রোনালদোর ইউনাইটেডে ফেরার পেছনের গল্প ও কিছু করুণ বাস্তবতা

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যোগ দেওয়ায় দলবদল মৌসুমটা স্বপ্নের মতো কাটল ইউনাইটেডেরফাইল ছবি: এএফপি

এখনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা আর ক্লাবের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে, কিন্তু সে সম্ভবত শুধু আনুষ্ঠানিকতাই! ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ফিরছেন, এটাই নিশ্চিত। ইংলিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে লেখা কলামে ইতালিয়ান সাংবাদিক ফাব্রিজিও রোমানো জানিয়েছেন, রোনালদোর জন্য জুভেন্টাসকে প্রাথমিকভাবে ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরোর পাশাপাশি কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে আরও ৮০ লাখ ইউরো দেবে ম্যান ইউনাইটেড। যদিও এই ‘শর্তসাপেক্ষ অর্থে’র মধ্যে ৫০ লাখ ইউরোর বিপরীতে শর্তগুলো এতই সহজ যে রোমানো লিখেছেন, দলবদলের অঙ্কটা তাই দাঁড়াচ্ছে ২ কোটি ইউরো ও শর্তসাপেক্ষ ৩০ লাখ ইউরো।

অঙ্কটা যা-ই হোক, দিন শেষে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ‘ঘরে’ ফেরাই মূল ব্যাপার। কিন্তু যে নাটকীয়তায় ফিরেছেন, তা-ও দলবদলের বাজারের একেবারে শেষ দিকে এসে, সেটি নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। প্রশ্নও জাগছে। এ নিয়ে ইসপিএনে নিজের লেখা কলামে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন ইএসপিএনের ফুটবল বিশেষজ্ঞ গাব্রিয়েল মারকোত্তি। রোনালদোর দলবদলের পেছনের পুরো গল্পের পাশাপাশি তুলে ধরেছেন করুণ একটা বাস্তবতার কথা। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সেটি সরাসরি তুলে ধরা হলো...

পেছনের গল্প

এবং শেষ পর্যন্ত তিনি ফিরে এসেছেন। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফেরার মতোই আকর্ষণীয় হয়তো যেভাবে দলবদলটা হয়েছে সেটি। এই দলবদলটা (রোনালদো টু ম্যান ইউনাইটেড) কেন সবদিক থেকে ঠিক, এটা গত মে মাসেও আমাদের অনেকেই ভেবেছিলেন।

এমন নয় যে জুভেন্টাস তাঁকে কেনার জন্য এ ক্লাব–ও ক্লাবের কাছে প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আগামী দুই বছরে ৩০ কোটি ইউরোরও বেশি ক্ষতির শঙ্কায় থাকা ক্লাবটা এটা খুব পরিষ্কারভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে তারা যদি রোনালদোর দলবদলের অঙ্কের অবলোপনে বাকি থাকা ২৮ মিলিয়ন ইউরোর সমান প্রস্তাব পায়, তারা রোনালদোর ক্লাব ছাড়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না (একজন খেলোয়াড়কে কেনার সময় একটা ক্লাবের যত অর্থ খরচ হয়, সেটিকে একবারে খরচ হিসেবে না দেখিয়ে চুক্তির প্রতিবছরে সমানভাবে ভাগ করে হিসাবের খাতায় খরচ হিসেবে দেখানো হয়, সেটাই অবলোপন।

২০১৮ সালে চার বছরের চুক্তিতে জুভেন্টাসে যাওয়া রোনালদোর দলবদলের মোট খরচ ১১২ মিলিয়ন বা ১১ কোটি ২০ লাখ, সে হিসাবে চুক্তির বাকি থাকা বছরে জুভেন্টাসকে খরচ হিসাবে দেখাতে হতো ২৮ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৮০ লাখ ইউরো, সেটাই আদায় করতে চাইছিল জুভেন্টাস)। জুভেন্টাসে তাঁর চুক্তিতে এক বছর বাকি ছিল, চুক্তি নবায়ন অনেক কঠিন একটা সিদ্ধান্ত হতো, ক্লাবও চাইছিল তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে দলকে নতুন করে গড়তে।

