‘শূন্যে’র খাতায় সমান ভারতীয় ক্রিকেটের দুই ক্ষমতাবান

বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী ও ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলিফাইল ছবি: এএফপি

আগের দিন মোহাম্মদ সিরাজকে নিয়ে কথা–কাটাকাটি হয়েছিল দুজনের। দিনের খেলা শেষে বেন স্টোকস বলেছেন, বিরাট কোহলির সঙ্গে তাঁর এই তর্কযুদ্ধ ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ থেকে।

কিন্তু পেশাদার হিসেবে মাঠের লড়াইয়ে তো ভালোবাসার লেশ রাখতে নেই। স্টোকস আপাতত সে লড়াইয়ে জয়ী। আহমেদাবাদ টেস্টে আজ দ্বিতীয় দিনে কোহলি রানের খাতা খোলার আগেই তাঁকে তুলে নেন ইংলিশ অলরাউন্ডার।

ভারত অধিনায়কের কি মনোসংযোগে ঘাটতি হয়েছিল? খাটো লেংথের বল যিনি উইকেটের চারপাশেই খেলতে সিদ্ধহস্ত, স্টোকসের তেমন এক ডেলিভারিতেই কিনা ঢিলেঢালা রক্ষণাত্মক খেলার খেসারত দিলেন কোহলি। ৮ বলে ০ রানের ইনিংস দিয়ে আরেকটি নির্ভেজাল ‘ডাক’ যোগ হলো তাঁর নামের পাশে।

এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতিকে একটি জায়গায় ধরে ফেললেন কোহলি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত দিন ভারতের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি শূন্য রানের ইনিংস ছিল বিসিসিআই সভাপতি ও সাবেক ব্যাটসম্যান সৌরভ গাঙ্গুলীর। দুই সংস্করণে ভারতের নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৫ ম্যাচে ২১৭ ইনিংসে ১৩ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন ভারতের সাবেক এ অধিনায়ক।

কোহলি এই অনাকাঙ্ক্ষিত ‘আনলাকি থার্টিন’–এ পা রেখেছেন আজ, সৌরভের চেয়ে ৩ ম্যাচ কম নেতৃত্ব দিয়ে। ১৯২ ম্যাচে ২২৪ ইনিংসে ১৩ বার শূন্য রানে আউট হলেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান।

অর্থাৎ ভারতের অধিনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চসংখ্যক ‘ডাক’ এখন দেশটির ক্রিকেটে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দুজনের—বোর্ড সভাপতি ও জাতীয় দলের অধিনায়ক। অবশ্য কোহলি যে সৌরভকে ছাড়িয়ে যাবেন, সেটাই স্বাভাবিক।

৩২ বছর বয়সী কোহলির ক্যারিয়ারে এখনো আরও অনেক ম্যাচ বাকি, রান করা বাকি তেমনি আরও ‘ডাক’ মারাও অসম্ভব কিছু না! সে ক্ষেত্রে এই রেকর্ড, সেটা যত–ই অনাকাঙ্ক্ষিত হোক—তা বিমর্ষ মুখে বরণ করে নিতে হবে কোহলিকেই।

আহমেবাদ টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে কোনো রান না করে আউট হওয়ার পর কোহলি
ছবি: এএফপি

শুধু টেস্টের হিসাব কষলে সৌরভ হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে পারেন। কেননা, টেস্টে ভারতের অধিনায়ক হিসেবে তিনি শূন্য রানে আউট হয়েছেন মাত্র ৪ বার। তাঁর দ্বিগুণসংখ্যকবার শূন্য রানে আউট হয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি ও কোহলি—টেস্টে ভারতের অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চসংখ্যকবার শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ডও এ দুজনের।

ধোনি যেহেতু এখন সাবেক, তাই এই অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডটাও একদিন মাথার মুকুটে ‘কাঁটা’ হিসেবে যোগের শঙ্কায় থাকবেন কোহলি। ওয়ানডেতে অবশ্য তাঁর সে শঙ্কা নেই। ৩ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে। ৯ বার আউট হয়ে এখানে শীর্ষে সৌরভ। কিন্তু টি–টোয়েন্টিতে আবার কোহলি–ই সবার শীর্ষে (২ বার)।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোহলির অভিষেক ১৮ আগস্ট, ২০০৮। এদিন থেকে হিসাব কষলে এবং সেটা যদি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে করা হয় (১ থেকে ৭ নম্বর) তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ‘ডাক’ মারাদের তালিকায় বেশ ওপরেই আছে কোহলির নাম।

তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৪৯ ম্যাচে ৪০৪ ইনিংসে ২৭টি ডাক মেরেছেন তিনি। এ সময় শূন্য রানে আউট হওয়ায় শীর্ষস্থানে বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল। ২৮৩ ম্যাচে ৩৩৬ ইনিংসে ৩০ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। নিজের ক্যারিয়ারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিম মোট ৩৩ বার আউট হয়েছেন ০ রানে।

তামিম–কোহলি এ সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডাক মারায় কতটা ‘পটু’ (!) সেটি বের হয়ে আসে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণে। সাধারণত নিখাদ বোলাররাই ডাক মারায় পটু এবং ০ রানে আউট হওয়ার রেকর্ডে তাঁরাই এগিয়ে থাকেন—এটাই প্রচলিত ধারণা। তা যেমন মোটেও ভুল নয় তেমনি তাদের পাশে নিখাদ ব্যাটসম্যানদের ০ রানে আউট হওয়ার হিসাবটা রাখলে পার্থক্যটাও বোঝা যায়।

কোহলির আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর শুন্য রানে আউট হওয়ায় এগিয়ে তামিম
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

যেমন ধরুন, কোহলির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চসংখ্যকবার ০ রানে আউট হয়েছেন ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড (৪৪ বার)। শীর্ষে পাঁচে পরের চারজনই বোলার—ইশান্ত শর্মা (৩৪), জেমস অ্যান্ডারসন (৩৩), লাসিথ মালিঙ্গা (৩১) ও সুরঙ্গা লাকমল (৩০)। অর্থাৎ লাকমলের সমানসংখ্যকবার ০ রানে আউট হয়েছেন তামিম।

তাহলে কোহলিও তো এ ক্ষেত্রে খুব একটা পিছিয়ে নেই, কিন্তু চোখে পড়ে শুধু বোলারদের! ওয়ানডেতে এ সময় তামিমের পরিসংখ্যান দেখিয়ে প্রশ্নটা তুলতে পারেন বোলাররা—১৭১ ম্যাচে ১৬ বার শূন্য রানে আউট হয়ে তালিকার দুইয়ে তামিম।

১৭৩ ম্যাচে ২৩ বার ০ রানে আউট হওয়া মালিঙ্গাকে–ই শুধু ছুঁতে পারেননি। তবে অদূর ভবিষ্যতে লঙ্কান কিংবদন্তি হয়তো তামিমের পেছনেও পড়তে পারেন, কে জানে!
বর্তমান ভারতীয় দলের প্রসঙ্গও তোলা যায়।

আচ্ছা, বলুন তো টেস্টে ভারতের এই দলে সর্বোচ্চসংখ্যকবার ০ রানে আউট হওয়ার রেকর্ড কার? মাথাটা একটু পরিষ্কার থাকলেই বুঝে ফেলার কথা। তাঁর নাম বলা হয়েছে আগেই—ইশান্ত। ভারতীয় এ পেসার টেস্টে ৩২ বার কোনো রান না করে আউট হয়েছেন। তাঁর ধারেকাছেও কেউ নেই।

তবে ইশান্তের পর দুইয়ে থাকা ব্যক্তিটির নাম শুনে চোখ কপালে উঠতে পারে—কোহলি (১২)। চলতি সিরিজে চেন্নাইয়ে দ্বিতীয় টেস্টেও রানের খাতা না খুলে আউট হয়েছেন তিনি। কোনো সিরিজে কোহলির অন্তত দুবার ০ রানে আউট হওয়ার এটি দ্বিতীয় নজির। প্রথম দেখা গিয়েছিল ২০১৪ ইংল্যান্ড সফরে।

আহমেদাবাদ টেস্টে দ্বিতীয় দিনে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করছিল ভারত। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২০৫ রানে অলআউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ১৫৩ রান তুলেছে ভারত।