এশিয়াকে নিয়ে আর তাচ্ছিল্য নয়
সৌদি আরবের পর জাপান। কাতার বিশ্বকাপে এখন আলোচিত দুই নাম। দুই দলই নিজেদের প্রথম ম্যাচে অঘটন ঘটিয়ে হৃদ্কম্পন বাড়িয়ে দিয়েছে আর্জেন্টনা ও জার্মান শিবিরে। এ থেকেই একটা বিষয় প্রমাণিত হচ্ছে, এশিয়া কিছুটা হলেও উন্নতি করেছে।
সৌদি আরব হারিয়ে দিয়েছে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে। গত রাতে জাপানের শিকার চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। আজ রাতে আরেক সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের বিপক্ষে আমরা দক্ষিণ কোরিয়াকে দেখব। গত বিশ্বকাপে জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল কোরিয়া। সেই হার তখনকার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে দেয়। ফলে কোরিয়ার ওপর প্রত্যাশা বেড়েছে।
গত বিশ্বকাপে জাপান দুই গোল করে বেলজিয়ামকে চোখ রাঙাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত নাটকীয়ভাবে শেষ দিকে তিন গোল খেয়ে হারলেও সেদিন জাপান দেখিয়েছে ফুটবলের প্রতি তাদের নিবেদন। এবার তো শুরুতেই রীতিমতো বাজিমাত করেছে। অথচ এত দিন এশিয়াকে অনেকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বলতেন, ধুর, ‘এরা আর কী খেলবে’। কিন্তু দিন পাল্টাচ্ছে। এশিয়া আর আগের এশিয়া নেই। আগে ফুটবল বলতে ছিল লাতিন আর ইউরোপ। এশিয়াও এখন এগিয়ে আসছে। সামনে দেখবেন এশিয়া আরও ভালো করবে। বিশেষ করে, জাপান, কোরিয়ার মতো দলগুলো মাথা উঁচু করে খেলবে।
জাপান অনেক বছর ধরে ফুটবল খেলছে। ওদের বেশ কয়েকজন ফুটবলার জার্মান লিগে খেলে। আমি দুই–তিনবার জাপান গিয়েছি, জাপান-উরুগুয়ে প্রীতি ম্যাচ দেখেছি জাপানের মাঠে বসে, জাপান তিন গোল খেয়েছে উরুগুয়ের কাছে। জাপানিরা আসলে হার-জিত নিয়ে বেশি ভাবে না। ওরা নিরন্তর খেলেই যাচ্ছে। আর প্রতিনিয়ত পরিকল্পনা করছে কীভাবে উন্নতি করা যায়। উন্নতি যে করছে গতকালের ম্যাচেই সেটা পরিষ্কার। ফুটবল খেলতে আসলে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেই টাকা আছে জাপানের। ওদের অর্থনৈতিক ভিত্তিটা অনেক মজবুত। ফলে জাপান আরও ভালো করবে বলেই আমার বিশ্বাস।
১৯৯৩ সালে জাপানে যখন পেশাদার লিগ (জে লিগ) শুরু হয় তখন আমি আমন্ত্রণ পেয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলাম। সেই উদ্বোধন উপলক্ষে সারা শহর ওরা আলোকসজ্জা করেছিল। মনে হয়েছিল বুঝি বড়দিনের উৎসব চলছে। তখন ওরা আলোকসজ্জার জন্য যে টাকা খরচ করেছিল, সেই টাকায় আমাদের জাতীয় ফুটবল দল ১০ বছর চলতে পারে। তখনই বুঝেছিলাম, জাপান কী করতে চায়। সেই চেষ্টার ফলই এখন পাচ্ছে জাপান। যেমন চেষ্টা এখন চীনও করছে। অন্য দিকে দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার অন্যতম পুরোনো দল। ১৯৮৬ থেকে টানা প্রতিটি বিশ্বকাপেই তারা খেলেছে। উন্নতির চেষ্টাও করে যাচ্ছে। উন্নতি করছেও।
জার্মানির বিপক্ষে জাপানের জয়টা কিন্তু ফাঁকতালে আসেনি। এখন আর আসলে ফাঁকতালে জেতার সুযোগ নেই। সবাই খেলেই জিতছে। যেমনটা আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জিতেছে সৌদি আরব। সৌদির ফুটবলারদের রানিং ছিল দারুণ। কোচের হাইলাইন ডিফেন্স কৌশলটা কাজে লেগেছে। জাপানও খেলেছে কৌশলী ফুটবল। জার্মানিকে শুটিং জোনে খুব একটা জায়গা দেয়নি জাপান। ওদের রানিংও দেখলাম দুর্দান্ত। জয়ের খিদে ছিল জাপানি ফুটবলারদের মনে, ফলে প্রথমে গোল খেলেও হাল ছাড়েনি তারা। আর ম্যাচে কখনোই জাপান এটা মনে করেনি যে সামনে জার্মানি। এই যে সাহসী ফুটবল খেলেছে জাপান, এটাই দলটির হাতে তুলে নিয়েছে তিনটি মূল্যবান পয়েন্ট।
সৌদি আরবের জয়ের পরই আমি প্রথম আলোয় লিখেছিলাম আরও অঘটন ঘটবে কাতার বিশ্বকাপে। চতুর্থ দিনেই দ্বিতীয় অঘটন দেখলাম। সত্যি বলতে চমকপ্রদ এক বিশ্বকাপই অপেক্ষা করছে আমাদের সামনে।