রোনালদোর খুব কাছের সাংবাদিক এদু আগিরেবলেছিলেন যে রিয়াল মাদ্রিদ রোনালদোকে ফেরাতে চায়। কিন্তু সে সংবাদের কারণে বিরল ঘটনা ঘটল, টুইটারে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলত্তি জনসমক্ষে সে দাবি অস্বীকার করলেন।

অন্যদিকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হাতে তাঁকে সই করানোর এবং তাঁর আকাশছোঁয়া বেতন দেওয়ার মতো অর্থ ছিল। উলে গুনার সুলশার আগে থেকেই চাইছিলেন দলে একজন অভিজ্ঞ গোলশিকারিকে রাখতে, যিনি আক্রমণে জৌলুশ আনার পাশাপাশি তরুণদের জন্য রোল মডেলও হবে। সুলশার সেটি এত বেশি করেই চাইছিলেন যে এদিনসন কাভানির শেষ হতে যাওয়া চুক্তি সে কারণেই আরও এক বছর বাড়িয়ে নিয়েছিল।

রোনালদো যদি আরও আগেই জুভেন্টাস ছাড়তে চাইতেন, ম্যান ইউনাইটেড সবদিক বিচারেই যুক্তিযুক্ত গন্তব্য হতো তাঁর জন্য। আর কাভানি ক্লাব ছেড়ে গেলে কিছু বেতন বেঁচে যেত, যেটা রোনালদোর বেতনের কিছুটা (অন্তত তিন ভাগের এক ভাগ) জোগাত।

কিন্তু সেটা হয়নি। কাভানির চুক্তি এক বছর বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল, ১০ মে সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে ইউনাইটেড। যেটা সত্যি বলতে রোনালদোর ফেরার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে...অন্তত আমরা তেমনটাই ভেবেছিলাম। কারণ, গত কদিনে হঠাৎ করেই আমরা আবিষ্কার করলাম, রোনালদো দল বদলাতে চান।

এমন ছবি এখন নিয়মিত দেখা যাবে
ছবি: টুইটার

সেটা যে চান, সেই ইঙ্গিত আগেই ছিল, কিন্তু দুই সপ্তাহ আগেও সে ইঙ্গিতগুলো এত বেশি স্পষ্ট ছিল না। রোনালদোর খুব কাছের সাংবাদিক এদু আগিরে—এতই কাছের যে তাঁদের একসঙ্গে ছুটি কাটানোর ছবিও আছে—বলেছিলেন যে রিয়াল মাদ্রিদ রোনালদোকে ফেরাতে চায়। কিন্তু সে সংবাদের কারণে বিরল ঘটনা ঘটল, টুইটারে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলত্তি জনসমক্ষে সে দাবি অস্বীকার করলেন। সেটার কারণে আবার ইনস্টাগ্রামে রোনালদোর লম্বা পোস্ট এল, যেখানে তিনি নিজে কতটা মনোযোগী, সেটা বলেছেন, বলেছেন লোকজনকে তাঁর নাম নিয়ে আর খেলতে দিতে চান না (নাম থেকে মনে পড়ল, পুরো পোস্টে ক্লাব জুভেন্টাসের নাম সব মিলিয়ে শূন্যবার লিখেছেন!)

