কবে ‘পাওয়ার হিটিং’ শেখাবেন সিডন্স

দলকে নিয়ে মাত্র পাঁচটা সেশনে অনুশীলন করতে পেরেছেন সিডন্সফাইল ছবি

বুধবার সকাল ছয়টার পর জরুরি আবহাওয়া সতর্কবার্তা তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে আটলান্টিকে সৃষ্ট সাইক্লোনের প্রভাব কাল দুপুরেও দেখা গেছে, যখন ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুশীলন করতে নামল বাংলাদেশ দল। আকাশে ভাসতে থাকা কালো মেঘ একটু পরপরই অন্ধকার নামিয়ে দিচ্ছিল মাঠে। বাতাস ছিল প্রচণ্ড, তাতে একবার তো লিটন দাসের মাথার হ্যাটটা উড়ে চলে গেল বেশ খানিকটা দূরে। অনুশীলনের মধ্যে দু-একবার বৃষ্টিও ভিজিয়ে দিয়ে গেছে ক্রিকেটারদের।

আরও পড়ুন

অনুশীলন শুরু হয়েছে কাল বেলা দুইটায়, ঠিক যখন আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ দলের ফেরি ভেড়ার কথা ছিল ডমিনিকার বন্দরে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গতকালের সে যাত্রা বাতিল হয়েছে আগেই। সব ঠিক থাকলে স্থানীয় সময় আজ সকাল সাতটায় বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দল এবং সিরিজ–সংশ্লিষ্ট অন্যদের নিয়ে ডমিনিকার উদ্দেশ্যে সেন্ট লুসিয়ার ক্যাস্ট্রিসের টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা পার্লে এক্সপ্রেসের ফেরিটির।

আটলান্টিক মহাসাগরে পাঁচ ঘণ্টার সমুদ্রযাত্রা নিয়ে একটা অস্বস্তি বাংলাদেশ দলে শুরু থেকেই আছে। আগামীকালের পূর্বাভাস এখন পর্যন্ত খারাপ না হলেও শঙ্কাটা পুরোপুরি যাচ্ছে না। অনুশীলনের মধ্যেই মাথার ওপরের কালো মেঘ দেখিয়ে এক ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘ভাই, ওয়েদার দেখছেন তো...।’ তবু আবহাওয়ার ওপর যেহেতু কারও হাত নেই, এটি মেনে নিয়েই তো এগোতে হবে।

সমস্যা হলো যাত্রা এক দিন পিছিয়ে যাওয়ায় ২ জুলাই ডমিনিকায় প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামার আগে সেখানে বাংলাদেশ দল অনুশীলনের সুযোগ পাবে মাত্র এক দিন। টেস্ট সিরিজ শেষে গত দুই দিন সেন্ট লুসিয়ায় অনুশীলন হলেও কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে যেখানে খেলা সেখানেই পর্যাপ্ত অনুশীলন করাটা বেশি জরুরি। ডমিনিকার দুটি ম্যাচের আগে অন্তত সে সুযোগ পাচ্ছে না বাংলাদেশ।

সিডন্স এখন মনে করেন পাওয়ার হিটার তৈরি করতে সময় লাগবে।
ছবি: প্রথম আলো

অবশ্য এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সূচিটাই এমন হয়েছে যে টেস্টের আগেও খুব বেশি অনুশীলনের সুযোগ ছিল না। টেস্টের ব্যাটিং ভালো না হওয়ার সেটাকেও একটা কারণ মনে করা হচ্ছে। কাল দুপুরে অনুশীলনে নামার আগে ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের কথায়ও ছিল সেই অতৃপ্তি, ‘এখানে আসার পর মোটে পাঁচটা সেশন কাজ করতে পেরেছি, তাও ম্যাচের আগে আর পরে। কিন্তু ম্যাচের সময়ের অনুশীলনে তো খুব বেশি কিছু করার থাকে না।’

আরও পড়ুন

জেমি সিডন্সের সঙ্গে কথা হচ্ছিল পাওয়ার হিটিং নিয়ে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্যাটিংয়ে যেটাকে মনে করা হয় অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। কিন্তু বাস্তবতা হলো জাতিগতভাবেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সে শারীরিক সামর্থ্য কম। সামর্থ্য বাড়ানোর কাজটা যতটুকু পারা যায় টেকনিকের প্রয়োগ ঘটিয়েই বাড়াতে হবে। গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে সিরিজের আগে সে উদ্দেশ্যেই পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে তিন দিনের জন্য দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা সাবেক ক্রিকেটার অ্যালবি মরকেল।

বিসিবির সেই সাময়িক উদ্যোগ তেমন কাজে আসেনি। সিডন্স অবশ্য মনে করেন, কাজটা করতে তিনিই যথেষ্ট। প্রয়োজন শুধু অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত সময়, ‘ম্যাচের প্রস্তুতির সময় পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করলে ব্যাটসম্যানরা সেটা নিতে পারবে না। হয়তো ওদের নতুন টেকনিক শেখাতে হবে বা টেকনিকে বদল আনতে হবে, খেলা চলাকালে এসব করতে গেলে উল্টো সমস্যাই সৃষ্টি হবে। আসলে বড় শট খেলার সামর্থ্য ও দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত অনুশীলন। রাতারাতি পাওয়ার হিটার বানানো যায় না; সময় লাগে।’

২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ছিলেন সিডন্স। অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ গত ফেব্রুয়ারিতে আবারও বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন নতুন ভূমিকায়। এবার কাজটা শুধু ব্যাটসম্যানদের নিয়ে। ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব নেওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিডন্স আশা দেখিয়েছিলেন, বাংলাদেশেও হবে পাওয়ার হিটার ব্যাটসম্যান।

আসার পর টি–টোয়েন্টির ব্যাটিং নিয়ে সেভাবে কাজ করার সুযোগই হয়নি সিডন্সের
ছবি: প্রথম আলো

সাক্ষাৎকারে সিডন্স বলেছিলেন, দেশের বাইরে টি-টোয়েন্টিতে সাফল্য পেতে প্রয়োজন শারীরিকভাবে শক্তিশালী ব্যাটসম্যান। ঘরের মাঠে অল্প রান করেও উইকেটের সুবিধা নিয়ে ম্যাচ জেতা যায়, দেশের বাইরের উইকেটে সেটি কঠিন। ‘আমার ইচ্ছা প্রধান কোচের সঙ্গে পরামর্শ করে ফিটনেস ট্রেনারের সহায়তায় পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করার। বাংলাদেশেও পাওয়ার হিটার তৈরি করা সম্ভব। এখন তো বাউন্ডারিই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জেতায়, জোরে মারতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ’—এমন আশাই তখন দেখিয়েছিলেন সিডন্স।

আরও পড়ুন

কিন্তু বাংলাদেশ দল এরপর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেই মাত্র দুটি। গত মার্চে মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে যার একটিতে হার, আরেকটিতে জয়। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর এবং ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে ছিল না কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং নিয়ে আলাদা করে কাজ করারও তাই সুযোগ হয়নি সিডন্সের। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যখন আবারও টি-টোয়েন্টি খেলতে নামবেন সাকিব-লিটনরা, তার আগে ব্যাটিং কোচের অতৃপ্তি থেকে যাচ্ছে পর্যাপ্ত অনুশীলন করতে না পারা নিয়ে।

ড্রেসিংরুমে হয়তো ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে এ নিয়ে সিডন্স আলাদা কথা বলেছেন, কিন্তু শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান দিয়ে তো আর পাওয়ার হিটিং শেখানো যাবে না। তারপরও যদি এই সিরিজে কারও ব্যাটে শটের বিদ্যুৎস্ফুলিঙ্গ দেখেন, সেটা হবে বাড়তি পাওয়া।

এর আগে অবশ্য কাল আটলান্টিকের ‘পাওয়ার হিটিং’ সামলে বাংলাদেশ দলকে পৌঁছাতে হবে ডমিনিকায়, প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য যে দ্বীপ পরিচিত ‘নেচার আইল্যান্ড অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ নামে।