ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এই ২৫ তথ্য আপনি কি জানেন?

বিশ্বের সেরা লিগ এখনো এটিই। আয়, সম্প্রচারে, মাঠে ও গ্যালারিতে দর্শকসংখ্যায়। বিশ্বের ২১২টি অঞ্চলে ৬৪ কোটি ৩০ মিলিয়ন মানুষের ঘরে পৌঁছে গেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, যার টিভি দর্শকসংখ্যা ৪৭০ কোটি! ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ নামে পরিচিত হলেও ১৮৮৮ সালে যাত্রা শুরুর সময় এটি ছিল ইংল্যান্ডে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ। ১৯৯২ সালে আরও আকর্ষক একটি লিগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে নামকরণ করা হয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ।

১৫ আগস্ট আসরটির রজতজয়ন্তী (২৫ বছর পূর্তি)। আসুন এক নজরে দেখে নিই প্রিমিয়ার লিগের চমকপ্রদ ২৫ তথ্য:

১৯৬৮ সালের পর ম্যানচেস্টার সিটির প্রথম লিগ শিরোপা নির্ধারণী গোলের উৎস ছিলেন বালোতেল্লি। ছবি: এএফপি
১৯৬৮ সালের পর ম্যানচেস্টার সিটির প্রথম লিগ শিরোপা নির্ধারণী গোলের উৎস ছিলেন বালোতেল্লি। ছবি: এএফপি

১. ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এ পর্যন্ত ম্যাচের সংখ্যা ৯ হাজার ৭৪৬, গোলসংখ্যা ২৫ হাজার ৭৬৯, অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ৪৭। কিন্তু এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছে মাত্র ছয়টি দল: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স, আর্সেনাল, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি ও লেস্টার সিটি।

২. প্রতি মৌসুমে অংশ নিয়ে থাকে মোট ২০টি ক্লাব। গত জানুয়ারিতে ‘ডেলয়েট’ প্রকাশিত শীর্ষ ৩০ রাজস্ব আয়কারী ক্লাবের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে প্রিমিয়ার লিগের ১২টি ক্লাব, যা ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগ বিবেচনায় সর্বোচ্চ।

৩. আসরটির ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৫ জন কোচ চাকরি হারিয়েছেন। গত মৌসুমে এ সংখ্যাটা ছিল ১১। মজার ব্যাপার, প্রথম মৌসুমে ছাঁটাই হয়েছিলেন মাত্র একজন! ৪২ ম্যাচের সেই মৌসুমে ২৯ ম্যাচ চেলসি কোচের দায়িত্ব পালনের পর ছাঁটাই হয়েছিলেন ইয়ান পোর্টারফিল্ড।

৪. ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের প্রথম তিন মৌসুমে অংশ নিয়েছে মোট ২২টি করে দল। প্রতিটি দলের ম্যাচের সংখ্যা ছিল ৪২। ২০ দল নিয়ে ৩৮ ম্যাচের ফরম্যাট শুরু হয় ১৯৯৫-৯৬ মৌসুম থেকে। তার আগের মৌসুমে তিন দলের বদলে প্রথমবারের মতো চার দলের অবনমন (রেলিগেশন) ঘটেছিল।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ ১১৯ হলুদ কার্ড দেখেছেন গ্যারেথ ব্যারি। ছবি: এএফপি
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ ১১৯ হলুদ কার্ড দেখেছেন গ্যারেথ ব্যারি। ছবি: এএফপি

৫. এ পর্যন্ত ২৫ মৌসুম দেখেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। এর মধ্যে প্রতি মৌসুমে গড়ে ৮.৮৪ জন কোচ ছাঁটাই হয়েছেন। আসরটিতে সব মিলিয়ে মোট ২২১ জন কোচ ন্যূনতম একটি ম্যাচে কোনো দলের দায়িত্বে ছিলেন। এর মধ্যে ১৫৪ জন স্থায়ী কোচ, বাকি ৬৭ জন অন্তর্বর্তী।

৬. গত ২৫ বছরে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ন্যূনতম একটি ম্যাচ হলেও খেলেছেন—এমন ফুটবলারের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৩৫। তাঁরা সবাই মিলে মোট ১১৩টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে সিচেলিস, গিনি-বিসাউ এমনকি পাকিস্তানও!