এরপর এই সপ্তাহের শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদ প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের কাছে কিলিয়ান এমবাপ্পের জন্য ১৬ কোটি ইউরোর প্রস্তাব নিয়ে গেল। এরপরই রোনালদোর ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়ার গুঞ্জন শুরু হলো। বিকল্প হিসেবে এমবাপ্পে পিএসজি ছাড়লে রোনালদোর পিএসজিতে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা উঠে এল। পিএসজিতে তিনি থাকতেন লিওনেল মেসির সঙ্গে একই দলে, যেটা রজার ফেদেরার-রাফায়েল নাদালকে কিংবা (যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল কিংবদন্তি) ম্যাজিক জনসন আর ল্যারি বার্ডকে একসঙ্গে খেলতে দেখার ফুটবলীয় রূপ হতো।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সব গুঞ্জন গুরুতর রূপ নেওয়া শুরু হলো। রোনালদোর মুখপাত্র জর্জ মেন্দেস তুরিনে গেলেন জুভেন্টাসকে এটা বলতে যে রোনালদো ক্লাব ছাড়তে চান। সঙ্গে মেন্দেস এটাও যোগ করলেন যে তিনি রোনালদোর জন্য ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে চুক্তি করার খুব কাছে চলে গেছেন। জুভেন্টাস সেটা মেনে নিয়েছে, ব্যাপারটা এভাবে নিয়েছে যে তাদের দলের পুনর্গঠন এক বছর আগেই শুরু হচ্ছে। তারা জুভেন্টাসকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে রোনালদোকে ছাড়ার জন্য সিটির কাছ থেকে ২৮ মিলিয়ন (২ কোটি ৮০ লাখ) ইউরোর প্রস্তাব চায় তারা, মেন্দেস তাদের বললেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রস্তাব আসবে। মেন্দেস এরপর সেসনাতে (উড়োজাহাজের নাম) চড়ে প্যারিসে উড়ে গেছেন, বিকেলটা সেখানেই কাটিয়েছেন।

সেখানে নামার পর তিনি পিএসজির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না, এমবাপ্পে ক্লাব ছাড়লে পিএসজি রোনালদোর গন্তব্য হতে পারে কি না, সেটা আমরা জানি না। পিএসজি আরও আগেই বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছিল যে রোনালদো তাদের পরিকল্পনায় নেই। অবশ্য তারা তো এটাও বলেছে যে এমবাপ্পে বিক্রির জন্য নয়, রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে এমবাপ্পের দলবদলের ব্যাপারে আলোচনায় বসারই কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই, কিন্তু সে মুহূর্তে তারা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে আলোচনা করছিল।

আরও পড়ুন

পরিস্থিতি বদলালে পরিকল্পনা বদলায়। আর গত দুই দশকে খেলোয়াড়দের মুখপাত্রদের মধ্যে অন্যতম সেরা জর্জ মেন্দেস এটা অন্য অনেকের চেয়ে ভালো বোঝেন। সব পক্ষকে বাজিয়ে দেখার উদ্দেশ্যেই তাঁর প্যারিসে যাওয়া, বৃহস্পতিবার যখন তিনি রোনালদোকে কেনার প্রস্তাব নিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে গেছেন, তখন সেটাও ছিল আরেকটা পক্ষকে বাজিয়ে দেখা। ইউনাইটেডকে যখন বাজিয়ে দেখছেন, তখন একই সঙ্গে তিনি ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলছিলেন, সিটি জুভেন্টাসের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।

ইউরোপে শুক্রবার মধ্যাহ্নভোজের সময় পেরোতে পেরোতে সুরটাই বদলে গেল। আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে ম্যান সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা বললেন, ‘ক্রিস্টিয়ানো ঠিক করবে ও কোথায় খেলবে, ম্যানচেস্টার সিটি কিংবা আমি নই...এই মুহূর্তে সেটা (রোনালদোর সিটিতে যাওয়া) অনেক দূরের ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে।’ কথাটা অনেকটা ‘আমাদের প্রস্তাব মেনে নিলে নাও, না নিলে যাও’ বিবৃতি মনে হয়েছিল।

সম্ভবত ঝামেলাটা ছিল জুভেন্টাস যে দলবদলের অঙ্ক চাইছিল সেটা নিয়ে, ইউরোপজুড়ে প্রতিবেদন তা-ই বলছিল। সিটি রোনালদোর জন্য ১৫ মিলিয়নের বেশি প্রস্তাব দিতে রাজি ছিল না। হয়তো ঝামেলাটা রোনালদোর বেতন নিয়ে ছিল, জুভেন্টাসে তিনি কর বাদ দেওয়ার পর বছরে ৩১ মিলিয়ন ইউরো বেতন পেতেন। করসহ যোগ করলে জুভেন্টাসের খরচ হতো ৪৮.৩৬ মিলিয়ন—সপ্তাহে ৯ লাখ ইউরোরও বেশি, যেটা প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড়ের বেতনেরও আড়াই গুণ!

