‘ভারত দুবাইয়ের বাইরে খেললেও চ্যাম্পিয়ন হতো’

২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিতেছে ভারতরয়টার্স

আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষ হয়েছে দুই দিন আগে; কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে। সব ম্যাচ দুবাইয়ে খেলায় বিশাল সুবিধা পেয়েছে ভারত—টুর্নামেন্ট শুরুর পর থেকেই এমন দাবি জানিয়ে এসেছেন কেউ কেউ।

ভারতীয় দল সব ম্যাচ এক ভেন্যুতে খেলায় কোনো রকম ভ্রমণঝক্কি পোহাতে হয়নি। সেখানকার কন্ডিশন ও পিচ সম্পর্কেও তারা স্বচ্ছ ধারণা পেয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগকারীর তালিকায় আছেন ইংল্যান্ডের সাবেক তিন ক্রিকেটার ডেভিড লয়েড, মাইকেল আথারটন ও নাসের হুসেইন এবং অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স

শেষ পর্যন্ত ভারতই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দুবাইয়ে গত রোববারের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে রোহিত শর্মার দল। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ ও সেমিফাইনালেও প্রতিপক্ষরা ভারতীয়দের খুব একটা পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি।  

কিন্তু দুই কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার ও ওয়াসিম আকরাম মনে করেন, ভারতের এই দল এতটাই শক্তিশালী ও ভারসাম্যপূর্ণ যে দুবাইয়ের বাইরে খেললেও তারাই চ্যাম্পিয়ন হতো।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত নিজেদের সব ম্যাচ দুবাইয়ে খেলেছে
আইসিসি

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে গাভাস্কার বলেছেন, ‘এটা ভারতীয় দলের দুবাইয়ে খেলার প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা তারা কতটা ভালো খেলেছে। যদি তারা আলাদা ভেন্যুতে খেলত, তবু এটা করে দেখাত। (আইসিসি আয়োজিত সাদা বলের টুর্নামেন্টে) ওরা সর্বশেষ ২৩ ম্যাচের ২২টিতেই জিতেছে। এ সময়ে তারা ভিন্ন কন্ডিশনে, ভিন্ন পিচে খেলেছে। সেখানেও তো তারা জিতেছে। তাই আমি বলব, ভারতকে যদি (চ্যাম্পিয়নস ট্রফির) পাঁচটা ম্যাচ দুবাইয়ের বাইরে খেলতে হতো, এর পরও ফল একই হতো। তারাই চ্যাম্পিয়ন হতো।’

সাদা বলের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে গত দুই বছরে ভারতের একমাত্র হারটি নিজেদের মাটিতেই, আহমেদাবাদে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে। সেই দুঃখ ভুলতে খুব বেশি সময় লাগেনি ভারতের। গত বছর তারা টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। এবার জিতল চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।

আরও পড়ুন

রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দলটাই ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী কি না, এমন প্রশ্নে ’৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী গাভাস্কারের উত্তর, ‘শুধু ভারতের নয়, আমার তো মনে হয় এই মুহূর্তে তারাই সাদা বলের বিশ্বসেরা দল। যেকোনো কন্ডিশনের সঙ্গে তারা মানিয়ে নিতে পারে, পারফর্ম করতে পারে। গত দুই বছরে তারা মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছে। এটাই বলে দিচ্ছে, তারা কতটা প্রভাব বিস্তার করে খেলেছে।’

রোহিত শর্মা নেতৃত্বগুণকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সুনীল গাভাস্কার
আইসিসি

মহেন্দ্র সিং ধোনির পর ভারতের দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে একাধিক বৈশ্বিক শিরোপা জিতিয়েছেন রোহিত শর্মা। তাঁর নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেছেন গাভাস্কার, ‘ভারত একজন চমৎকার অধিনায়ক পেয়েছে। কখন কাকে ব্যবহার করতে হবে, সেটা রোহিত খুব ভালোভাবে করেছে। ব্যাটিং অর্ডার অদলবদল করা, ফিল্ডারদের সঠিক জায়গায় রাখা, বোলিংয়ে পরিবর্তন আনা—ওর সব সিদ্ধান্তই ছিল অনেক উঁচু মানের, যেটা অন্য দলগুলোর মধ্যে ছিল না।’

ইউটিউব চ্যানেল স্পোর্টস সেন্ট্রালের ‘ড্রেসিং রুম’ অনুষ্ঠানে ওয়াসিম আকরামও গাভাস্কারের সুরে সুর মিলিয়েছেন, ‘ভারতের এই দলটা বিশ্বের যেকোনো জায়গায় (চ্যাম্পিয়নস ট্রফি) জিতত। হ্যাঁ, এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু একবার যখন ঠিক হয়েই গেছে ভারত নিজেদের সব ম্যাচ দুবাইয়ে খেলবে, তখন আর কথা থাকতে পারে না। ওরা পাকিস্তানে খেললেও জিতত। ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ওরা কোনো ম্যাচ না হেরেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। চ্যাম্পিয়নসও ট্রফিতে ওরা কোনো ম্যাচ হারেনি। যা দলের গভীরতা ও নেতৃত্বের দক্ষতার জানান দিয়েছে।’

টুর্নামেন্টজুড়ে দাপট দেখিয়েছে ভারত
রয়টার্স

সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মূল আয়োজক পাকিস্তান হলেও রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে দেশটিতে রোহিত–কোহলিদের পাঠায়নি ভারত সরকার। টুর্নামেন্টের ভেন্যু নির্ধারণ নিয়ে অনেক জলঘোলার পর সমাধান হয়ে আসে হাইব্রিড মডেল। এই মডেল অনুযায়ী, ভারত নিজেদের ম্যাচগুলো খেলেছে দুবাইয়ে। অন্য সাত দল খেলেছে পাকিস্তানে।