ক্লাসিকোর আগুনে ঘি ঢেলেছিলেন ইয়ামাল, পুড়ে গেল বার্সাই
কখনো কখনো মানুষের জিবই হয়ে ওঠে সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র। মুখ ফসকে বেরোনো কোনো কথাই প্রতিপক্ষকে তাতিয়ে দিতে পারে। আর সেটাই হতে পারে নিজের ভরাডুবির কারণ। লামিনে ইয়ামালের ক্ষেত্রে কি সেটাই হয়েছে?
সাবেক বার্সেলোনা মিডফিল্ডার রাফিনিয়া আলকানতারা অন্তত তা-ই মনে করেন। ব্রাজিলিয়ান এই মিডফিল্ডারের মতে, এল ক্লাসিকোর আগে ইয়ামালের মন্তব্যই রিয়ালকে তাতিয়ে দিয়েছিল, যার ফলেই সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রোববার রাতে ২-১ গোলে হেরে গেছে বার্সেলোনা।
‘রিয়াল মাদ্রিদ চুরি করে আর অভিযোগ করে’—এল ক্লাসিকোর আগে ইয়ামালের এ মন্তব্য ভালোভাবে নেননি রিয়ালের খেলোয়াড়েরা। নেওয়ার কথাও না। ইয়ামাল ও বার্সেলোনাকে একটা মোক্ষম জবাব দেওয়ার জন্য তাঁরা যে তাতিয়ে ছিলেন, সেটা ম্যাচেই দেখা গেছে। খেপে ছিলেন রিয়াল সমর্থকেরাও। মাঠে ইয়ামাল যখনই বল স্পর্শ করেছেন, পুরো সান্তিয়াগো বার্নাব্যু দুয়োধ্বনি দিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কিলিয়ান এমবাপ্পে ও জুড বেলিংহামের গোলে ক্লাসিকো জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। দ্বিতীয়ার্ধে এমবাপ্পের নেওয়া এক পেনাল্টি রুখে দেন বার্সেলোনা গোলরক্ষক ভয়চেক শেজনি। কিন্তু তারপরও বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের চেয়ে লিগে ৫ পয়েন্টে এগিয়ে গেল রিয়াল।
ম্যাচের শেষ দিকে রিয়ালের অরেলিয়াঁ চুয়ামেনিকে ফাউল করার দায়ে দ্বিতীয় হলুদ দেখে মাঠ ছাড়েন পেদ্রি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র দুই দলের ডাগআউটে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ করেই দেখা যায়, রিয়ালের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, কারভাহাল ও থিবো কোর্তোয়া সবাই মিলে ইয়ামালের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, সে সময় কারভাহাল নাকি তাঁর স্পেন সতীর্থ ইয়ামালকে বলেছিলেন, ‘তুমি অনেক কথা বলো। এখন বলো দেখি!’
ম্যাচ শেষে এ ঘটনা নিয়ে ডিএজেডএনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক বার্সা মিডফিল্ডার রাফিনিয়া আলকানতারা বলেন, ‘বয়সের কারণে সে অপরিণত আচরণ করেছে, যা বলা উচিত ছিল না। তার কথাই রিয়ালকে বাড়তি প্রেরণা দিয়েছে।’
রিয়ালের সাবেক তারকা গুতিও রাফিনিয়ার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন, ‘লামিনে ইয়ামাল একেবারেই ছোট ছেলে। রিয়াল আর বার্সার ইতিহাস এখনো পুরোপুরি বোঝার বয়স তার হয়নি। ওর মুখে এ রকম কথা শুনলে আমারও ভালো লাগত না।’
বার্নাব্যুতে ম্যাচটা ইয়ামালের একেবারেই ভালো কাটেনি। গোল করেননি, করাতেও পারেননি। এমনকি এই মৌসুমে লা লিগায় এখন পর্যন্ত ইয়ামালের গোল মাত্র ২টি। চোটের কারণেই হয়তো সম্প্রতি তাঁর পারফরম্যান্সে ধার কমেছে।
তবে সতীর্থকে আড়াল করেছেন বার্সেলোনা মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং। হারের পর সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘শেষ বাঁশি বাজতেই রিয়ালের কয়েকজন খেলোয়াড় একসঙ্গে লামিনের দিকে তেড়ে গেল। ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে।’
কারভাহালের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই ডাচ মিডফিল্ডার, ‘যদি কারভাহাল কিছু বলতে চাইত, আলাদা করে বলতে পারত। মাঠে অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে সে। লামিন কখনো বলেনি, রিয়াল প্রতারণা করে—আমি অন্তত শুনিনি।’
বার্সেলোনার ডিফেন্ডার রোনালদ আরাউহোও পাশে দাঁড়িয়েছেন ইয়ামালের। তাঁর ভাষায়, ‘ও দুর্দান্ত পেশাদার। জানে, কী করছে।’
শেষে আরাউহো বললেন ম্যাচের কথাও, ‘হারটা কষ্টের, কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। মৌসুম এখনো অনেক বাকি। নিজেদের ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে।’