হাত না মেলানো, বর্জনের হুমকি আর ম্যাচ রেফারির ক্ষমাপ্রার্থনা—এরপর সামনে কী

১৪ সেপ্টেম্বরের এক সপ্তাহ পর আবারও মুখোমুখি হবে ভারত–পাকিস্তানরয়টার্স

সন্ধ্যার পর দুবাইয়ের রাস্তায় ব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুগুণ। পরশু সন্ধ্যায়ও যখন পাকিস্তান–সংযুক্ত আরব আমিরাত ম্যাচ নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা, তখন সেটিই পাকিস্তান দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ কর্মকর্তাকে জানিয়েছিল দুবাইয়ের পুলিশ। পরে প্রায় ৪০ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে তারা মাঠে গেছে, ম্যাচও খেলেছে।

এক দল মাঠে এসেছে ঠিক সময়ে, অন্য দল ম্যাচ রেফারি নিয়ে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থেকে দেরিতে হোটেল ছাড়ায় ম্যাচ শুরু হয়েছে এক ঘণ্টা পর, এ রকম বিচিত্র ঘটনা সম্ভবত এশিয়া কাপের মতো টুর্নামেন্টেই কেবল কল্পনা করা যায়। অবশ্য এশিয়া কাপের অদ্ভুত কিছু করে দেখানোর ক্ষমতা নতুন কিছু নয়।

ভারত আর পাকিস্তান চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী দেশ, যাদের প্রায় সব পর্যায়েই মুখ দেখাদেখি বন্ধ। গত মে মাসের রাজনৈতিক উত্তাপে খেলা বন্ধ করতে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এমন দুটি দলকেও বারবার একসঙ্গে মাঠে নামিয়ে দিতে পারে এই টুর্নামেন্ট।

এবারের এশিয়া কাপ মুখোমুখি বসিয়েছে আদর্শিকভাবে বিপরীত মেরুতে থাকা সাবেক দুই পিসিবি সভাপতি নাজাম শেঠি আর রমিজ রাজাকেও। উদ্দেশ্যটা যে ছিল এক! অ্যান্ডি পাইক্রফটকে পাকিস্তানের ম্যাচে ম্যাচ রেফারি থাকতে না দেওয়া। পিসিবি ও এসিসির প্রধান মহসিন নাকভীর ডাকে সাড়ে দিয়ে তাঁরাও পরশু পরামর্শ সভায় বসেছিলেন লাহোরে।

লাহোরে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে মহসিন নাকভি (মাঝে), নাজাম শেঠি (বাঁয়ে) ও রমিজ রাজা (ডানে)
পিসিবি

মাঠে যতই একপেশে লড়াই হোক, মাঠের বাইরে নানা নাটকে ভরপুর থাকে এশিয়া কাপের চিত্রনাট্য, বরাবরই যার কেন্দ্রবিন্দুতে ভারত–পাকিস্তান। ২১ সেপ্টেম্বর সে রকমই আরেকটি ঘটনার সাক্ষী হতে হবে সবাইকে, যেদিন এবারের এশিয়া কাপে দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি হবে ভারত–পাকিস্তান।

আরও পড়ুন

গত পরশু ক্রিকেট সাক্ষী হয়েছে বিরল একটা ঘটনার। ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে টসের সময় অধিনায়কদের হাত না মেলাতে বলে যে ঘটনার সূত্রপাত করিয়েছিলেন, সেটির ইতি ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট নিজেই টেনেছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আগা, প্রধান কোচ মাইক হেসন আর ম্যানেজার নাদিমের কাছে ক্ষমা চেয়ে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের অন্তত সেটাই দাবি। আইসিসি বা পাইক্রফট এই দাবির বিপরীতে কোনো বক্তব্য দেননি।

নানা নাটকীয়তার পর অ্যান্ডি পাইক্রফটই পাকিস্তান–আমিরাত ম্যাচে রেফারির দায়িত্বে ছিলেন
এএফপি

ক্রিকেটে ম্যাচ রেফারির ভূমিকা বেশির ভাগ সময়ই তেমন দৃশ্যমান নয়। তবে ম্যাচ শেষে তাঁর কলমেই মূল্যায়ন হয় সবকিছুর। ম্যাচে কোনো খেলোয়াড় এমনকি আম্পায়ারও যদি শৃঙ্খলাভঙ্গ করেন; তাঁর বিরুদ্ধেও শাস্তির সুপারিশ করেন ম্যাচ রেফারি। অথচ ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে এই দায়িত্বে থাকা পাইক্রফট নাকি নিজেই উল্টো পাকিস্তানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন!

শেষ পর্যন্ত পরে পাইক্রফটকে ম্যাচ রেফারি রেখেই পাকিস্তান–সংযুক্ত আরব আমিরাত ম্যাচ হয়েছে। যেখানে জিতে সুপার ফোরে জায়গা নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান, নিশ্চিত হয়েছে ভারতের সঙ্গে তাদের আরও একটি ম্যাচও। টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতের কাছে ৭ উইকেটে হেরে গিয়েছিল পাকিস্তান।

আরও পড়ুন

ওই ম্যাচের পরই পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটারদের হাত না মেলানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরও একবার উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে বাইরের লড়াই। ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব অবশ্য জানিয়েছেন, সরকার ও বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করেই নাকি হাত না মেলানোর সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন তাঁরা।

এসব বড় আসরে ক্রিকেটাররা অবশ্য এখন অনেকটাই গৌণ হয়ে পড়েছেন। রাজনৈতিক মারপ্যাঁচের সঙ্গে আর্থিক লাভটাই মুখ্য হয়ে ওঠে অনেক সময়। যতই কথা কিংবা অন্য কোনোভাবে লড়াই ছড়াক, এশিয়া কাপের ছকটা তো এমনভাবেই সাজিয়ে রাখা যেখানে অন্তত দুবার, এমনকি সম্ভব হলে তিনবার ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ খেলানো যায়।

এশিয়া কাপে দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ভারত–পাকিস্তান
এএফপি

তাতে আর্থিক লাভের সঙ্গে মাঠেও উত্তাপ বাড়ানো যায়, দর্শকদের আগ্রহের পরিধিতে ঢোকানো যায় টুর্নামেন্টটিকে। এশিয়া কাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিমের দৃষ্টিতে অবশ্য এই উত্তাপ শুধুই ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ, ‘এসব পরিস্থিতি কেবল ভারত আর পাকিস্তানেই। আমিরাতের প্রতিদিনকার জীবন, ক্রিকেট কিংবা বন্ধুত্বে এসবের কোনো স্থান নেই।’

ওয়াসিম যেটি বলেছেন, সেটিই হয়তো আদর্শ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এশিয়া কাপ এখন আবারও অপেক্ষায় আরেকটি ভারত–পাকিস্তান দ্বৈরথের, যেটির উত্তাপ থেকে যায় খেলা শেষেও। ২১ সেপ্টেম্বরের ম্যাচ নতুন কী উত্তাপ ছড়ায়, এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।

আরও পড়ুন