সেদিন ৪ মিনিট আগে খবর পেয়েছিলেন পাইক্রফট, এরপর দুবাইয়ে যা ঘটেছিল
ম্যাচটা ছিল ভারত–পাকিস্তানের, যেখানে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাননি ভারতের ক্রিকেটাররা। কিন্তু ম্যাচের পর আলোচিত চরিত্র হয়ে গেলেন ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট। পাকিস্তানের অভিযোগ—ভারতীয়দের হাত না মেলানোর সেই ঘটনায় নিয়ম ভেঙেছেন পাইক্রফট। তাঁকে সরানোর দাবিও তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
যা একপর্যায়ে পাকিস্তানের এশিয়া কাপ বর্জনের হুমকিতেও গড়ায়, শেষ পর্যন্ত তা না হলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে পাকিস্তানের পরের ম্যাচটা শুরু হয়েছে এক ঘণ্টার দেরিতে। পরে পিসিবি দাবি করেছে, হাত না মেলানোর ঘটনায় পাকিস্তানের অধিনায়ক ও টিম ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন পাইক্রফট।
কিন্তু ঘটনার শুরু যেখান থেকে, সেখানে আসলে কী ঘটেছিল? পাইক্রফটই কি দুই দলের খেলোয়াড়দের হাত না মেলানোর মূল অনুঘটক?
এশিয়া কাপের গ্রুপ ‘এ’-তে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটা ছিল ১৪ সেপ্টেম্বর, দুবাইয়ে। এই ম্যাচের উত্তেজনাই ১৭ সেপ্টেম্বরের পাকিস্তান-আরব আমিরাত ম্যাচ পর্যন্ত গড়িয়েছে। দুই ম্যাচেই ম্যাচ রেফারির দায়িত্বে ছিলেন জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার অ্যান্ডি পাইক্রফট।
টানা কয়েক দিনের নাটকীয়তার পর ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সেই বহুল আলোচিত ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সামনে আসছে। জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পুরো বিষয়টি তুলে ধরেছে।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টসের ‘চার মিনিট আগে’ বিতর্কের শুরু। টসের সময় দুই অধিনায়কের সঙ্গে ম্যাচ রেফারিও উপস্থিত থাকেন। পাইক্রফট মাঠে প্রবেশের সময় এসিসির ভেন্যু ম্যানেজার তাঁকে জানান, ভারত সরকারের অনুমোদন নিয়ে বিসিসিআই জানিয়েছে, ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আগা হাত মেলাবেন না।
পিসিবির কর্মকর্তাদের মতে, পাইক্রফটের উচিত ছিল এই অস্বাভাবিক অনুরোধটি আইসিসিকে জানানো। কিন্তু পাইক্রফট বলেন, তখন জানানোর মতো সময় ছিল না। তাই টসের ঠিক আগমুহূর্তে তিনি পাকিস্তানের অধিনায়ককে হাত না মেলানোর বিষয়টি জানিয়ে দেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, যেন এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, যেখানে সালমান হাত বাড়িয়ে দিলে সূর্যকুমারের কাছে থেকে প্রত্যাখ্যাত হন।
১৪ সেপ্টেম্বর রাতে ভারতের কাছে হারের পরের দিন সকালেই পিসিবি আইসিসির ক্রিকেট জেনারেল ম্যানেজার ওয়াসিম খানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জমা দেয়। সেখানে তারা পাইক্রফটের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ আনে। অভিযোগে বলা হয়, ‘একজন আইসিসি-নিযুক্ত ও নিরপেক্ষ ম্যাচ রেফারি এমন আচরণ করেছেন, যা স্পষ্টভাবে ক্রিকেটের চেতনা ও এমসিসি আইনের লঙ্ঘন।’
পাকিস্তান দাবি করে, পাইক্রফট অধিনায়কদের মধ্যে সম্মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে পারেননি। তাই তাঁকে দ্রুত এশিয়া কাপ থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক।
পাকিস্তানের অভিযোগের পর আইসিসি জানায়, তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। তবে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে পাইক্রফট ‘কোনোভাবেই দোষী নন’।
তাদের মতে, হাত না মেলানোর বিষয়টিতে ম্যাচ রেফারি শুধু একজন ‘বার্তা বাহকের’ দায়িত্ব পালন করেছেন। আইসিসি মনে করে, দুই অধিনায়কের হাত না মেলানোর বিষয়টি টুর্নামেন্ট আয়োজক এবং ‘যারা প্রকৃত সিদ্ধান্ত নিয়েছে’, তাদের সমাধান করার বিষয়।
আইসিসি পাইক্রফটের অপসারণের দাবি নাকচ করে পিসিবিকে ই–মেইলে জানায়, কোনো দেশের ‘অনুরোধ বা চাপে’ ম্যাচ কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করা হলে তা এক ‘চরম বিপজ্জনক ও দুর্ভাগ্যজনক নজির’ তৈরি করবে।
আইসিসির পাইক্রফটকে দায়মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তে পিসিবি ‘হতাশা’ প্রকাশ করে। পাল্টা ইমেইলে তারা জানায়, যারা পাইক্রফটের অপমানজনক আচরণ প্রত্যক্ষ করেছেন, সেই সব সাক্ষীদের কাছ থেকে ‘সম্পূর্ণ প্রমাণ/ঘটনার বর্ণনা’ নেওয়া হয়নি। পাকিস্তান অধিনায়কের বা টিম ম্যানেজমেন্টের কারও সঙ্গে আইসিসির কথা না বলাকে তারা ‘একতরফা প্রক্রিয়া’ হিসেবেও উল্লেখ করে।
পিসিবি প্রশ্ন তোলে, একজন ম্যাচ রেফারি কীভাবে ‘বার্তাবাহক’ হতে পারেন এবং ক্রিকেটের চেতনার বিরুদ্ধে নির্দেশনা পৌঁছে দিতে পারেন? পিসিবির দাবি, পাইক্রফটের উচিত ছিল ভারতের ওই বার্তাটি সরাসরি ও স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করা।
সব মিলিয়ে পাকিস্তান পাইক্রফটকে অপসারণে অনড় থাকে, আর আইসিসিও তাকে রেখে দেওয়ার ব্যাপারে স্থির থাকে। এমন বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যেই পাকিস্তান-আমিরাত ম্যাচ এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
শেষ চেষ্টা হিসেবে ওয়াসিম খান ও আইসিসির সিইও সঞ্জোগ গুপ্তা পাইক্রফট ও পাকিস্তান দলের মধ্যে একটি বৈঠকের প্রস্তাব দিলে পাকিস্তান তা গ্রহণ করে। পিসিবির দাবি, সেই বৈঠকেই পাইক্রফট ক্ষমা চেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তিনিই পাকিস্তান-আমিরাত ম্যাচে রেফারির দায়িত্ব পালন করেন। সেই ম্যাচ জিতে সুপার ফোরে জায়গা করে নিয়েছে পাকিস্তান।
২১ সেপ্টেম্বর আবারও দুবাইয়ে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে ভারত, যেখানে এক সপ্তাহ আগেই শুরু হয়েছিল এই বিতর্কের।