কখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন!

কখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলেই বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ওয়ালসন। (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত
কখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলেই বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ওয়ালসন। (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বকাপ এলেই অতীতের নস্টালজিয়া ভর করে সবার মধ্যে। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা মানেই তো নানা ঘটনা, নানা রেকর্ড। এর মধ্যে কিছু অদ্ভুত রেকর্ডও আছে, যা অবাক করে সবাইকে। বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের নিয়মিত আয়োজনের দশম পর্বে সঞ্জয় বসাক লিখেছেন এমনই এক অদ্ভূতুরে রেকর্ডের কথা

অদ্ভুতুড়ে রেকর্ডের গল্প কম নেই ক্রিকেটে। কিন্তু সুনীল ওয়ালসনের এই ‘অদ্ভুততম’ রেকর্ড ক্রিকেটে আর দ্বিতীয়টি নেই। কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি অথচ, তিনিই বিশ্বকাপজয়ী এক ক্রিকেটার! 

সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমী তো দূরের কথা, খোদ ভারতীয়দের কাছেই সুনীল ওয়ালসন নামটা তেমন পরিচিত নয়। সেটি খুব একটা দোষেরও নয়। ভারতের হয়ে কোনো দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই মাঠেই নামেননি এই বাঁ হাতি পেসার। অথচ, তিনিই কিনা ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য!

’৮৩তে ভারতের বিশ্বকাপ দলে ছিলেন তিনি। সেবার সবাইকে অবাক করে দিয়েই ভারত কাপ জিতে নেয়। বিশ্বকাপে একটি ম্যাচও খেলেননি সুনীল। সে সময় যথেষ্ট সম্ভাবনা জাগিয়েই তিনি বিশ্বকাপ দলের অংশ হয়েছিলেন। রঞ্জি ট্রফিতে ছিলেন অন্যতম সেরা পেসার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৫.৩৫ গড়ে ২১২ উইকেট তো ফেলনা কিছু নয়!

তবে রঞ্জির পারফরম্যান্সের চেয়েও স্কোয়াডে সুনীলের অন্তর্ভুক্তির পেছনে বড় অবদান ছিল বিশ্বকাপের ঠিক আগে ইংলিশ দল সিহাম পার্কের হয়ে তাঁর পারফরম্যান্স। তাঁর বলে ছিল সুইং। তিনবার পেয়েছিলেন ৫ উইকেট—তাঁকে দলে না ঢোকানোর কোনো কারণ দেখেননি নির্বাচকেরা। নিজেকে শাণিয়ে নিতেই ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন। ভারতের মরা পিচে বোলিং করে সন্তুষ্ট ছিলেন না তিনি। তা ছাড়া সে সময় ভারতের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটটাও খুব একটা শক্তিশালী ছিল না।

তবে তাঁর দুর্ভাগ্য, বিশ্বকাপে একটি ম্যাচেও সুযোগ পাননি। কপিল দেব, বলবিন্দর সিং সান্ধুদের মতো পেসারের কারণে একাদশে সুযোগ পাওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়াল সুনীলের জন্য। বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে দুই ওপেনার জন রাইট ও ব্রুস এডগারকে দুর্দান্ত দুটি ডেলিভারিতে বোল্ড করেছিলেন, তবুও বিশ্বকাপে একটি ম্যাচেও একাদশে জায়গা মেলেনি তাঁর। শেষ পর্যন্ত মাঠের বাইরে বসেই ভারতকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে দেখেছিলেন তিনি। তবে আশ্চর্যের বিষয়, বিশ্বকাপের পরেও ভারতের হয়ে খেলতে পারেননি তিনি। সেই অভিমান থেকেই কিনা ১৯৮৭ সালে পেশাদার ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দেন তিনি।
বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পাওয়া নিয়ে খুব একটা আফসোস নেই সুনীলের। নিজ মুখেই বলেছেন, ‘একটি ম্যাচেও সুযোগ পাইনি, এ নিয়ে আমার মধ্যে কোনো আফসোস নেই। আমার স্পষ্ট মনে আছে, জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক আলী শাহ বলেছিল, এই বিশ্বকাপে ভারতই একমাত্র দল যাদের সহজে হারানো যাবে। ওই দল বিশ্বকাপ জিতেছিল শেষ পর্যন্ত। এ দলের সদস্য হতে পারাটা তাই আমার কাছে গর্বের বিষয়।’

খেলা ছাড়ার পর দীর্ঘদিন প্রশাসকের ভূমিকা পালন করেছেন সুনীল। খেলোয়াড়ি জীবনে দিল্লি, তামিলনাড়ু ও রেলওয়ের হয়ে খেলা এই পেসার দিল্লি উঠতি ক্রিকেটারদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। আইপিএলের দল দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের (বর্তমানে দিল্লি ক্যাপিটালস) হয়ে তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের খুঁজে বের করার কাজটিও তিনি করে যাচ্ছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।

আরও পড়ুন...