৭. আশ্চর্য হলেও সত্য, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে পেনাল্টিতে দুই পায়েই গোল করা খেলোয়াড় মাত্র দুজন! ইংলিশ ফরোয়ার্ড ববি জামোরা ও নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ওবাফেমি মার্টিনস। বাকিরা হয় ডান পায়ে সব শট নিয়েছেন, নয়তো বাঁ পায়ে।

৮. ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চিরসবুজ মিডফিল্ডার রায়ান গিগস ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশিবার বদলি (১৩৪) হয়ে মাঠে নেমেছেন। ২০১৪ সালে অবসর নেওয়া এ ওয়েলস ইন্টারন্যাশনাল আসরটির প্রথম ২২ মৌসুমে খেলা একমাত্র ফুটবলার। এ ছাড়া প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ২১ মৌসুমেই গোল করা একমাত্র ফুটবলারও গিগস।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের প্রথম মৌসুমে ছাঁটাই হওয়া একমাত্র কোচ ইয়ান পোর্টারফিল্ড। ছবি: এএফপি
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের প্রথম মৌসুমে ছাঁটাই হওয়া একমাত্র কোচ ইয়ান পোর্টারফিল্ড। ছবি: এএফপি

৯. মারিও বালোতেল্লি কখনো ‘সুপার মারিও’ আবার কখনো ‘ব্যাড বয়’। ম্যানচেস্টার সিটিতে তিন মৌসুম খেলেছেন এ ইতালিয়ান ফরোয়ার্ড। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এ তিন মৌসুমে বালোতেল্লির ‘অ্যাসিস্ট’ মাত্র একটি! ২০১১-১২ মৌসুমে কিউপিআরের বিপক্ষে ম্যান সিটির শিরোপা-নির্ধারণী ম্যাচে আগুয়েরো যে গোলটি করেছিলেন, তার উৎস ছিলেন বালোতেল্লি! মানে, প্রিমিয়ার লিগে ওটাই বালোতেল্লির একমাত্র ‘অ্যাসিস্ট’, সেটাও আবার শিরোপা-নির্ধারণী!

১০. ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এক ম্যাচে গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে গোল করানো এবং আত্মঘাতী গোলও করা খেলোয়াড় মাত্র তিনজন—ওয়েন রুনি, গ্যারেথ বেল ও কেভিন ডেভিস। তাঁদের মধ্যে বেল আবার এক ম্যাচে এসব কীর্তি গড়ার পাশাপাশি হলুদ কার্ডও দেখেছেন!

১১. প্রিমিয়ার লিগে ঘরের মাঠে কোনো ম্যাচের প্রথমার্ধে ম্যানইউ এগিয়ে গেলে তারা কখনো ওই ম্যাচ হারেনি।

শেফিল্ড ইউনাইটেডের ব্রায়ান ডিন; ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে প্রথম গোলদাতা। ছবি: এএফপি
শেফিল্ড ইউনাইটেডের ব্রায়ান ডিন; ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে প্রথম গোলদাতা। ছবি: এএফপি

১২. আসরটিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পেনাল্টি মিস করা খেলোয়াড় অ্যালান শিয়েরার (১১)। মজার ব্যাপার, পেনাল্টিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক গোল করা খেলোয়াড়টিও শিয়েরার (৫৬)।

১৩. ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ‘একের ভেতর তিন’ ছিলেন গোলরক্ষক পল রবিনসন। গোল করা, সতীর্থদের দিয়ে গোল করানো এবং পেনাল্টিও আদায় করেছেন তিনি। আসরটির ইতিহাসে বাকি সব গোলরক্ষকের তুলনায় রবিনসনের ‘অ্যাসিস্ট’সংখ্যা বেশি (৫)।

১৪. লিভারপুল মিডফিল্ডার জেমস মিলনার এ পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে ৪৭টি আলাদা ম্যাচে গোল করেছেন, এ ম্যাচগুলোতে তাঁর দল হারেনি। লিগে এটা রেকর্ড।

১৫. ১৫ আগস্ট, ১৯৯২ যাত্রা শুরু করে প্রিমিয়ার লিগ। এ সময়ের পরে জন্মে আসরটিতে হ্যাটট্রিক করা খেলোয়াড় তিনজন—রহিম স্টার্লিং, রোমেলু লুকাকু ও হ্যারি কেন।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশিবার বদলি খেলোয়াড় হিসেবে হয়ে মাঠে নামার রেকর্ড রায়ান গিগসের। ছবি: এএফপি
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশিবার বদলি খেলোয়াড় হিসেবে হয়ে মাঠে নামার রেকর্ড রায়ান গিগসের। ছবি: এএফপি

