বাংলাদেশের মেসি—প্রশংসা শুনে হামজা বললেন, ফুটবল একজনের খেলা নয়

জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন হামজা চৌধুরীশামসুল হক

হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে গত সোমবার ঢাকায় এসেছেন। প্রথম দিনেই যোগ দেন অনুশীলনে। আজ দ্বিতীয় দিনে জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন হামজা চৌধুরী। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় উত্তর দিয়েছেন বেশি। কিছু কথা বলেছেন সিলেটির সঙ্গে ইংরেজি মিশিয়ে।

বাংলাদেশ দল মনে করে হামজা বাংলাদেশের লিওনেল মেসি। হামজা নিজে কী মনে করেন। অনুশীলনে যাওয়ার আগে এটাই ছিল হামজার কাছে শেষ প্রশ্ন। লেস্টার সিটির ফুটবলারের কণ্ঠে বিনয়, ‘অবশ্যই না। এটা দলীয় গেম। এমনকি মেসিও যদি বাংলাদেশের হয়ে খেলতেন...তবুও আমাদের ট্যাকটিকস ঠিক করা এবং টিম স্পিরিট গড়ে তোলার মতো চ্যালেঞ্জ থাকতই। ফুটবল কখনো একজনের খেলা নয়। বিশেষ করে আমাকে কেন্দ্র করে তো নয়ই।’

শেষটা টেনেছেন এভাবে, ‘আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা যেভাবে একটা জাতি হিসেবে আছি, সেভাবেই ঐক্যবদ্ধ থাকা। ইনশা আল্লাহ, আমরা একসঙ্গে থাকলে সফল হতে পারব।’

আরও পড়ুন
চাপ সব দেশের লাগিই আছে। আমরা তরুণ দল। অভিজ্ঞতা লইয়া আমরা ইনশা আল্লাহ সফল টিম হইমু।
হামজা চৌধুরী

৯ অক্টোবর জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে হংকংয়ের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ফুটবলপ্রেমীরা হামজার দিকে তাকিয়ে। তিনি নিজে তৈরি? কতটা মানিয়ে নিতে পেরেছেন দলের সঙ্গে? উত্তরটা দেন এভাবে, ‘আমি ভালোভাবে মানিয়ে নিছি। তৃতীয়বারের মতো আমি আইছি। আমার সম্পর্ক খুব ভালো অইছে, প্লেয়ারের সঙ্গে, কোচের সঙ্গে। টিম সপ্তাহখানেক ধরে কঠিন পরিশ্রম করতেছে। খুব ভালা লাগতেছে। আমরা জিতমু।’

জাতীয় স্টেডিয়ামে সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলনে হামজা চৌধুরী
শামসুল হক

বাংলাদেশের চেয়ে হংকং অনেকটা এগিয়ে। ম্যাচটা জেতার কতটা সম্ভাবনা আসলে আছে? হামজা আশা দেখাচ্ছেন, ‘খুব সুযোগ আছে। কোচের সঙ্গে আমি মাতছি। আমাদের ট্যালেন্ট আছে, আক্রমণাত্মক মানসিকতা আছে। শেষ ধাপে অনেক আত্মবিশ্বাসী, ইনশা আল্লাহ আমরা উইনিং টিম হমু।’
ঘরের মাঠে গত ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এবার হংকংয়ের কাছে হারলে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে যাওয়া লড়াই থেকে বিদায়ের ঘণ্টা বাজবে। তাই চাপের ম্যাচ এটি। হামজা সেই চাপ সামলে ৩ পয়েন্টে রাখছেন চোখ, ‘চাপ সব দেশের লাগিই আছে। আমরা তরুণ দল। অভিজ্ঞতা লইয়া আমরা ইনশা আল্লাহ সফল টিম হইমু।’

আরও পড়ুন

প্রশ্ন ছিল, কোচকে তিনি কেমন পরামর্শ দেন। এবার বলেন, ‘কোচ সব বড় সিদ্ধান্ত নেন। কিছু বিষয়ে আমারে জিগায়। সেখানে আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করি।’ সিঙ্গাপুর ম্যাচে কোচের পরিকল্পনা পুরোপুরি কাজ করেনি। এ নিয়ে হামজার ভিন্নমত, ‘আমি মনে করি না সিঙ্গাপুর ম্যাচে পরিকল্পনা কাজ করেনি। দুই গোল আমরা খেয়েছি। আরও ভালা ডিফেন্স করলে হয়তো গোল খাইতাম না। শেষ দিকে আমরা পেনাল্টি পাইতাম। কখনো কখনো সবকিছু আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। তবে আমি বিশ্বাস করি, কোচ-টিম একসঙ্গে ভালোভাবে কাজ করছে। হংকং ভিন্ন চ্যালেঞ্জ, আমরা বিশ্বাস করি অবশ্যই উইন করতে পারমু।’

