বাংলাদেশের বিপক্ষে ‘ঘুমিয়ে পড়া’র আক্ষেপ বাউচারের

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের খেলা তাঁদের কোচকে হতাশ করেছেছবি: এএফপি

এমন নয় যে এ স্বাদ তাঁর জন্য নতুন। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সদস্য ছিলেন মার্ক বাউচার। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফতাব আহমেদ ও মোহাম্মদ আশরাফুলদের ধুন্ধুমার মারকাটারি ব্যাটিংও দেখেছেন। কিন্তু ঘরের মাঠে বাংলাদেশের কাছে হারের স্বাদ একদমই নতুন বাউচারের জন্য। বাংলাদেশের কাছে ঘরের মাঠে সিরিজ হারা দলের কোচ হিসেবে ইতিহাসে বাউচারের নাম লেখা থাকবে।

সিরিজের প্রথম ম্যাচের চেয়েও শেষ ম্যাচের হারটাই বেশি কষ্ট দেবে প্রোটিয়াদের। ঘরের মাঠে প্রথমে ব্যাট করতে নামা এক দল ৩৭ ওভারে ১৫৪ রানে অলআউট হওয়াটা কষ্টও দেয়। কোচ হিসেবে বাউচারের আক্ষেপ দুর্দান্ত শুরু পেয়েও দলের ওভাবে ভেঙে পড়াতে। ৪৬ রানের উদ্বোধনী জুটির পর ওভাবে ব্যাটিং ধসের পেছনে বাউচারের ব্যাখ্যা দলের ‘ঘুমিয়ে পড়া’!

আরও পড়ুন
ব্যাটসম্যানদের মানসিকতায় সমস্যা দেখছেন বাউচার
ছবি: টুইটার

ছয় ওভারের মধ্যে ৪০ রান তুলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সপ্তম ওভারেও চার মেরে দলকে ৪৬ রানে নিয়ে গিয়েছিলেন কুইন্টন ডি কক। মেহেদী হাসান মিরাজকে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে ডি কক ক্যাচ আউট হওয়ার পরই ব্যাটিং–ধস। সে ধস আর থামেনি। পরের ৩০ ওভারে মাত্র ১০৮ রান তুলতেই ৯ উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিক দল।

আরও পড়ুন

কোচ বাউচার এর পেছনে দলের মানসিকতার সমস্যা দেখতে পাচ্ছেন। তাঁর ধারণা, প্রথম ম্যাচের মতো গতকালকের উইকেটও বড় সংগ্রহের উইকেট ছিল। ব্যাটসম্যানদের রক্ষণাত্মক মানসিকতাই ডুবিয়েছে বলে কোচের ধারণা, ‘আজ আমাদের মধ্যে তাড়নার অভাব ছিল। খুব ভালো শুরুর পর, আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমরা এভাবে খেলতে অবশ্যই চাই না। আমরা ভালো শুরু করে ম্যাচটা এগিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, সেটা আমরা করতে পারিনি। ওরা ভালো বল করেছে। রান করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে কিছু ঝুঁকি নিতে হবে। মনে হচ্ছিল, আমরা সংগ্রহ গড়া নয়, আউট হওয়ার ভয় নিয়ে খেলতে নামছি। উইকেট যেমন ছিল, ৩০০-এর বেশি রানের উইকেট।’

ব্যাটসম্যানদের শট নির্বাচনে সমস্যা ছিল বলে জানিয়েছেন বাউচার
ছবি: এএফপি

দুই উইকেট পড়ে যাওয়ার পর রক্ষণাত্মক হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাউচার বলছেন, ব্যাটসম্যানদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করানোতেই জোর দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকতে পারেননি বাভুমা-মিলার-প্রিটোরিয়াসরা। এর পেছনে উইকেটের ভূমিকা দেখছেন বাউচার।

আরও পড়ুন

তবে ব্যাটসম্যানদের সিদ্ধান্তহীনতারও দোষ দেখছেন, ‘আমাদের ঘরের মাঠে প্রায় ভারতের মতো কন্ডিশন ছিল। আমরা চাই ছেলেরা উদ্যোগী হোক, কিন্তু আজ তারা সেটা করেনি। আমরা শট বেছে নেওয়া নিয়ে কাজ করছি। ওরা জানে, তাদের হাতে এই শট আছে। কিন্তু আপনার ক্ষমতা আছে সেটা জানা একটা ব্যাপার, আর সেটা কাজে লাগানো আরেক ব্যাপার। কিন্তু মানসিক একটা বাধা রয়েই গেছে এবং আউটের ভয়টা কাজ করেছে। ওরা বুঝতেই পারছে না, এই খেলায় রান করাটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং মন থেকে ব্যর্থতার ভয় ঝেড়ে ফেলতে হয়।’

বিশ্বকাপে সরাসরি যেতে পারবে দক্ষিণ আফ্রিকা?
ছবি: এএফপি

বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হেরে বসায় আরেকটি বড় ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০২৩ সালে আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে পারবে স্বাগতিক ভারত ছাড়া সাত দল। এই সাত দলের জায়গা চূড়ান্ত হবে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্টে। এই পয়েন্ট তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকা এখন আছে নয়ে। কয়দিন আগে ভারতকে ৩-০ ব্যবধানে হারালেও সেটা ওয়ানডে লিগের অংশ না হওয়ায় তাদের কোনো লাভ হয়নি।

বাংলাদেশের সঙ্গে সিরিজে পয়েন্ট হারানোর ফলে আগামী বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার। আর মাত্র ১১ ম্যাচ বাকি তাদের। বাউচার তাই কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার সংকল্প করছেন, ‘অ্যালার্ম বেল তো সব সময়ই ছিল। আমরা নিজেরাই নিজেদের চাপে ফেলেছি, কিন্তু আমাদের ছন্দে ফিরতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, যদি আমরা চোয়ালবদ্ধ হই, আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলি, আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামি, তাহলে বিশ্বের যে কাউকে হারাতে পারি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেটা দেখিয়েছি। আমাদের ওয়ানডে দলেও তো তারাই খেলে। আমাদের অনেক কিছু নিয়ে কথা বলতে হবে। আমরা এই দলগুলোকে (ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড) আগেও হারিয়েছি। বিশ্বকাপে যেতে হলে ওদের আবার হারাতে হবে।’