ক্লাব–বিসিবি দ্বন্দ্বে সমাধান কি বিকল্প টুর্নামেন্ট
‘খেলা এবার মাঠে গড়াতেই হবে’—দৃঢ় কণ্ঠে কাল কথাটা বললেন বিসিবির পরিচালক ও সিসিডিএমের ভাইস চেয়ারম্যান ফায়াজুর রহমান। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে লিগ না খেলার ঘোষণা দেওয়া ঢাকার বিদ্রোহী ৪৫টি ক্লাবের সঙ্গে কয়েক দফায় সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে বিসিবি, তবে এবার আর ব্যর্থতা চান না ফায়াজুর।
তৃতীয় বিভাগ দিয়েই প্রতিবছর ঘরোয়া ক্রিকেটের মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু বিদ্রোহী ৪৫টি ক্লাবের মধ্যে তৃতীয় বিভাগের ক্লাবই ১৪টি, প্রথম বিভাগের ক্লাব ৮টি। প্রথম বিভাগের বেশির ভাগ ক্লাব (২০টির মধ্যে ১২টি) লিগ আয়োজনের পক্ষে থাকায় এবার আগে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট আয়োজনের চেষ্টা করছে বিসিবি। কিন্তু সেটাও পারছে কই!
বিদ্রোহী ক্লাবগুলো লিগ বয়কটের সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকায় দুবার তারিখ ঘোষণা করেও খেলা শুরু করা যায়নি। তৃতীয়বারের মতো লিগ শুরুর তারিখ ঠিক হয়েছে আগামীকাল।
তবে ৪৫ ক্লাবের অবস্থান এখনো আগের জায়গাতেই। প্রথম বিভাগের ২০টি ক্লাবের মধ্যে দলবদলে অংশ না নেওয়া ৮ ক্লাবের লিগে খেলার সম্ভাবনা নেই। প্রথম বিভাগের বিদ্রোহী ৮ ক্লাবের নেতৃত্বে থাকা সংগঠক ও আম্বার স্পোর্টিং ক্লাবের কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান কাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিসিবির প্রধান নির্বাহীকে দেওয়া চিঠিতে আগেই জানিয়ে দিয়েছি যে এই অবৈধ বোর্ডের অধীন খেলব না। এখনো সেই সিদ্ধান্তে অনড় আছি। আমাদের (৮ ক্লাব) লিগে অংশ নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
পরশু আনুষ্ঠানিকভাবে সূচি ঘোষণা করা হলেও লিগ যে শেষ পর্যন্ত আয়োজন সম্ভব না–ও হতে পারে, এই বাস্তবতা বুঝতে পারছে বিসিবিও। বিদ্রোহী ক্লাবগুলোর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে লিগ আয়োজন করতে গেলে আসতে পারে আইনি বাধা। সূত্র জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত লিগ আয়োজন করতে না পারলে বা খেলা শুরু করেও লিগ বন্ধ করে দিতে হলে বিসিবি এগুবে ‘প্ল্যান-বি’ নিয়ে।
খেলোয়াড়দের খেলা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে বিকল্প কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে তখন বোর্ড। এমন চিন্তার আরেকটি কারণ, ক্লাবগুলোকে ছাড়া দেশের ক্রিকেট চলতে পারে কি না, তা দেখা। উদ্যোগটি সফল হলে খেলাটাকে জিম্মি করা ক্লাবগুলোকেও একটা বার্তা দেওয়া যাবে বলে মনে করে বোর্ড।
আমিনুল ইসলামের পরিচালনা পর্ষদে ক্লাব থেকে আসা ১২ পরিচালকের সবাই শুরুতে এমন চিন্তায় সায় না দিলেও এখন তাঁদের মতও বদলাচ্ছে। সংগঠকদের দলাদলির কারণে ক্রিকেটাররা জিম্মি হোক, সেটি চাইছেন না তাঁরাও। গোল্ডেন ইগলস ক্রিকেট ক্লাবের কাউন্সিলর হিসেবে বিসিবির পরিচালক হওয়া মোখছেদুল কামাল যেমন বলেন, ‘আমরা চাই লিগ হোক। কিন্তু খেলাটাই আমাদের কাছে প্রধান বিষয়। যদি লিগ না হয়, তখন বিকল্প না খুঁজে উপায় থাকবে না।’
বিকল্প টুর্নামেন্টের ভাবনা নিয়ে কাল সিসিডিএমের প্রধান আদনান রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি কোনোভাবেই না হয়, তাহলে এ বছর লিগ স্থগিত করে অন্য কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করে খেলোয়াড়দের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এ ছাড়া আমাদের কাছে কোনো পথ নেই। আমরা নানাভাবে চেষ্টা করেছি, টাকা বাড়িয়েছি, কিন্তু তারা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।’
ক্লাবগুলোকে বিসিবির আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার রীতি চলে আসছে অনেক বছর ধরেই। অবশ্য বিসিবির অনুদান নিয়ে লিগ খেলেও ক্রিকেটারদের পাওনা টাকা ঠিকঠাক না দেওয়ার নজির আছে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে। তারপরও এই ধারা এখনো চলমান, আমিনুল ইসলামের বোর্ডও পারেনি তা থেকে বের হতে। বরং সব পর্যায়ের ক্লাবের জন্য বর্তমান বোর্ড প্রণোদনা বাড়িয়েছে ৫০ শতাংশ।
প্রথম বিভাগের ক্লাবগুলো এত দিন পেত ৯ লাখ টাকা, এবার পাচ্ছে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা করে। সঙ্গে খেলার পোষাকের জন্য পাবে আরও দেড় লাখ টাকা। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, লিগ না খেলার সিদ্ধান্তে অটল ক্লাবগুলোর মধ্যে থাকা প্রথম বিভাগের ক্লাব পারটেক্স প্রণোদনার টাকাটা নিয়েছে ঠিকই। না খেললে টাকা কেন নিলেন, জানতে চাইলে পারটেক্সের কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনের ব্যাখ্যা, ‘আমরা ভেবেছিলাম সবাইকে নিয়ে লিগ হবে, এ জন্য টাকা নিয়েছিলাম। এখন যেহেতু খেলব না, টাকা ফেরত দিয়ে দেব।’
লিগ না হলে বিকল্প টুর্নামেন্টে আপত্তি থাকার কথা নয় ক্রিকেটারদের। ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবের সভাপতি মোহাম্মদ মিঠুন বলেন, ‘আমি ক্রিকেটার হিসেবে দুটি জিনিস চাই—আর্থিক দিক ও খেলার নিশ্চয়তা। সেটি হলে আমি কোন লিগে বা কোন দলের হয়ে খেলছি, তাতে কিছু যায় আসে না।’