মেসি বাদ, রোনালদো বাদ, নেইমার-এমবাপ্পেরাও...এবার ব্যালন ডি’অর কে জিতবেন?

নেইমার, লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে একসঙ্গে ব্যালন ডি'অরের মঞ্চে দেখা যাবে নাফাইল ছবি: এএফপি

কদিন আগে ব্যালন ডি’অরের নিয়মে বদলের ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স ফুটবল কর্তৃপক্ষ। ফরাসি সাময়িকীর নতুন এই বদলে কি এরই মধ্যে কপাল পুড়েছে মেসি-রোনালদো-নেইমারদের? এতদিন ব্যালন ডি’অরের মঞ্চ রাঙিয়ে রাখা তারকাদের বেশিরভাগেরই চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে বিদায়ের পর প্রশ্নটা উঠছে। এর লেজ জুড়ে আরেকটা প্রশ্নও আসছে—এবার তাহলে ব্যালন ডি’অর জিতবে কে?

ব্যালন ডি’অরে সব সময়ই চ্যাম্পিয়নস লিগের পারফরম্যান্সের বাড়তি গুরুত্ব তো থাকেই, বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের নির্বাচনে এবার ফরাসি সাময়িকীটি যে নিয়মের বদল এনেছে, তাতে বিশ্বকাপের বছর হয়েও ২০২২ ব্যালন ডি’অরে চ্যাম্পিয়নস লিগের পারফরম্যান্সই সবচেয়ে বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। এবার থেকে ব্যালন ডি’অরে আর পঞ্জিকাবর্ষ নয়, মৌসুমের পারফরম্যান্স বিবেচিত হবে।

এমবাপ্পের পিএসজি বাদ পড়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে
ছবি: রয়টার্স

সেখানেই মেসি, রোনালদো, নেইমার, এমবাপ্পে, হরলান্ডদের কপাল পুড়ছে। মৌসুমের পারফরম্যান্স মানে আগামী জুন পর্যন্ত ম্যাচগুলোতে কে কী করছেন সেটি দেখা হবে। এর মধ্যে ক্লাব ফুটবলে চ্যাম্পিয়নস লিগের বাইরে আর ব্যালন ডি’অরের ভোটে প্রভাব ফেলার মতো উপলক্ষ তো আছে ইউরোপ অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্লে-অফই!

সেখানে কিছু করে দেখিয়ে ব্যালন ডি’অরে বাজির দান পাল্টে দেওয়ার সুযোগ আছে শুধু পর্তুগালের রোনালদো আর পোল্যান্ডের লেভানডফস্কিদের। ফ্রান্স আগেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে ফেলায় এদিক থেকে ‘কপাল পুড়ছে’ এমবাপ্পের! এরই মধ্যে কাতারে যাওয়া নিশ্চিত করে ফেলা মেসির আর্জেন্টিনা আর নেইমারের ব্রাজিল যে ইউরোপের দল নয়, সেটি আলাদা করে বলতে যাওয়াই অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

সব হিসাব এবার তাই চ্যাম্পিয়নস লিগেই চোখ ফেরায়। আর সেখানে মেসি-নেইমার-এমবাপ্পের পিএসজি গত সপ্তাহে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছে, রোনালদোর ইউনাইটেডকে গত পরশু বিদায় করে দিয়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। হরলান্ডের ডর্টমুন্ড তো গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে।

লেভা এবারও গোলের বান ছুটিয়ে চলেছেন
ছবি: রয়টার্স

ব্যালন ডি’অরের মঞ্চে সে ক্ষেত্রে এবার কাকে দেখা যাবে?

সে হিসেবে যাওয়ার আগে এবার থেকে ব্যালন ডি’অরের হিসেব-কিতাবে আরও তিন বদল আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া যাক। এখন থেকে ফিফার সদস্যভুক্ত ১৭০ দেশ নয়, র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ১০০ দেশের কোচ-অধিনায়ক ও মনোনীত সাংবাদিক ভোট দিতে পারবেন। বিশেষজ্ঞ প্যানেলেও এবার বদল আসছে, সেখানে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকবেন দিদিয়ের দ্রগবা। আর শেষ বদলটি সম্ভবত ব্যালন ডি’অর নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের বড় একটা সংশয় ঘোচাবে। এবার থেকে দলীয় সাফল্যের চেয়েও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সব হিসেবে নিয়ে তাহলে এবার দৌড়ে এগিয়ে থাকছেন কারা?

