সুপিরিয়র কমপ্লেক্সে ভোগা ভারতের ওপরই চাপটা বেশি থাকবে

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে শুধু দুই শক্ত প্রতিপক্ষের আরও একটি ম্যাচ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। দুই দলের জন্যই ‘জিততেই হবে’, এটি এমন একটি ম্যাচ। এ কারণেই এই ম্যাচকে ঘিরে এত উত্তাপ, এত উত্তেজনা। আগেও অনেকবার দেখেছি, দুই দলের জন্যই এই ম্যাচ মানে চাপ সামলানোর লড়াই। আমি মনে করি, এবার চাপটা নিজেদের তুলনামূলক বড় দল হিসেবে ভাবা বা সুপিরিয়র কমপ্লেক্সে ভোগা ভারতের ওপরই বেশি থাকবে। 

সম্প্রতি পারফরম্যান্স নিয়ে ভারতকে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের বিষয়টি উল্টো। তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভালো হওয়ায় ওদের তেমন একটা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি। ওয়ানডেতে তাঁরা ১ নম্বর দল। এটি হয়তো ড্রেসিং রুমের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে। স্নায়ুর চাপ ধরে রাখার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন

এই ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে গেলে এবারের এশিয়া কাপের হাইব্রিড মডেলের প্রসঙ্গও আলোচনায় আসবে। ভারতের পাকিস্তান সফর করতে না চাওয়ার কারণেই এই অদ্ভুত মডেলের সৃষ্টি। ভারতের কারণে অন্য দলগুলোকে অনাকাঙ্ক্ষিত সফরের মুখে পড়তে হচ্ছে। ভারত ম্যাচ–পরবর্তী সফর থেকে যেমন বেঁচে গেল, তেমনি গ্রুপ পর্যায়ে একই ভেন্যুতে দুটি ম্যাচ খেলার সুবিধাটুকুও পেল। এটাকে আর যা-ই হোক, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বলার সুযোগ নেই, যা প্রতিটি দল যেকোনো বহুদেশীয় টুর্নামেন্টে আশা করে।

তবে এশিয়া কাপ যেহেতু শুরু হয়ে গেছে, এই আলোচনা নিশ্চয়ই এখন কোনো দলকে সাহায্য করবে না; বরং দলগুলো যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা উতরে ভালো কিছু করতে কন্ডিশনের আলোচনাটা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা তাদের প্রথম ম্যাচ যে ভেন্যুতে খেলেছে, সেই পাল্লেকেলেতেই হবে এ ম্যাচটি। বাংলাদেশের ম্যাচে উইকেটের যে প্রাণহীন অবস্থা ছিল, তা হলে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি হাই-স্কোরিং হওয়ার সম্ভাবনা কম। 

অনুশীলনে পাকিস্তান দল
ছবি: টুইটার

ধীরগতিতে হলেও ইনিংসের প্রথম দিকে জুটি গড়া দুই দলের জন্যই জরুরি হয়ে দাঁড়াবে। ভারতের স্পিন তুলনামূলক বেশি সমৃদ্ধ। এই উইকেটে সেটি ভারতকে একটু এগিয়ে রাখবে। অন্যদিকে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা এ ধরনের উইকেট পছন্দ করেন না। তবে বিরাট কিংবা রোহিত শর্মা জ্বলে উঠলে তা সামাল দেওয়া পাকিস্তানের পক্ষে সহজ হবে না। অন্যদিকে পাকিস্তানের ইমাম, বাবর, রিজওয়ানের মধ্যে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার সহজাত মানসিকতা আছে। তবে এর সবই নির্ভর করবে প্রত্যেকেই নিজেদের আবেগ কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তার ওপর।

আরও পড়ুন

উইকেট নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে দুই দলই হয়তো রান তাড়া করতে চাইবে। এটি আদর্শ ব্যাটিং উইকেট নয়। তাই টস জিতে দুই দলই ফিল্ডিং করতে চাইবে। পাশাপাশি বৃষ্টির ব্যাপারটি তো আছেই। দুই দলের বোলিং শক্তি বিশেষ করে পেস বোলিং অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বুমরা ফিরে আসায় ভারতের পেস বোলিং বেশ ধারালো হয়েছে। আর শাহিন, হারিস ও নাসিমকে নিয়ে পাকিস্তানের পেস আক্রমণ তো বিশ্বের অন্যতম সেরাই। 

দুই দলের ব্যাটিংয়ের আলোচনায় যদি আসি, সেখানে টপ অর্ডার–নির্ভরতা খুব বেশি দেখতে পাই। বাবররা যেমন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ওপর বেশি নির্ভর, তেমনি রোহিতরাও। তবে সেদিন নেপালের বিপক্ষে ইফতিখার আহমেদের সেঞ্চুরি পাকিস্তান মিডল অর্ডারকে আত্মবিশ্বাস দেবে। ভারতীয় দলে যোগ দিচ্ছেন শ্রেয়াস আইয়ার। মিডল অর্ডারে তাঁর ফেরা নিশ্চিতভাবেই ভারতের জন্য বড় স্বস্তির খবর। তবে দলের সমন্বয়, দক্ষতা, ক্রিকেটীয় সামর্থ্য…ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে এসবের চেয়ে বড় হয়ে  চাপ সামলানোর ব্যাপারটা। সেই চাপ কারা কীভাবে সামলে পারফর্ম করে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। ক্রিকেট অনুরাগী হিসেবে যা আমাদের সবার জন্যই হবে দারুণ এক অভিজ্ঞতা।