গার্দিওলার বক্তব্যের কয়েক মিনিট পর কয়েক মাইল দূরে সুলশার তাঁর সংবাদ সম্মেলনে রোনালদোর ফেরার দরজা খুলে দিলেন, ‘আমি ভাবিনি ক্রিস্টিয়ানো জুভেন্টাস ছাড়বে। ও যদি কখনো জুভেন্টাস থেকে সরতে চায়, ও জানে আমরা এখানে আছি...দেখা যাক ক্রিস্টিয়ানোর দলবদলের ব্যাপারে কী হয়!’

একজন কোচ যখন এত সরাসরি বলেন, তা-ও আবার সুলশারের মতো ঝুঁকি নিতে না চাওয়া মানুষ, আপনার বোঝা উচিত কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। কয়েক মিনিট পর সিটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিল তারা রোনালদো বাজি থেকে সরে যাচ্ছে। এরপর যেটা নিশ্চিত হয়ে গেল, কয়েক ঘণ্টা পর ইউনাইটেডের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট সেটা নিশ্চিত করে জানিয়ে দিল।

করুণ বাস্তবতা

ক্রিস্টিয়ানো আর ইউনাইটেড দুই পক্ষের জন্যই এই দলবদলটা ঠিক হয়েছে কি না, সেটা পরে বিশ্লেষণ করে দেখার, হিসাব করার সময় পাওয়া যাবে। আপাতত দলবদলটার পেছনে যত কলাকৌশল খাটাতে হয়েছে সেটা দেখে আপনি চমকে যেতে বাধ্য হবেন।

প্রথমত দলবদলের সময়টাই অন্য রকম। ক্রিস্টিয়ানো জুভেন্টাস ছাড়তে চাইলে দলবদল মৌসুমের শেষ পর্যন্ত এত দেরি কেন করলেন? এমন তো নয় যে গত এক সপ্তাহে কিছু ঘটে গেছে, যেটা হঠাৎ রোনালদোর মধ্যে জুভেন্টাস ছাড়ার ইচ্ছা জাগিয়েছে। ক্লাবের আর্থিক অবস্থাও আগস্টের মাঝামাঝিতে এসে হঠাৎ করে আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়ে যায়নি।

এমনও হয়নি যে রোনালদো হঠাৎ করেই ম্যাক্স আলেগ্রিকে দুই বছর পর দেখেছেন (জুভেন্টাসে রোনালদোর প্রথম মৌসুমেও কোচ ছিলেন মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি) এবং তাঁর মনে হয়েছে, ‘নাহ, আমি এই লোকের অধীনে খেলব না।’ এমনও নয় যে জুভেন্টাস তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা রোনালদোর চারপাশে তারকায় ঠাসা দল বানাতে খেলোয়াড় কিনবে এবং সেটা না হওয়ায় রোনালদো দল বদলাতে চেয়েছেন। রোনালদো আগে থেকেই খুব ভালোভাবেই জানতেন যে মানুয়েল লোকাতেল্লির বাইরে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো খেলোয়াড় কিনবে না জুভেন্টাস।

আরও পড়ুন

সত্যি বলতে এখানে তাঁর জুভেন্টাস ছাড়ার ইচ্ছার চেয়েও অন্য জায়গায় কী সুযোগ আছে, সেই বিবেচনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই মনে হচ্ছে।

