কলম্বিয়ায় হচ্ছে না কোপা আমেরিকার ম্যাচ, আর্জেন্টিনায়ই কি হবে পুরো টুর্নামেন্ট

মেসি-নেইমার লড়বেন কোপা আমেরিকায়।ফাইল ছবি

১১ দিনের মধ্যে সুর পাল্টে গেল দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবলের। তাতে কপাল পুড়ল কলম্বিয়ার।

আর্জেন্টিনার পাশাপাশি এবারের কোপা আমেরিকার যৌথ আয়োজক ছিল কলম্বিয়া। ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়ার কথা ২০২১ কোপা আমেরিকা, প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী ১০ জুলাই টুর্নামেন্টের ফাইনালও কলম্বিয়ার বারানকিয়ায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশটিতে সরকারের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ। সে কারণে কলম্বিয়ায় কোপা আমেরিকার ম্যাচ আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কনমেবল।

কলম্বিয়ায় সরকার কর ও স্বাস্থ্যসেবায় বদল আনার ঘোষণা দিয়েছিল, সেটি নিয়ে এপ্রিলের শেষ দিক থেকে সেখানে বিক্ষোভ চলছে, যা রূপ নিয়েছে ভয়ংকর সংঘর্ষে। এখন পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে গুঞ্জন শোনা যায়। এর মধ্যেও ৯ মে কলম্বিয়াই কোপা আমেরিকার সহ-আয়োজক থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন কনমেবলের পরিচালক গনসালো বেয়োসো। কিন্তু ১১ দিনের মধ্যে আবার সুর বদলে গেল।

কনমেবল গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে, কলম্বিয়ায় কোপা আমেরিকার ম্যাচ আয়োজন সম্ভব নয়। এখন সে ম্যাচগুলো কোথায় হবে, তা অবশ্য জানা যায়নি। একটা বিকল্প, পুরো টুর্নামেন্টটাই আর্জেন্টিনায় আয়োজিত হতে পারে। অন্যদিকে চিলি আর প্যারাগুয়েও সহ-আয়োজক হওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছে।

কলম্বিয়ান সরকার অবশ্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে গিয়েছিল, যাতে টুর্নামেন্টটা পিছিয়ে নভেম্বরে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু কনমেবল তা মানতে রাজি হয়নি। এমনিতেই এই কোপা আমেরিকা হওয়ার কথা ছিল গত বছরের জুন-জুলাইয়ে, করোনার কারণে তখন টুর্নামেন্ট পিছিয়ে দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের নামও ২০২০ কোপা আমেরিকা থেকে বদলে ২০২১ কোপা আমেরিকা করে দেওয়া হয় (ইউরোপের দেশগুলোর শ্রেষ্ঠত্বসূচক টুর্নামেন্ট ইউরোর ক্ষেত্রে যেটি করেনি উয়েফা, আগামী জুন-জুলাইয়ে আয়োজিত হলেও টুর্নামেন্টটার নাম ২০২০ ইউরোই থাকছে)।

কোপা আমেরিকা নভেম্বরে নিয়ে যাওয়ার জন্য কনমেবলের প্রতি কলম্বিয়ান সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কনমেবল জানায়, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের দিনপঞ্জি ও টুর্নামেন্ট আয়োজনের ক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক প্রস্তুতিসংশ্লিষ্ট নানাবিধ কারণে ২০২১ কোপা আমেরিকা নভেম্বরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দুকুর উৎসাহ ও নিবেদনের জন্য কনমেবল তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ, কৃতজ্ঞ কলম্বিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি রামস জেসুরুন ও তাঁর দলের প্রতিও।

হামেস রদ্রিগেজদের এবার নিজেদের মাটিতে কোপা আমেরিকা খেলা হবে না।
ছবি: সংগৃহীত

কলম্বিয়ায় যে ম্যাচগুলো হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো কোথায় হবে, সেটা নিয়ে কনমেবলের বিবৃতিতে লেখা, ‘কনমেবল নিশ্চিত করছে, ২০২১ কনমেবল কোপা আমেরিকার আয়োজন ঠিক থাকবে। কলম্বিয়ায় যে ম্যাচগুলো হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো কোথায় হবে সেটা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

এখন পর্যন্ত শুধু আর্জেন্টিনায় পুরো টুর্নামেন্টের আয়োজন অথবা কলম্বিয়ার ভাগের ম্যাচগুলো আয়োজনে আগ্রহী চিলি কিংবা প্যারাগুয়ের মধ্যে থেকে কাউকে বেছে নেওয়া—এ দুটি বিকল্পের কথা শোনা যাচ্ছে।

কলম্বিয়ায় এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে গত মাসের শেষ দিকে। প্রেসিডেন্ট ইভান দুকু কর ও স্বাস্থ্যসেবায় কিছু সংশোধনের ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেটি নিয়েই বিক্ষোভ। বিরতিহীনভাবে টানা তিন সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভের সবচেয়ে তীব্র রূপ দেখা যাচ্ছে বোগোতা, মেদেলিন ও কালিতে। এই তিন অঞ্চলে কোপা আমেরিকার বেশ কিছু ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ৪০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। এর মধ্যে কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির মানুষ বিক্ষোভে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে।

এর মধ্যেই দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বসূচক দুই টুর্নামেন্ট কোপা লিবার্তাদোরেসের বেশ কয়েকটি ম্যাচ কলম্বিয়া থেকে সরে গেছে। যেমন বারানকিয়ায় জুনিয়রের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার রিভার প্লেটের ম্যাচ কিংবা আমেরিকা দে কালির বিপক্ষে ব্রাজিলের আতলেতিকো মিনেইরোর ম্যাচ কলম্বিয়ায় হয়নি।

এমন অবস্থায়ও অবশ্য কনমেবল প্রথমে কলম্বিয়ার পাশেই দাঁড়িয়েছিল। কলম্বিয়াই থাকছে কোপা আমেরিকার সহ-আয়োজক, এমন একটা ঘোষণা দিয়েছিল। ম্যাচের সময়ে অদলবদল এনে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে দেখার কথা ৯ মে জানিয়েছিলেন কনমেবলের পরিচালক গনসালো বেয়োসো।

কিন্তু ৯ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্তে ১৮০ ডিগ্রি বদল। হওয়ারই কথা। কলম্বিয়ার রাজপথের উত্তেজনা থামার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া লোকজনও বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে সেখানে কোপা আমেরিকার আয়োজন হয়ে পড়েছে প্রায় অসম্ভব।

আগামী ১৩ জুন শুরু হতে যাওয়া কোপা আমেরিকায় এবার শুধু দক্ষিণ আমেরিকান ১০ দলই থাকছে। দুই অতিথি দল অস্ট্রেলিয়া ও কাতার নাম সরিয়ে নিয়েছে টুর্নামেন্ট থেকে। ১০ দলকে ৫ দলের দুটি গ্রুপে ভাগ করে নেওয়া হবে, সেখান থেকে প্রতি গ্রুপ থেকে ৪টি করে দল যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে।