ফ্লেচার-রনি পাত্তা দিলেন না ঢাকাকে

রনি ও ফ্লেচারের ৭২ রানের জুটি খুলনার কাজ সহজ করে দিয়েছেছবি: প্রথম আলো

টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন খুলনা টাইগার্স অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তবে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, তাঁরা ব্যাটিং-ই নিতেন। রাতের ম্যাচ বলে শিশিরের প্রভাব ছিল স্পষ্টই।

দিনের ম্যাচের তুলনায় ব্যাটিংটাও তুলনামূলক সহজই হলো। আন্দ্রে ফ্লেচার, রনি তালুকদারের পর থিসারা পেরেরার ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ঢাকার ১৮৩ রান ১ ওভার বাকি থাকতেই টপকে গেল খুলনা, পেল ৫ উইকেটের জয়।

আরও পড়ুন
ঢাকাকে ভালো শুরু এনে দিয়েছেন তামিম ও শেহজাদ
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ শেহজাদের উদ্বোধনী জুটিতেই উঠেছিল ৬৯ রান। আক্রমণের মূল দায়িত্বটা পালন করেন শেহজাদ। পাওয়ার প্লেতে ৫৬ রানের মধ্যে শেহজাদের রান ছিল ২২ বলে ৩৯, সে সময় তামিম করেছিলেন ১৪ বলে ১৪। খুলনা বোলাররা আঁটসাঁট বোলিং করতে পারেননি, জায়গা পেয়ে সুবিধা আদায় করেছেন শেহজাদ, সঙ্গে তামিমও। প্রথম ৬ ওভারে আসে ১১টি বাউন্ডারি—সব কটিই ছিল চার।

শেহজাদ রানআউট হন অষ্টম ওভারে, ডাবলস নেওয়ার সময় নন-স্ট্রাইক প্রান্তে তানজিদের সরাসরি থ্রোতে। ১১তম ওভারে চড়াও হন তামিম, অবশ্য ভাগ্যের সহায়তাও পান। ফরহাদ রেজাকে পরপর ৩ বলে মারেন ৩ চার—প্রথমটি যায় উইকেটকিপার মুশফিকের নাগালের একটু বাইরে দিয়ে, এরপর থার্ডম্যানের একটু ওপর দিয়ে। শেষটি এসেছিল লেগসাইডে বাজে বলে।

পঞ্চাশ পেয়েছেন রনি তালুকদার
ছবি: প্রথম আলো

৪১ বলে ক্যারিয়ারের ৪১তম অর্ধশতক পূর্ণ করেন তামিম। কামরুল ইসলামকে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়ে অবশ্য ফেরেন ৫০ করেই। থিসারা পেরেরার বলে বোল্ড হওয়ার আগে সুবিধা করতে পারেননি মোহাম্মদ নাঈমও। আন্দ্রে রাসেল নেমে বড় একটা ছয় মারেন, তবে অবিশ্বাস্য এক রানআউটের শিকার হন তিনি।

থার্ডম্যানে খেলে সিঙ্গেল নিতে গিয়েছিলেন রাসেল, শর্ট থার্ডম্যানে থাকা মেহেদী হাসানের থ্রো সরাসরি ভাঙে স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প। রাসেলেরও নজর ছিল সেদিকেই। থ্রোটা স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভাঙার পর দিক বদলে সোজা গিয়ে আঘাত করে স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে। মাহমুদউল্লাহ ওপ্রান্তে নিরাপদ থাকলেও স্ট্রাইক প্রান্তে রানআউট হয়ে যান রাসেল।

মাহমুদউল্লাহ দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন
ছবি: প্রথম আলো

রাসেল ফিরলেও শেষ দিকে ঢাকাকে তিনটি বড় ওভার এনে দেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ২ চার ও ৩ ছয়ে ২০ বলে করেন ৩৯ রান। শটগুলোতে তাঁর টাইমিং ছিল দুর্দান্ত। শুভাগত ও ইসুরু উদানার অবদানে ঢাকা যায় ১৮৩ রান পর্যন্ত, শেষ ২ ওভারে ওঠে ৩৩ রান।

শুভাগত এরপর বোলিংয়ে আঘাত করেন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই, তানজিদ হাসানকে বোল্ড করে। সে ওভারের পঞ্চম বলে ছয় মেরে অবশ্য পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন রনি, পরের ওভারে আরাফাত সানিকে আরও দুটি চার মারেন তিনি। রুবেল হোসেনের করা চতুর্থ ওভারে আন্দ্রে ফ্লেচার ৪টি চার ও ১টি ছয়ে তোলেন ২২ রান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে রাসেলকে আরও ২ চারের পর খুলনা ৬ ওভারে তোলে ৬৫ রান, ঢাকার প্রথম ৬ ওভারের স্কোরের চেয়েও যা ৯ রান বেশি।

মাত্র ৬ রান করেছেন মুশফিক
ছবি: প্রথম আলো

ফ্লেচারের সঙ্গে দ্বৈরথটা অবশ্য জেতেন রাসেল; ২৩ বলে ৪৫ রান করে ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেটকিপারের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফ্লেচার, ভাঙে ৭২ রানের জুটি। ইবাদতের শর্ট বলে ক্যাচ তোলার আগে রনিকে সেভাবে সঙ্গ দিতে পারেননি মুশফিক। রনি অবশ্য আক্রমণ চালিয়ে যান ঠিকই। ৩১ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেছিলেন এই ডানহাতি, শেষ পর্যন্ত ইবাদতকে অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে স্কুপ করতে গিয়ে স্টাম্পে বল টেনে এনে থামতে হয় তাঁকে। ৪২ বলে ৬১ রানের ইনিংসে ছিল ৭টি চার, ১টি ছয়। ইনিংসে রনি কাটের মতো শট যেমন খেলেছেন, আউট হওয়ার আগে সফলভাবে করেছেন স্কুপও।

শেষ ৫ ওভারে খুলনার প্রয়োজন ছিল ৪৫ রান, সমীকরণ খুব একটা কঠিন ছিল না। ইয়াসির আলী ১৫ বলে ১৩ রান করে ফিরলেও পেরেরার ১৮ বলে ৩৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে কাজ সহজ হয়ে যায় খুলনার। ৫ বলে ১২ রানের ক্যামিও খেলেন মেহেদীও।

পেরেরার ৩৬ রানের ইনিংস খুলনাকে সহজ জয় এনে দিয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

সংক্ষিপ্ত স্কোর

মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা: ২০ ওভারে ১৮৩/৬ (শেহজাদ ৪২, তামিম ৫০, নাঈম ৯, মাহমুদউল্লাহ ৩৯, রাসেল ৭, জহুরুল ১২, শুভাগত ৯*, উদানা ৬*; মেহেদী ০/২৪, নভীন ০/৩৮, কামরুল ৩/৪৫, রেজা ০/৪৩, পেরেরা ১/২৭)

খুলনা টাইগার্স: ১৯ ওভারে ১৮৬/৫ (ফ্লেচার ৪৫, তানজিদ ২, রনি ৬১, মুশফিক ৬, ইয়াসির ১৩, পেরেরা ৩৬*, মেহেদী ১২*; সানি ০/২৮, শুভাগত ১/৯, রুবেল ০/৪২, উদানা ০/৩৭, রাসেল ২/৪২, ইবাদত ২/২৭)

ফল: খুলনা ৫ উইকেটে জয়ী