১৬. ১৯৬০ সালের আগে জন্মে প্রিমিয়ার লিগে হ্যাটট্রিক করা একমাত্র ফুটবলার স্কটল্যান্ডের গর্ডন স্ট্রাচান (জন্ম ১৯৫৭)।

১৭. ২০১৪-১৫ মৌসুমে ‘রেলিগেশন জোন’-এ থেকে কোনো রকমে অবনমন এড়াতে সমর্থ হয় লেস্টার সিটি। সেবার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ‘রেলিগেশন জোন’-এ থাকার রেকর্ড গড়া লেস্টার (১৪০ দিন) পরের মৌসুমে জিতে নেয় শিরোপা!

১৮. স্টোক সিটির ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি লম্বা স্ট্রাইকার পিটার ক্রাউচ লিগে হেড করে ৫০ গোল করেছেন। লিগে অংশ নেওয়া এমন ১৬টি দল রয়েছে, যারা ক্রাউচের (হেড থেকে করা) সমান গোলও করতে পারেনি!

১৯. কমপক্ষে ১০টির বেশি ম্যাচ পেয়েও জয়হীন থাকা একমাত্র ম্যানেজার টেরি কনোর। অন্যদিকে ৮১০ ম্যাচে কোচের দায়িত্ব পালন করে ৫২৮ জয়ের মুখ দেখেছেন ইউনাইটেড কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। তাঁর জয়ের হার ৬৫.২ শতাংশ।

২০. ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে হেডে হ্যাটট্রিক করা খেলোয়াড় মাত্র দুজন—ডানকান ফার্গুসন ও সলোমন রনডন। ১৯৯৭ সালে এভারটনের হয়ে বোল্টনের বিপক্ষে হেডে তিন গোল করেছিলেন ফার্গুসন। গত বছর সোয়ানসির বিপক্ষে একইভাবে হ্যাটট্রিক করেন ওয়েস্টহামের রনডন।

২১. ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি হলুদ কার্ড দেখেছে চেলসির খেলোয়াড়েরা (১ হাজার ৫৩৬)। খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১৯ হলুদ কার্ড দেখেছেন গ্যারেথ ব্যারি। সবচেয়ে লাল কার্ড দেখেছেন তিন খেলোয়াড় (৮টি): রিচার্ড ডান, ডানকান ফার্গুসন, প্যাট্রিক ভিয়েরা। দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি লাল কার্ড এভারটনের (৮০), পরে আছে আর্সেনাল (৭৯টি)।

অ্যালান শিয়েরার পেনাল্টি থেকে সবচেয়ে বেশে গোল করেছেন,  সবচেয়ে বেশি মিসও করেছেন। ছবি: এএফপি
অ্যালান শিয়েরার পেনাল্টি থেকে সবচেয়ে বেশে গোল করেছেন, সবচেয়ে বেশি মিসও করেছেন। ছবি: এএফপি

২২. ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি গোল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। ১ হাজার ৮৫৬ গোল করেছে রেড ডেভিলরা। আর্সেনাল এ তালিকায় দ্বিতীয়। ইউনাইটেডের থেকে ১৫৮ গোল কম করেছে গানাররা।

২৩. ২০১০-১১ মৌসুমে ৩৮ ম্যাচে ৫৫ গোল করেও অবনমনে নেমে গিয়েছিল ব্ল্যাকপুল। অবনমিত হওয়া দলগুলোর এক আসরে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড।

২৪. ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২২২ গোল হয়েছে এবং সেটা প্রথম মৌসুমে (৯২-৯৩)! প্রথম গোলটি করেছিলেন শেফিল্ড ইউনাইটেডের ব্রায়ান ডিন।

২৫. এক মৌসুমে ন্যূনতম শততম গোলের মাইলফলক ছুঁতে পেরেছে মাত্র তিনটি দল—চেলসি (১০৩ গোল, ২০০৯-১০ মৌসুম), ম্যানচেস্টার সিটি (১০২ গোল, ২০১৩-১৪ মৌসুম), লিভারপুল (১০১ গোল, ২০১৩-১৪ মৌসুম)।