রবার্ট লেভানডফস্কি

ফ্রান্স ফুটবলের কাছে সম্ভবত একটা ব্যালন ডি’অর পাওয়া বায়ার্ন মিউনিখের পোলিশ স্ট্রাইকারের। করোনার কারণে ২০২০ সালে ব্যালন ডি’অর দেয়নি তারা, সে বছরে রবার্ট লেভানডফস্কির পারফরম্যান্সে তাঁর ব্যালন ডি’অর পাওয়া নিশ্চিতই ছিল। এবার বুঝি পাওনাটা পুরোপুরি বুঝে নেবেন লেভা?

এই মুহূর্তে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা (১২ গোল) লেভা, মৌসুমে সব মিলিয়ে ৩৬ ম্যাচে ৪৩ গোল। দলীয় সাফল্য কম হলেও বিবেচিত তো হবে, সেখানেও সর্বজয়ের পথে লেভা। নিজের টানা অষ্টম বুন্দেসলিগা তো জেতা অনেকটা নিশ্চিতই, এখনো চ্যাম্পিয়ন লিগ আর জার্মান কাপেও টিকে আছে লেভার বায়ার্ন।

বেনজেমা গত মৌসুমে ব্যালন ডি'অরে তৃতীয় হয়েছেন। এবার প্রথম হবেন?
ছবি: রয়টার্স

করিম বেনজেমা

একটা পারফরম্যান্সে ব্যালন ডি’অর দেওয়ার সুযোগ থাকলে পিএসজির বিপক্ষে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের পরই সেটা পেয়ে যেতেন। অবিশ্বাস্য গল্প লিখে পিএসজিকে বিদায় করে দেওয়ার পথে দ্বিতীয় লেগের ৬০ থেকে ৭৮—এই ১৮ মিনিটেই হ্যাটট্রিক করেছেন বেনজেমা। ২০১৮ সালে রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পর থেকেই ক্লাবটার আক্রমণের দায়িত্ব পুরোটা তাঁর কাঁধে, সেটি পালনে এই ৩৪ বছর বয়সে এসে যেন পুরোনো ওয়াইনের মতো আরও ঝলসে উঠছেন।

লিগে মৌসুমে ২০ গোল হয়ে গেছে, পিএসজির বিপক্ষে হ্যাটট্রিকে রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাও বনে গেছেন। মৌসুমে এ নিয়ে ৩৩ ম্যাচে গোল করেছেন ৩০টি, করিয়েছেন আরও ১২টি। ফ্রান্সের হয়ে নেশনস লিগও জিতেছেন।

লিভারপুলে মৌসুমের শুরুটা দারুণ হয়েছে সালাহর
ছবি: রয়টার্স

মো সালাহ

মাত্র লিগ কাপ জিতেছে লিভারপুল, এখনো লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ আর এফএ কাপের দৌড়ে আছে। শেষ পর্যন্ত এ তিন শিরোপার এক-দুটি লিভারপুল জিতে গেলে সালাহর ব্যালন ডি’অরের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে নিশ্চিত। মৌসুমের শুরুটা যে তেমনই হয়েছিল মিশরীয় ফরোয়ার্ডের। গতকাল পর্যন্ত ২০ গোল নিয়ে প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন তিনি। সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে গোল ২৮টি, করিয়েছেন আরও ১০টি।

কিলিয়ান এমবাপ্পে

চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে তাঁর পিএসজি বাদ পড়েছে ঠিকই, কিন্তু দলের চেয়ে ব্যক্তির পারফরম্যান্সই বেশি বিবেচিত হবে বলেই এমবাপ্পের সম্ভাবনা আরও বাড়ছে। মৌসুমে পিএসজির সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড (২৫ গোল) তাঁর, করিয়েছেনও সবচেয়ে বেশি (১৭ গোল)। বেনজেমার সঙ্গে ফরাসি দলে নেশনস লিগও জিতেছেন।