫ রান দরকার, তখন ডেল স্টেইনকে ছয় মেরে প্রোটিয়াদের হৃদয় ভাঙেন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া গ্রান্ট ইলিয়ট।

মেয়েদের বিশ্বকাপ ২০১৭, ইংল্যান্ডের কাছে ২ উইকেটে হার

এই ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল বেশ। মিগনন ডু প্রিজের ৭৬* ও লরা ভলভার্টের ৬৬ রানে ভর করে ৬ উইকেটে ২১৮ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। রান তাড়ায় শেষ ওভারের চতুর্থ বলে ২ উইকেটে জেতে ইংল্যান্ড।

আরও পড়ুন

মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২০, অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫ রানে হার

প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩৪ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য পরিবর্তিত লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩ ওভারে ৯৭ রান। তবে রানরেটে তাল মেলাতে না পেরে ৫ রানে হেরে যায় প্রোটিয়ারা।

মেয়েদের বিশ্বকাপ ২০২২, ইংল্যান্ডের কাছে ১৩৭ রানে হার

৮ উইকেটে ২৯৩ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। ব্যাট করতে নেমে সোফি এক্লেস্টোনের স্পিনে ধরাশায়ী হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাঁহাতি স্পিনার এক্লেস্টোন নেন ৩৬ রানে ৬ উইকেট, দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় ১৫৬ রানে।

আরও পড়ুন