বিশ্বকাপে যে কৌশলে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আর্জেন্টিনা

২০২২ বিশ্বকাপে সৌদি আরবের কাছে হারের পর মেক্সিকোর বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ায় আর্জেন্টিনারয়টার্স

গত বছরের এই সময়ে কাতার বিশ্বকাপে নকআউট দোলাচলে ছিল আর্জেন্টিনা। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে ২–১ গোলে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কায় ছিলেন লিওনেল মেসিরা। তবে পরের দুই ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়িয়ে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে হারিয়ে নকআউটে উঠে যায় আর্জেন্টিনা। শেষ ষোলো থেকে ফাইনাল—একের পর এক নকআউট উতরানোর পথচলাটা ছিল রোমাঞ্চকর, যা আরও মহিমান্বিত হয়ে ওঠে ১৮ ডিসেম্বর ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি জেতার মাধ্যমে।

আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের পথে অনেকের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য আর নানা কৌশলের ব্যবহার ছিল। বিশ্বকাপের এক বছর পর ফিফা ট্রেনিং সেন্টার বিশ্লেষণ করে বের করেছে, ঠিক কোন কৌশল কাজে লাগিয়ে বিশ্বকাপে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আর্জেন্টিনা। এ ক্ষেত্রে কার্যকর কৌশল হিসেবে উঠে এসেছে সেট–পিসের সফল প্রয়োগ।

দেখা গেছে, আর্জেন্টিনা বেশির ভাগ সময়ই বক্সের ভেতরে পেনাল্টি এলাকায় বল ফেলেনি। এর বদলে তারা ছোট ছোট পাস খেলে ডি–বক্সের কাছাকাছি পাহারাহীন থাকা এনজো ফার্নান্দেজকে বল বাড়িয়েছে। আর তাঁর কাছ থেকেই গোলমুখে শট গেছে।

ফিফা ট্রেনিং সেন্টার বলছে, আর্জেন্টিনার সাধারণ কৌশলের মধ্যে ছিল ৫–৬ জন খেলোয়াড় নিয়ে ধাপভিত্তিক ফরমেশন নিয়ে আক্রমণ, একাধিক ফরোয়ার্ড দ্বারা প্লেয়ার–টু–প্লেয়ার মার্ক করা, সামনের পোস্টে জটলা বাড়ানো, ছোট কর্নারের জন্য তৃতীয় একজনকে ব্যবহার এবং পোস্টের সামনের অংশ বা গোলের মাঝের অংশ লক্ষ্য করা।

আর বিশেষ কৌশল ছিল তিনটি। ১. ডিফেন্ডারদের মাধ্যমে লম্বা করে বল বাড়ানোর মাধ্যমে খেলা কমিয়ে আনা। ২. বক্সের চারপাশে খেলে এনজোর জন্য মুক্ত জায়গা বাড়ানো। ৩. মেসি এবং দি মারিয়ার পোস্টের সামনে বল গ্রহণ/গোলে শটের সামর্থ্যকে কাজে লাগানো।

আরও পড়ুন

ফিফা ট্রেনিং সেন্টার আর্জেন্টিনার সেট পিসের ব্যবহার নিয়ে চারটি ভিডিও ক্লিপ উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছে। এর প্রথমটি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের। দেখা গেছে, কর্নার নেওয়ার সময় আর্জেন্টিনার তিনজন খেলোয়াড় ডাচ ডি–বক্সে দাঁড়ানো। মাঝমাঠ থেকে ধীরে ধীরে ভেতরে ঢোকার মুখে আরও তিনজন। এর মাধ্যমে নেদারল্যান্ডস ডিফেন্ডারদের ধারণা হয়, বল পোস্টের দিকে আসবে।

ওই সময় মেসি ছিলেন বক্সের একপাশে, তাঁকে পাহারা দিচ্ছিলেন একজন। দেখা গেছে, কর্নারের বল ডাচ ডি–বক্সে না গিয়ে দ্রুত বক্সের বাইরে থাকা মেসির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই বক্সের বেশ কয়েক গজ দূরে থাকা এনজো দৌড় দেন ভেতরের দিকে। এরপর বক্সের বাইরে থেকে নেন বাঁ পায়ের জোরালো শট। এই শটে অবশ্য গোল হয়নি, বারে লেগে প্রতিহত হয়। কিন্তু এমন কৌশলের প্রয়োগ হয়েছে বারবার।

কোয়ার্টার ফাইনালের আর্জেন্টিনা–নেদারল্যান্ডস ম্যাচ
রয়টার্স

একই ম্যাচের আরেকটি ক্লিপে দেখা যায়, কর্নারের বল নেওয়ার জন্য বক্সের বাইরে চলে গেছেন মেসি। তাঁর পেছনে ছোটেন দুজন পাহারাদার ডিফেন্ডারও। মেসি বল গ্রহণ করতে না করতেই এক আর্জেন্টাইন বক্সের ভেতরে দৌড়ে ঢুকে গেলে সবার মনোযোগ চলে যায় মেসি ও ওই খেলোয়াড়ের দিকে। তবে বল যায় বক্সের বাইরে অরক্ষিত থাকা এনজোর কাছে। এই মিডফিল্ডার আবারও দেখেশুনে জোরালো শটের সুযোগ পেয়ে যান, এটিও অবশ্য পোস্টে লেগে ফিরে যায়।

আরও পড়ুন

চারটি ভিডিও ক্লিপের অপর দুটি গ্রুপ পর্বে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের। এর মধ্যে মেক্সিকোর বিপক্ষে গোলটিতে কর্নারের সময় মেসি বক্সের একপাশে এবং বক্সের ভেতরে তিনজন ছিলেন। এ ছাড়া বক্সে ঢোকার মুখে ছিলেন আরও একজন। মেক্সিকোর ডিফেন্ডাররা তিন দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে এনজোকে অরক্ষিত রেখে দেন। মেসির আলতো করে বাড়ানো বল নিয়ে দৌড়ে ডি–বক্সে ঢুকে দ্রুতই বল জালে জড়ান এনজো। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে করা গোলটি ছিল আর্জেন্টিনার দ্বিতীয়, যা তাদের জয়ের পথে এগিয়ে দিয়ে টুর্নামেন্টে টিকে থাকা নিশ্চিত করে।

মেক্সিকোর বিপক্ষে এনজো ফার্নান্দেজের গোল
ফিফা

মূলত এনজোর বলে জোরালো ও লক্ষ্যে শট নিতে পারা এবং দুই পা ব্যবহারের সক্ষমতা কাজে লাগিয়েই সেট পিস–কে ভিন্নভাবে কার্যকর করেছে আর্জেন্টিনা, যা দলটিকে শেষ পর্যন্ত ট্রফি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে।