বছরের পর বছর যায়, ডাগআউটে রয়ে যান তাঁরা
ক্লাব ফুটবলে কোচ ছাঁটাইয়ের সংস্কৃতি বেশ পুরোনো। বলা হয়ে থাকে, কোচদের ব্যাগ সব সময় গোছানোই থাকে। একটা ম্যাচ হারলেন, সমর্থকেরা দুয়ো দিলেন, রাতেই ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিল চাকরি নেই। ফুটবলের এই যুগে, যেখানে তাৎক্ষণিক ফলাফল আর নির্দয় বরখাস্তই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে কোচদের দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্বে থাকা যেন এক দুর্লভ ঘটনা।
তবে দুর্লভ ঘটনার মধ্যেই কেউ কেউ গড়ে তোলেন সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টান্ত। এই কোচরা ক্লাবের একাধিক প্রশাসনিক রদবদলের মধ্যেও বছরের পর বছর ডাগআউটে হয়ে ওঠেন বিকল্পহীন। তাঁরা গড়ে তুলেছেন উত্তরাধিকার, প্রতিষ্ঠা করেছেন ক্লাবের পরিচয়ও। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের এমনই দীর্ঘ সময় ধরে কাজ চালিয়ে যাওয়া পাঁচ কোচের গল্প শুনুন আজ।
ফ্রাঙ্ক স্মিট (হাইডেনহাইম)—১৭ বছর
হাইডেনহাইম খেলে জার্মানির শীর্ষ লিগ বুন্দেসলিগায়। শীর্ষস্তরে টানা তৃতীয় মৌসুমে খেলতে যাওয়া এই ক্লাবটির কোচের দায়িত্বে থাকা ফ্রাঙ্ক স্মিট ডাগআউটে আছেন ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে। স্মিট নিজে একসময় এই ক্লাবের ফুটবলার ছিলেন। তখন অবশ্য হাইডেনহাইম ফুটবল ক্লাব হিসেবে আলাদা ছিল না। হাইডেনহাইমার স্পোটবান্ড নামের একটি মাল্টি স্পোর্ট ক্লাবের ফুটবল শাখা ছিল। সেই শাখায় ২০০৩ থেকে ৪ বছর খেলেছেন স্মিট।
২০০৭ সালে কর্তৃপক্ষ এটিকে ফুটবল ক্লাব হিসেবে স্বতন্ত্র করে দেওয়ার পর কোচের দায়িত্ব নেন স্মিট। দলটি তখন খেলত জার্মান ফুটবলের পঞ্চম স্তর। প্রথম মৌসুমেই দলকে চতুর্থ বানিয়ে জার্মান ফুটবলের চতুর্থ স্তর রেজিওনালিগায় তোলেন স্মিট। পরের বছর হাইডেনহাইম জায়গা করে তৃতীয় স্তর লিগা থ্রিতে। এখান থেকে অবশ্য ওপরে উঠতে সময় লেগেছে। বুন্দেসলিগা ২-তে উঠতে লেগেছে ৫ মৌসুম, এরপর সেখানে কাটাতে হয়েছে আরও ৯ মৌসুম। ২০২৩ সালে এসে প্রথমবার বুন্দেসলিগায় জায়গা করে হাইডেনহাইম, এখনো আছে শীর্ষ স্তরেই।
এই যে পঞ্চম স্তরের একটি ক্লাবকে শীর্ষ স্তরে নিয়ে আসা—এই পুরো পথটায় স্মিটের পাশে ছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে কোচিং করিয়ে যাওয়ার কীর্তিটাও স্মিটেরই।
দিয়েগো সিমিওনে (আতলেতিকো মাদ্রিদ)—১৩ বছর
২০১১ সালের ডিসেম্বরে আতলেতিকো মাদ্রিদ কোচের দায়িত্ব নেন দিয়েগো সিমিওনে। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত স্প্যানিশ ক্লাবটির ডাগআউট সামলে যাচ্ছেন এই আর্জেন্টাইন। দফায় দফায় তাঁর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। বর্তমান চুক্তি ২০২৭ সাল পর্যন্ত। অথচ সিমিওনে দায়িত্ব নেওয়ার আগে ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যেই আতলেতিকোর প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন চারজন! সাফল্য, খেলোয়াড় ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিমিওনেই সেরা বিকল্প, সেটা বলছে তাঁর দীর্ঘ মেয়াদই।
পেপ গার্দিওলা (ম্যানচেস্টার সিটি)—৯ বছর
সিনিয়র ফুটবল দলে পেপ গার্দিওলার কোচিং ক্যারিয়ার ১৬ বছরের। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি কাটিয়ে ফেলেছেন ম্যানচেস্টার সিটিতে। ২০০৮ সালে বার্সেলোনা মূল দলের দায়িত্ব পাওয়া গার্দিওলা সেখানে ছিলেন ৪ বছর, পরে বায়ার্ন মিউনিখে ৩ বছর। ২০১৬ সালে ইংলিশ ক্লাব সিটিতে যোগ দেওয়ার পর ডাগআউট সামলে যাচ্ছেন টানা। সামনের মৌসুম হতে যাচ্ছে টানা দশম। একের পর এক সাফল্যই হয়তো গার্দিওলাকে সিটিতে আটকে রেখেছে। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম দল হিসেবে টানা চার মৌসুমে ট্রফি, সিটির প্রথমবার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ—তাঁর হাত ধরেই এসেছে।
মিকেল আরতেতা (আর্সেনাল)—৫ বছর
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আর্সেনালের দায়িত্ব নেন মিকেল আরতেতা। প্রথম বছর এফএ কাপ আর ২০২০ ও ২০২৩ সালে কমিউনিটি শিল্ড জিতেছেন—ট্রফি সাফল্য বলতে এটুকুই। তবে এ সময়েই আর্সেনাল নিয়মিতভাবে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার দাবিদার হয়ে উঠেছে। যার সুবাদে আরতেতার ওপর কর্তৃপক্ষের আস্থাও দিনে দিনে বেড়েছে। প্রথমে চার বছরের চুক্তিতে যোগ দিলেও আরতেতা বর্তমানে ২০২৭ সাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ।
মানুয়েল পেলেগ্রিনি (রিয়াল বেতিস)—৫ বছর
সেই ১৯৮৮ সাল থেকে কোচিং করিয়ে আসছেন মানুয়েল পেলেগ্রিনি। রিয়াল বেতিস কোচ হিসেবে তাঁর ১৬তম চাকরি। আগের ১৫টির মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ বছর কাটাতে পেরেছিলেন ভিয়ারিয়ালে, ২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত। এবার সেই রেকর্ড ভাঙতে চলেছেন ৭১ বছর বয়সী এই কোচ। ২০২০ সালের জুলাইয়ে বেতিসে যোগ দেওয়ার পর ৫ বছর পেরিয়ে গেছে, শুরু করতে যাচ্ছেন ষষ্ঠ মৌসুম। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পেলেগ্রিনি রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটির মতো বড় ক্লাবে কাজ করেছেন পেলেগ্রিনি।