তাঁর খরচ জোগাতে পারে এমন গন্তব্য শুধু চারটিই ছিল: রিয়াল মাদ্রিদ, পিএসজি, ম্যান সিটি ও ম্যান ইউনাইটেড। মাদ্রিদ এমবাপ্পেকে চায়, পিএসজিকে এমবাপ্পেকে রাখতে চায়। মেন্দেস জানতেন যে এমবাপ্পে দারুণ খেলোয়াড় হলেও তাঁর পক্ষে একসঙ্গে দুই ক্লাবে খেলা সম্ভব নয়, আর যে ক্লাব এমবাপ্পেকে পাবে না, তারা হয়তো রোনালদোর জন্য আগ্রহ দেখাবে। একইভাবে হ্যারি কেইনকে না পাওয়ায় ম্যান সিটিও রোনালদোর জন্য একটা বিকল্প হতে পারত।

ম্যান ইউনাইটেড? তারা সব সময়ই গুঞ্জনে ছিল। আর রোনালদোকে আরও আগে (মে মাসে কাভানির চুক্তি নবায়নের আগে) সই করানো যখন তাদের জন্য ভালো হতো, তখন যেহেতু তারা রোনালদোকে পাওয়ার চেষ্টা করেনি, সে ব্যাপারটা এখানে আর পাত্তা পেল না। আত্মদম্ভ ফুটবলের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ, আর একজন খেলোয়াড়কে পাওয়ার দৌড়ে (তা-ও রোনালদোর মতো ইউনাইটেডের কিংবদন্তি) ম্যান সিটিকে টপকে যাওয়ার তৃপ্তিটা এখানে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারটাই রোনালদোর দলবদলের পুরো গল্পে একটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে রোনালদো এমন কোনো খেলোয়াড় নন, যাঁকে কেনার প্রস্তাব নিয়ে আপনাকে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হবে। রোনালদোকে পেতে ক্লাবগুলো সব সময় তাঁর চারপাশে ঘুরবে, তাঁর মন জোগানোর চেষ্টা করবে, তাঁর মনোযোগ কাড়তে ক্লাবগুলো নিজেদের মধ্যে দলবদল-যুদ্ধে নামবে...এমনটাই ভাবে সবাই। কিন্তু আমরা দেখলাম রোনালদোকে নেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে মেন্দেস দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন।

আমরা খেলাটার আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে কথা বলছি। হ্যাঁ, তাঁর বয়স ৩৬, কিন্তু ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের মধ্যে গত মৌসুমে লিগে তাঁর গোলসংখ্যা (২৯) শুধু দুজন খেলোয়াড় ছাড়া (রবার্ট লেভানডফস্কি বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ৪১ গোল করেছিলেন, লিওনেল মেসি বার্সেলোনার হয়ে করেছিলেন ৩০ গোল) বাকি সবার চেয়ে বেশি ছিল। ইউরোতেও তাঁর গোল্ডেন বুট জেতার কীর্তি ছয় বছর নয়, ছয় সপ্তাহ আগের কথা! তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন এমন যে কেউ তাঁকে পছন্দ করুন বা না করুন, তাঁর পেশাদারি মনোভাব ও তাঁর ফিটনেসের প্রশংসা নিশ্চিতভাবেই করবেন।

কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রেই এমন হলো। তাঁর দলবদল হলো, কিন্তু তাঁকে ক্লাব কিনল এমনভাবে যেন তিনি প্রথম পছন্দে ছিলেন না। কিনল দলবদলের বাজারের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে। যে দলবদলের জন্য তাঁর মুখপাত্রকে সারা দিনরাত খাটতে হয়েছে।
এটা রোনালদোর সমালোচনা নয়। এই দলবদল এটাই বোঝায় যে কোভিড-পরবর্তী সময়ের বাস্তবতা অনেক ক্লাবকেই করুণ চেহারায় এনে দাঁড় করায়। এটাই বোঝায় যে অনেক মুখপাত্রই আগে যেখানে ক্লাবগুলোকে, খেলোয়াড়দের হাতের পুতুলের মতো নাচাতে পারতেন, সেটা এখন আর অত সহজে করতে পারেন না।