জাতীয় স্টেডিয়ামে সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলনে হামজা চৌধুরী
শামসুল হক

দলে চোট সমস্যা আছে। দুজন ফরোয়ার্ড ইব্রাহিম ও সুমন রেজা ছিটকে গেছেন। তপু, তারিক কাজী, আল আমিন পুরো ফিট নন। শমিত সোম আসবেন আজ রাতে। হংকং ম্যাচটা তাই বড় চ্যালেঞ্জই। হামজাও তা মানছেন, ‘আবার বলছি, এটা ফুটবল। এই চ্যালেঞ্জটা আমাদের নিতে হবে। কোনো অজুহাত আমরা দেব না। ভারত ও সিঙ্গাপুর ম্যাচেও চোট সমস্যা ছিল। শমিত আজ আসবে। আমাদের স্কোয়াড খুব ভালো। বেঞ্চের খেলোয়াড়দের ওপর খুব বিশ্বাস আছে।’

আরও পড়ুন

সিঙ্গাপুর ম্যাচের শেষ দিকে নিজে গোলের সুযোগ মিস করা নিয়ে বলেন, ‘খুব খারাপ লেগেছিল। সেই মুহূর্তটা রিপ্লেতে আবার দেখেছি আমি। পরেরবার ইনশা আল্লাহ সুযোগ কাজে লাগাতে পারব। আমি জানি আমাকে নিয়ে প্রত্যাশা বড়। আমি সেটা পূরণ করতে পারব।’

সিঙ্গাপুর ম্যাচে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করতে পারা প্রসঙ্গে তাঁর বিশ্লেষণ, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। দিনটা আমাদের পক্ষে ছিল না। শেষ পর্যন্ত খেলা নির্ধারিত হয়েছে কিছু মুহূর্তে। যেমন আমি বলেছি, আমরা দুটি অসাবধানী মুহূর্তে এমন গোল হজম করেছি, যা করা উচিত ছিল না। শেষ দিকে আমাদের একটা পেনাল্টি পেতে পারতাম।’

হংকংয়ের বিপক্ষে জেতার আশা করছেন হামজা
শামসুল হক


গত মাসে নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে আসেননি পায়ের গোড়ালিতে কিছুটা চোট থাকায়। সেটা নিয়ে তাঁর কথা, ‘দুঃখিত, প্রথমবার নেপালে আমি আসিনি, কারণ আমার গোড়ালিতে একটু চোট ছিল। আমরা শুক্রবার রাতে বার্মিংহামের বিপক্ষে খেলেছিলাম, তবে তার আগেও মৌসুমের শুরু হওয়ায় আমার পায়ে কিছুটা ব্যথা ও টান ছিল।’

কোচ তাঁকে রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার ও আক্রমণাত্মক ভূমিকায়ও দেখতে চান। তিনি নিজে কী মনে করেন। হামজা বলেন, ‘জি না, জি না। মিডফিল্ডারের সংজ্ঞাই হলো আক্রমণ ও রক্ষণ দুই জায়গায় অবদান রাখা। তাই ইনশা আল্লাহ, আমি দুটোই ভালোভাবে করতে পারব। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, তবে আমি বেশ রোমাঞ্চিত।’ সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘আমরা কোচের ওপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখি। বিশেষ করে আমি। আমার সঙ্গে কোচের সম্পর্ক খুব ভালো, আমি মনে করি, তিনি খুব বুদ্ধিমান একজন মানুষ। দলটা তরুণ এবং নতুন। তাই সবকিছু একসঙ্গে গাঁথা সহজ নয়।’

বাংলাদেশে এলে তাঁকে নিয়ে মানুষ, গণমাধ্যমের আগ্রহকে কতটা উপভোগ করছেন? খুব উপভোগ করছেন জানিয়ে বলেন, ‘আমার স্ত্রী, সন্তান দ্বিতীয়বারের মতো আইছে। অভিজ্ঞতা পুরো পরিবারের জন্য খুব ভালো। আমি আসার পর যে মায়া করেন সবাই, তাই আমি এখানে আসতে ভালোবাসি।’