দেশে ফেরার আগে শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপে ‘আশ্রয়ে’ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা

আইপিএল চলাকালে এক ফ্রেমে দুই অস্ট্রেলিয়ান স্টিভ স্মিথ ও রিকি পন্টিং (ডানে)।ছবি: বিসিসিআই

অ্যাডাম জাম্পা, অ্যান্ড্রু টাই ও কেন রিচার্ডসনের ভাগ্য খুব ভালো। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন হু হু করে বাড়ছিল, আইপিএলে খেলার কথা না ভেবে ভারত ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে গেছেন এই তিন ক্রিকেটার। কিন্তু স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নাররা পড়েছেন মহাবিপদে। ভারতের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। এর মধ্যেই কিনা কয়েকজন খেলোয়াড় আর সাপোর্ট স্টাফের করোনা ধরা পড়ায় আইপিএল স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। এখন তো আইপিএলও নেই আর দেশেও ফিরতে পারছেন না অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা। ভারত থেকে বের হওয়ার পর ১৪ দিন পার না হলে কেউ অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে পারবেন না—এমন নিয়ম করে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।

তবে দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন দলের অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার, কোচ, বিশেষজ্ঞসহ আইপিএলে ধারাভাষ্য দিতে যাওয়া ধারাভাষ্যকারেরা। কিন্তু কীভাবে তাঁরা দেশে ফিরবেন, এটা এখন বড় প্রশ্ন। দেশে ফিরতে কিছুদিন দেরি হলেও স্মিথ-ওয়ার্নাররা যত দ্রুত সম্ভব ভারত ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সেই ব্যবস্থা নিচ্ছে বিসিসিআই। আজ ও আগামীকালের মধ্যে ভাড়া করা বিমানে করে অস্ট্রেলিয়ার ৩৮ জন ক্রিকেটার, কোচ আর ধারাভাষ্যকারকে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় পাঠাবে তারা। সেখান থেকে তাঁদের অস্ট্রেলিয়ায় ফেরাবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।

দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন আইপিএলের অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার।
ছবি: বিসিসিআই

করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকার পরও কেন আইপিএল হচ্ছে আর আইপিএল শেষ হলে বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়েরা কীভাবে দেশে ফিরবেন—গত মাসের শেষের দিকে যখন এমন আলোচনা চলছিল, বিসিসিআই ও আইপিএলের নির্বাহী কর্মকর্তা হেমাং আমিন সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, খেলোয়াড় ও কোচদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। একই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেছিলেন, খেলা শেষ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু সব খেলোয়াড় ও কোচ আর কর্মকর্তা নিরাপদে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত বিসিসিআইয়ের আইপিএল ‘শেষ’ হবে না!

গত মঙ্গলবার আইপিএল স্থগিত হয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসার পর ইংল্যান্ডের কয়েকজন ক্রিকেটার দ্রুত আহমেদাবাদ থেকে দিল্লি চলে যান। সেখান থেকে হিথরু বিমান ধরে দেশে ফিরেছেন জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, স্যাম বিলিংস, ক্রিস ওকস, মঈন আলী, জেসন রয় ও দুই কারেন ভাই স্যাম ও টম। দেশে ফিরে কোয়ারেন্টিনও শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। তবে ভারতে আটকা পড়েছেন ইংল্যান্ডের সীমিত ওভারের অধিনায়ক এউইন মরগান, ব্যাটসম্যান ডেভিড ম্যালান ও অলরাউন্ডার ক্রিস উড। এ ছাড়া ভারতে আটকা পড়ে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররাও। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের মতো তাঁদের সবাইকেও মহামারিতে আক্রান্ত ভারতের বাইরে (মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা) পাঠানোর ব্যবস্থা করছে আইপিএল কর্তৃপক্ষ।

অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স।
ছবি: বিসিসিআই

অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়, কোচ আর ধারাভাষ্যকারদের ভারতের বাইরে পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নির্বাহী নিক হকলি বলেছেন, ‘বিসিসিআই চেষ্টা করছে দেশে ফেরার আগে পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়, কোচ, ধারাভাষ্যকারদের ভারতের বাইরে কোথাও নিরাপদে রাখতে। আপাতত সবাইকে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় রাখা হবে। এখানেই বিসিসিআই দায়িত্ব শেষ করছে না। সবাইকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত পাঠাতে তারা সেখান থেকে একটি ভাড়া করা বিমানেরও ব্যবস্থা করবে।’

এ বছর আর আইপিএল হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে হকলি বলেছেন, ‘এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাচ্ছে না। বিসিসিআই এই মুহূর্তে শুধুই খেলোয়াড়দের নিরাপদে দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে ভাবছে। এটা শুধু অস্ট্রেলিয়ানদের জন্যই নয়, (ভারতে আটকা পড়া) সব দেশের ক্রিকেটারদের ফেরত পাঠানো নিয়েই ভাবছে তারা।’ অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে অবশ্য মাইক হাসি এখনই ভারতের বাইরে যেতে পারবেন না। চেন্নাই সুপার কিংসের ব্যাটিং কোচ হাসি করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হয়েছেন। তাঁকে আরও ১০ দিন ভারতেই আইসোলেশনে থাকতে হবে। হকলি অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা ভালো। লক্ষণগুলো মৃদু।

করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আপাতত ভারতেই থাকতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ও চেন্নাই সুপার কিংসের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসিকে।
ছবি: বিসিসিআই

ভারত সব বিদেশি খেলোয়াড়কেই মহামারি এলাকার বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে চাইলেও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি) জানিয়েছে, তাদের খেলোয়াড়েরা ভারতেই টিম হোটেলে আইসোলেশনে আছেন। এনজেডসি চাইছে আগামী মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের জন্য সরাসরি উইলিয়ামসনদের সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে। এটা নিয়ে বিসিসিআই, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করছে এনজেডসি।