শোয়েব আখতার বললেন, ‘আফগানরা আমাদের ভাই, ভাইদের কাছে মার খেয়েছি’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই পাকিস্তান দলকে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শোয়েব আখতার। তাঁর সেই শঙ্কা সত্যি করে আফগানদের কাছে গতকাল হেরেই গেছে পাকিস্তান। চেন্নাইয়ে পাকিস্তানের দেওয়া ২৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৮ উইকেটে জিতেছে আফগানিস্তান।
আফগানদের বিপক্ষে হারের পর নিজের হতাশার কথা জানিয়েছেন শোয়েব। ‘আফগান ভাইদের’ বিপক্ষে হারকে সহজভাবে নিলেও নিজেদের খেলার এবং খেলোয়াড়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এত কিছুর পরও অবশ্য আশা ছাড়ছেন না ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’। বাবরকে ’৯২-এর ইমরান খান এবং শাহিন আফ্রিদিকে ওয়াসিম আকরাম হয়ে ওঠার তাগিদও দিয়েছেন শোয়েব।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে হতাশ শোয়েব কথা শুরু করেন এভাবে, ‘কী আর বলা যায়, কিছুই না। প্রথমত আফগানিস্তানকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আফগানরা আমাদের ভাই, ভাইদের কাছে মার খেয়েছি, যেটা ঠিক আছে। আমি জাদরান, গুরবাজ এবং ইব্রাহিমদের জন্য অনেক খুশি। শেষ পর্যন্ত তারা পরিপক্বতা দেখিয়েছে। এই পরিপক্বতা তাদের কাছ থেকে আমি চাচ্ছিলাম। চেয়েছিলাম ব্যাটিংয়ে যেন তাড়াহুড়া না করে। নিজেরা যেন সময় নেয়। আজ তারা সেটা করেছে। তাদের ম্যানেজমেন্টে থাকা অজয় জাদেজা এবং জোনাথন ট্রটকে অভিবাদন।’
এ সময় পাকিস্তান ক্রিকেটের পতন এবং আফগানিস্তান ক্রিকেটের উত্থানকে তুলনা করে শোয়েব বলেছেন, ‘আফগানিস্তান গত ৫০ বছর কোন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেছে সেটা লক্ষ করুন। তাদের কোনো অবকাঠামো নেই, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নেই এবং ৩-৪ বছর ধরে বাজে পরিস্থিতির ভেতর দিয়েও গেছে। এরপরও তারা এসে আপনাদের (পাকিস্তানকে) ৮ উইকেটে হারিয়েছে। তারা এখন পাকিস্তানকে দেখাচ্ছে যে ক্রিকেট কীভাবে খেলতে হয়। দেখুন, আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। আর এখন আফগানিস্তান অর্থনীতিতে যেমন আমাদের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, খেলাতেও তাই। আজ তাদের ব্যাটিংও আমাদের চেয়ে ভালো হয়েছে। সাবাস আফগানিস্তান। আমি তোমাদের জন্য অনেক খুশি। আফগানিস্তানের মাঝে অনেক উদ্যোম ও প্রাণশক্তি আছে। তারা আরেকটি কাজ ভালো করেছে, সঠিক কাজের জন্য সঠিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে।’
এ সময় ক্রিকেটারদের পাশাপাশি বোর্ডকেও একহাত নিয়েছেন শোয়েব, ‘পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে গড়পড়তা মানুষদের দায়িত্ব দিয়ে দিয়ে এখন ফলও গড়পড়তা আসতে শুরু করেছে। দেশের অর্থনীতির সঙ্গে ক্রিকেট অর্থনীতিও ধ্বংস হয়ে গেছে। কী এমন ব্র্যান্ড এখন অবশিষ্ট আছে? আপনারা আমাকে বলুন, এখন অনুপ্রেরণা দিতে পারে এমন কোন ক্রিকেটারটি আছে। আমি তো ওয়াকার ইউনিসকে, ওয়াসিম আকরাম এবং ইমরান খানকে দেখেছি। এখনকার দলে এমন অনুপ্রেরণাদায়ক ক্রিকেটার কে আছে, যাকে দেখে আপনি ক্রিকেট খেলতে অনুপ্রাণিত হবেন? মানুষ কেন এখনো আমাদের ভিডিও দেখে? কারণ, আমরা অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো ক্রিকেটার ছিলাম। আমরা প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছি। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের কথা বাদ দেন, ক্রিকেট বোর্ডের কথা বলুন, তারা যেমন, সেটাই পারফরম্যান্সে ফুটে উঠেছে।’
এত কিছুর পরও দলকে সমর্থন করে যাবেন জানিয়ে শোয়েব বলেছেন, ‘আমি পাকিস্তানের হয়ে খেলেছি, আমার হৃদয়ে এখন রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমি খেলোয়াড়দের আজকেও সমর্থন করব। আজ যদি আমি ওখানে থাকতাম, তবে বাবরকে বলতাম, সবচেয়ে খারাপটা তো হয়েই গেছে। এখন আমাদের সামনে চার দল আছে এবং তাদের আমি কোনোভাবে ছাড়ব না। বাবরের সঙ্গে থাকলে আমি এটাই তাকে বলতাম। মন খুলে খেলতে বলতাম। পাকিস্তান দল ৮০-৯০–এর স্ট্রাইক রেটে খেলছে। আর গুরবাজ ১২১-১২২ স্ট্রাইক রেটে খেলছে। এভাবে হলে কীভাবে জিতবে!’
নিজের আলাপের শেষে শোয়েব বাবরকে ইমরান এবং শাহিনকে আকরাম হওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘আমি বাবর হলে পরের চার দলকে ছাড়তাম না। কিন্তু তার কি সেই সাহস, প্রাণশক্তি এবং সামর্থ্য আছে? সে কি ১৯৯২ সালের ইমরান খান হতে পারবে? শাহিন শাহ আফ্রিদি কি ওয়াসিম আকরাম হতে পারবে, হারিস রউফ কি আকিব জাভেদ হতে পারবে বা শাদাব খান মোশতাক আহমেদ হতে পারবে? এই দল কি সেটা ফেরাতে পারবে? আমার মনে হয় তারা পারবে। তারা কি সেটা বিশ্বাস করে? আল্লাহই ভালো বলতে পারবেন।’