ট্রাম্পের বিশ্বাস, বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে আসবেন ‘একঘরে’ পুতিন
২০২৬ সালের বিশ্বকাপ দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন ভ্লাদিমির পুতিন। তিন বছর আগে ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রায় একঘরে হয়ে থাকা রুশ প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্রয়ের তারিখ ঘোষণা করেন ট্রাম্প। সেখানে পুতিনের প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, ‘একজন মানুষ আছেন, তাঁর নাম ভ্লাদিমির পুতিন। আমার বিশ্বাস, তিনি আসবেন, আর সেটা নির্ভর করছে কী ঘটে তার ওপর। তিনি আসতে পারেন, আবার নাও আসতে পারেন, কী ঘটে তার ওপর এটা নির্ভর করছে।’ ট্রাম্পের দাবি পুতিন ‘অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে’ ২০২৬ বিশ্বকাপে আসতে চান।
ট্রাম্প আরও জানান, আলাস্কায় কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একসঙ্গে তোলা একটি ছবি পুতিন তাঁকে পাঠিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ছবিটি বের করেও দেখান ট্রাম্প। এই ছবিটি স্বাক্ষর করে ফেরত পাঠানোর কথাও বললেন ট্রাম্প, ‘তিনি আমার প্রতি এবং আমাদের দেশের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। অন্যদের ক্ষেত্রে ততটা শ্রদ্ধাশীল নন। তবে আমি ছবিটিতে সই করব।’
বিশ্বকাপে পুতিনকে আমন্ত্রণ জানানো মানে রাশিয়াকে আবারও রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে টেনে আনার চেষ্টা। ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়া ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৪ অলিম্পিকে নিষিদ্ধ হয়। এর আগে ২০১৮ সালে নিজ দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপে উপস্থিত ছিলেন পুতিন।
পুতিন অতীতেও খেলাধুলার আসরকে ব্যবহার করেছেন নিজের সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে তিনি বলেছিলেন, রাশিয়া ফুটবলপ্রেমীদের জন্য ‘উন্মুক্ত, অতিথিপরায়ণ ও বন্ধুসুলভ’ দেশ। ক্রিমিয়া দখলের পর পশ্চিমা বিশ্বে যে একঘরে ভাব তৈরি হয়েছিল, সেটি কাটানোর চেষ্টা ছিল ওই বক্তব্যে।
২০১৪ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। যদিও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। রাশিয়ার সেই আক্রমণই ছিল আট বছর পর পুরো ইউক্রেন দখলের পথে পুতিনের নেওয়া প্রথম পদক্ষেপ। এদিকে শুক্রবার এক মার্কিন কারখানায় রুশ বিমান হামলা নিয়ে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এতে খুশি নই। ওই যুদ্ধ নিয়ে কোনো কিছুতেই আমি খুশি নই।’
আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প জানান, তিনি পুতিন ও ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করছেন। তবে ক্রেমলিন এখনো সে আমন্ত্রণ নিশ্চিত করেনি। সমালোচকেরা বলছেন, রাশিয়াসহ নানা বিষয়ে ট্রাম্প প্রায়ই ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে’ সমাধান আনার প্রতিশ্রুতি দেন, যা সচরাচর বাস্তবে রূপ নেয় না। গত মে মাসেও তিনি বলেছিলেন, ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে’ বুঝতে পারবেন পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে সত্যিই আন্তরিক কি না।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো ট্রাম্পকে ২০২৬ বিশ্বকাপ ফাইনালের একটি টিকিট তুলে দেন। এ সময় ইনফান্তিনো বিশ্বকাপ ট্রফিটি ট্রাম্পের হাতে দিয়ে মনে করিয়ে দেন, ‘ফিফা সভাপতি, দেশগুলোর প্রেসিডেন্ট এবং যাঁরা জেতে শুধু তাঁরাই এটি (বিশ্বকাপ ট্রফি) ছুঁতে পারবেন। কারণ, ট্রফিটি শুধু বিজয়ীদের জন্য।’ ইনফান্তিনো এরপর ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন, ‘যেহেতু আপনিও একজন বিজয়ী, অবশ্যই আপনিও স্পর্শ করতে পারেন।’
জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ওভাল অফিসকে সোনালি রঙে সাজিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রফি হাতে নিয়ে তিনি বলেন, ‘ওটা দেয়ালে দারুণ মানাবে। এটি দারুণ এক সোনার খণ্ড।’
শুধু তা–ই নয়, ট্রাম্প ওভাল অফিসে প্রদর্শনের জন্য বিশ্বকাপ ট্রফিটি রেখে দেওয়া নিয়ে মজাও করেন ইনফান্তিনোর সঙ্গে, ‘আমি কি এটা রেখে দিতে পারি।’
তবে যুক্তরাষ্ট্র দল ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পারবে কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইনফান্তিনো যখন বলেন, স্বাগতিক দল সব সময় জয়ের ভালো সম্ভাবনা রাখে, তখন ট্রাম্প মন্তব্য করেন, ‘আমেরিকার দল হয়তো কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারে।’
এ সময় নিজের ছেলে ব্যারনের প্রসঙ্গও টানেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ১৯ বছর বয়সী ব্যারনের উচ্চতা ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং তিনি গোলরক্ষক হিসেবে দারুণ খেলতে পারেন। ট্রাম্পের ভাষ্য, ‘এখনকার গোলরক্ষকেরা অনেক লম্বা হয়…ব্যারন নিখুঁত এক গোলকিপার হবে।’