অসম্ভবকে সম্ভব করল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন। এক দিন আগেও বাংলাদেশ দলের যে অবস্থা ছিল, আর এশিয়া কাপে ভারতের যে অবস্থান ছিল, সেই বিবেচনায় ভারতের বিপক্ষে জয় প্রত্যাশিত ছিল না। ছন্দে থাকা রোহিত শার্মার দলকে হারানো সব বিবেচনায় খুবই কঠিন মনে হচ্ছিল। কিন্তু সেই দলটাকেই বাংলাদেশ ব্যাটে, বলে ও ফিল্ডিংয়ে সুযোগই দেয়নি। আর তাতেই ধরা দিয়েছে মনে রাখার মতো একটি জয়।

এশিয়া কাপের পারফরম্যান্সের কারণে দলের মনোবলের যে অবস্থা হয়েছিল, গতকালের জয়ে সে হতাশার মেঘ নিশ্চয়ই কেটে যাবে। নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে আশার প্রদীপ যেন আবার জ্বলে উঠল। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের সামর্থ্যটাও আরও একবার সবার সামনে এল।

আরও পড়ুন

কাল বাংলাদেশ দলের যে কয়জনকে এখন পর্যন্ত সুযোগ দিতে পারেনি, তাঁদের সবাইকেই সুযোগ দিয়েছে। এটা আমার ভালো লেগেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তানজিদ হাসানকে দেখতে চাইছিলাম। তিনি দারুণ দুটি কাভার ড্রাইভে ভালো শুরু করলেও এক দিনের ক্রিকেটের যে মেজাজ, তা ধরে রাখতে পারেননি। লিটনের কাছে আরও ভালো কিছু আশা করেছিলাম। তিনি অসুস্থতা থেকে ফেরার পর তাঁর সেরা ছন্দে নেই। কাল অবশ্য ভালো একটি বলে আউট হয়েছেন। এনামুলও আউট হয়েছেন তড়িঘড়ি করতে গিয়ে।

সাকিব–হৃদয়ের জুটিতে ব্যাটিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ
ছবি: এএফপি

সেখান থেকে অধিনায়ক সাকিব ও তাওহিদ হৃদয় যা করলেন, তা এশিয়া কাপের সুপার ফোরে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অধ্যায়। দুজনকে দেখে মনে হচ্ছিল আগের লড়াকু বাংলাদেশকে দেখছি। দুজনই অবশ্য আউট হয়েছেন অসময়ে। সেখান থেকে বাংলাদেশের রানটা ২৬০–এর ঘরে যাবে, সেটা নিশ্চয়ই কেউই কল্পনা করেনি। কিন্তু কাল নাসুমের নেতৃত্বে দারুণ খেলেছেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। শেখ মেহেদী ও তানজিম হাসানও ভালো করেছেন। এটাও ঠিক, ওই সময় কন্ডিশনটা ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ মনে হচ্ছিল। তবে সে সুবিধাটা কাজে লাগিয়ে আরও ৬০-৭০ রান যোগ করার কৃতিত্বটা তাঁদের দিতেই হয়।

আরও পড়ুন

ওই বাড়তি রানের কারণে বাংলাদেশকে বোলিংয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল। অভিষিক্ত তানজিমের প্রথম স্পেলটা আমার খুবই ভালো লেগেছে। তাঁর রানআপ, ডেলিভারি, নতুন বলে মুভমেন্ট, শরীরী ভাষা—সবকিছুতেই আক্রমণাত্মক মনোভাবটা ফুটে ওঠে। কিন্তু অন্য প্রান্তে মোস্তাফিজকে খুব অর্ডিনারি লেগেছে। আমাদের মূল বোলারদের কেউ একজন সেখানে থাকলে হয়তো দুই দিক থেকেই উইকেট বের হতো। ম্যাচটাও হয়তো শেষ ওভারে গড়াত না।

মিরাজ–নাসুমরা ডট বল করে ভারতের ওপর চাপ তৈরি করেছিলেন
ছবি: এএফপি

তবে সে ক্ষতিটা পুষিয়ে দিয়েছেন স্পিনাররা। একের পর এক ডট বলে চাপ সৃষ্টি করে ভারতীয়দের আউট করতে পেরেছেন সাকিব-নাসুমরা। লোকেশ রাহুল, ঈশান কিষানের উইকেটের উদাহরণ দিই, দুজনই আউট হয়েছেন রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে। সূর্যকুমারকে আউট করার পেছনে সাকিবের চতুর মস্তিষ্ক খুব কাজে দিয়েছে। এর মধ্যেও শুবমান গিল দেখিয়েছেন তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্য। এমন চাপের মুখে তিনি সে সেঞ্চুরিটা করেছেন, সেটা নিয়ে নিশ্চয়ই তিনি গর্বিত হবেন।

আরও পড়ুন

হতাশও হবেন নিশ্চয়ই। কারণ, তিনি নিশ্চয়ই ম্যাচটা শেষ করে আসার লক্ষ্য নিয়েই খেলছিলেন। কিন্তু শেখ মেহেদীর বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে তা হয়নি। গিল আউট হলেও ফিনিশার হিসেবে সুযোগ পাওয়া অক্ষর প্যাটেল লড়াই করে গেছেন। তবে মোস্তাফিজের অভিজ্ঞতার কাছে তিনিও শেষ পর্যন্ত ধরাশায়ী হয়েছেন। ওই আউটটা ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের একটি।

অভিষেকেই দারুণ বোলিং করেছেন তানজিম
ছবি: এএফপি

আরেক পেসার তানজিমের চাপের মুখে পারফর্ম করার দক্ষতার কথাটা আলাদা করে বলতেই হয়। ভেরি ইম্প্রেসিভ। যত রানই হোক, শেষ ওভারে বোলিং করা কঠিনতম কাজগুলোর একটি। তা তিনি করেছে কী দারুণ দক্ষতায়! বাংলাদেশ হয়তো আরও একজন পেসার পেয়ে গেল, যার মধ্যে আছে ভবিষ্যতে অনেক দূর যাওয়ার রসদ। ভারতের বিপক্ষে এমন একটি ম্যাচে কত অর্জনই তো পেল বাংলাদেশ দল। 

  • গাজী আশরাফ হোসেন, সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক