স্বপ্ন বাঁচাতে মাঠে নামছেন হামজারা

বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে হামজা চৌধুরী। কাল ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামেপ্রথম আলো

বাংলাদেশ ফুটবলে আজ গুরুত্বপূর্ণ এক দিন। রাত আটটায় ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে হংকং চায়নার বিপক্ষে মাঠে নামছে জামাল ভুঁইয়াদের দল। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩৮ ধাপ এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াই হবে কঠিন। আজ জিতলে বেঁচে থাকবে বাংলাদেশের এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন, হারলে কার্যত শেষ সব আশা।

বাংলাদেশের মেয়েরা গত জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আগামী মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় তারা মাঠে নামবে। ছেলেদের দল ১৯৮০ সালে একবারই এশিয়ান কাপ খেলেছিল। ৪৫ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো খেলতে হলে বাংলাদেশের আজ হংকং চায়নার বিপক্ষে ৩ পয়েন্টের বিকল্প নেই।

চার দলের গ্রুপে বাংলাদেশ দুই ম্যাচে মাত্র ১ পয়েন্ট পেয়েছে। গত মার্চে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র এবং জুনে ঢাকায় ২-১ গোলে হার সিঙ্গাপুরের কাছে। অন্যদিকে হংকং দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। আজ জিতলে হংকংয়ের পয়েন্ট হবে ৭, বাংলাদেশের থাকবে ১। গ্রুপের অন্য ম্যাচে নিজেদের মাঠে ভারত আজ মুখোমুখি হবে সিঙ্গাপুরের। বাংলাদেশের মতো গ্রুপে ভারতেরও পয়েন্ট ১, সিঙ্গাপুরের ৪। ফলে টিকে থাকতে আজ ভারত ও বাংলাদেশের সামনে জয়টাই বেশি জরুরি।

বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা প্রত্যাশিত সেই জয় দেখতেই মুখিয়ে আছে। জাতীয় দলের অনুশীলন দেখতে গতকাল সন্ধ্যায় অনেকেই জাতীয় স্টেডিয়ামের ফটকে ভিড় জমান। ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন অনুশীলন দেখতে। ম্যাচ নিয়ে উৎসাহ–উদ্দীপনার কমতি নেই। হামজা চৌধুরী ঢাকায় এসেই বলেছেন, ‘আমরা জিতমু।’ তাঁর কথায় ভরসা রাখতে চাইছেন ফুটবলপ্রেমীরা। বাংলাদেশ দলের হোটেল, মাঠ সবখানেই হাজির হয়ে ভক্তরা শুভকামনা জানাচ্ছেন হামজাদের।

অনুশীলনে দৌড়ে শরীরটা ঝালাই করে নেন হামজা ও শমিত সোম
প্রথম আলো

গ্যালারির ১৮ হাজার টিকিট আর ক্লাব হাউসের ১ হাজার টিকিট আধা ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বাফুফে। আজ ম্যাচ শুরুর আগে গানবাজনার আয়োজনও রাখা হয়েছে। তবে বাফুফের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল গত জুনে হওয়া সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচটি। স্টেডিয়ামের ফটক ভেঙে অনেক দর্শক মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন সেদিন। বাফুফে কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, সেই ঘটনা থেকে তাঁরা শিক্ষা নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ দলের মূল আকর্ষণ আজও লেস্টার সিটির হামজা চৌধুরী। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে রক্ষণাত্মক এবং আক্রমণাত্মক—দুই ভূমিকাতেই তিনি ভূমিকা রাখতে সক্ষম। হংকং অবশ্য তাঁকে কড়া পাহারায়ই রাখবে। কিন্তু হামজার মান এবং দক্ষতার কারণে সেটি বড় বাধা হতে পারবে না বলেই আশা। কানাডা জাতীয় দলে দুটি ম্যাচ খেলা শমিত সোমের সঙ্গে ইতালিতে বেড়ে ওঠা ফাহামিদুল ইসলামও দলে থাকায় বাংলাদেশের মাঝমাঠ বেশ শক্তিশালী। বাংলাদেশকে আশাও দেখাচ্ছে এই মাঝমাঠই।

তবে রক্ষণ ও আক্রমণে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। দুই সেন্টার ব্যাক তপু বর্মণ ও তারিক কাজী এবং ফরোয়ার্ড আল আমিন পুরোপুরি ফিট নন। তাঁদের ব্যাপারে আজ সিদ্ধান্ত নেবেন কোচ। অবশ্য হাতে থাকা বিকল্প নিয়েও কোচ কাবরেরা আত্মবিশ্বাসী। কাল সন্ধ্যায় জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলনে নামার আগে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ বলেছেন, ‘হংকং ম্যাচ আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। দর্শকভর্তি স্টেডিয়াম আমাদের মানসিকতাকে আরও উজ্জীবিত করবে। হংকং দলের শক্তি, দুর্বলতা সবই আমরা বিবেচনা করেছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী।’

স্বপ্ন বাজি রেখে জয় তুলে নিতে পারবে তো বাংলাদেশ? সেই লক্ষ্যে অনুশীলনে খেলোয়াড়েরা
প্রথম আলো

হংকংয়ের বিপক্ষে জয়ের কোনো রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। দুদল মুখোমুখি হয়েছে চারবার, হংকংয়ের জয় তিনটি, একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। হংকংয়ের প্রথম জয় দুই দলের প্রথম সাক্ষাতে, ১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে। ৯-১ গোলে উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন কাজী সালাহউদ্দিন।

আরও পড়ুন

এশিয়ার ফুটবলে এখনো পরাশক্তি হয়ে উঠতে না পারলেও বাংলাদেশের চেয়ে বেশ এগিয়ে হংকং। ষাটের দশকে এশিয়ান কাপে তৃতীয়, চতুর্থ হওয়ারও রেকর্ড আছে। তবে এরপরই পতন। ৫৫ বছর পর ২০২৩ সালে সর্বশেষ এশিয়ান কাপে ফেরে দলটি। এবার টানা দ্বিতীয়বার চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্নে বিভোর হংকংয়ের শক্তি বিভিন্ন দেশে বেড়ে ওঠা ১১ ফুটবলার, যাঁরা হংকংয়ের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সেই ভিড়ে আছেন ব্রাজিলের ৫ জন। সঙ্গে ক্যামেরুন, জাপান, স্পেন, জার্মানির মতো দেশে বেড়ে ওঠা ফুটবলারদের নিয়ে এগোচ্ছে দলটি।

হংকংকে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে নিতে মরিয়া দলটির ইংলিশ কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউড খুবই আশাবাদী। ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্তরে ক্লাব ফুটবল খেলেছেন ওয়েস্টউড। জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলন শেষে গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সত্যি বলতে, ম্যাচের ফল নিয়ে আমি পূর্বাভাস দেব না। কারণ, এটি বাংলাদেশের প্রতি অসম্মান হবে। আমরা জানি তারা ভালো দল। আমরা চেষ্টা করব ভালো পারফর্ম করার। যদি না করি, হেরে যাব নিশ্চিত।’

৪৫ বছরের অপেক্ষার ইতি টানতে আজ হংকংয়ের হার দেখতেই মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ।