হারের দায় নিজের কাঁধে নিলেন কাবরেরা

হামজা চৌধুরীর এই ছবিটাই বলে দিচ্ছে সব! আজ হংকংয়ের কাছে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ৪–৩ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ।শামসুল হক

আবারও সেই হার শেষে হতাশার ছবি! তবে এমন হার একটু বেশিই পোড়াচ্ছে বাংলাদেশকে। শুরুতে গোল করে এগিয়ে যাওয়া, এরপর ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়া। ২ গোল করে আবার সমতায় ফেরা, সমতাসূচক গোলটি আবার যোগ করা সময়ের নবম মিনিটে। অন্তত একটা পয়েন্ট নিয়ে ম্যাচটা শেষ করতেই পারত বাংলাদেশ। কিন্তু এক ফরাসি বংশোদ্ভূত তরুণের কাছেই হেরে গেল স্বাগতিকেরা। রেফারির শেষ বাঁশির ঠিক আগমুহূর্তে, যোগ করা সময়েরও যোগ করা সময়ে বাংলাদেশের এক পয়েন্টের আশার গুড়ে বালি ঢেলে দেন হংকংয়ের ২৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড রাফায়েল মেরকিস।

রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার ম্যাচে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ৪-৩ গোলের হারের পর দায় নিজের ঘাড়েই নিয়েছেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে কাবরেরা বলেন, ‘আমি সব দায় নিচ্ছি, পুরো টিমও নিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দায় আমারই।’

এশিয়ান বাছাইয়ে এ নিয়ে তিন ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে শুধু ভারতের সঙ্গে ড্র করেছে। তাতে বাংলাদেশের পয়েন্ট মাত্র এক। বর্তমানে পয়েন্ট টেবিলের তলানির দলই বাংলাদেশ। তারপরও আশা দেখছেন কাবরেরা।

হারের পর হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়ছে বাংলাদেশ দল
শামসুল হক

১৪ অক্টোবর হংকংয়ের মাঠে হংকংয়ের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচ বাংলাদেশের। সেই ম্যাচের দিকেই দৃষ্টি কাবরেরার, ‘এখন আমাদের মনোযোগ পরবর্তী ম্যাচে দিতে হবে। আমাদের এখনো সুযোগ আছে। সামনে হংকংয়ের সঙ্গে আরেকটা ম্যাচ আছে। যদি আমরা সেটা জিততে পারি, তাহলে আবারও আমরা গ্রুপের শীর্ষে তিনের মধ্যে চলে আসব।’

সাত গোলের থ্রিলার। যোগ করা সময়ে শমিত সোমের গোলে এক পয়েন্টের স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশ শেষ দুই মিনিট কেন রক্ষণদেয়ালটা ঠিকঠাক রাখতে পারেনি, সেই ব্যাখ্যায় কাবরেরা বলেন, দোষটা শুধুই ডিফেন্ডারদের নয়, ‘আমার কাছে এটা শুধুই ডিফেন্ডারদের দোষ নয়। কারণ, গোলের পরিস্থিতিগুলো শুধুই ডিফেন্ডারদের ওপর নির্ভর করছিল না।’

আরও পড়ুন
এই হারের কারণ বুঝিয়ে বলা কঠিন, তবে শুরুটা ভালোই ছিল। গুছিয়ে উঠতে আমাদের কিছুটা সময় লেগেছে। কিন্তু প্রথম পাঁচ মিনিটের পর আমরা দারুণ খেলেছি। আমার এখানে আসার পর থেকে সম্ভবত এটিই সবচেয়ে ভালো প্রথমার্ধ ছিল।
হাভিয়ের কাবরেরা, কোচ, বাংলাদেশ

র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৩৮ ধাপ এগিয়ে ছিল হংকং। তারপরও ঘরের মাঠে গ্যালারিভর্তি দর্শকের সামনে চোখে চোখ রেখে লড়েছে বাংলাদেশ। শুধু শেষ সময়ে গোলটা হজম না করলে চিত্রনাট্যটা ভিন্ন হতে পারত।

হতাশ বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা
প্রথম আলো

এমন হারের পরও আশাবাদী হওয়ার মতোই কিছু এই ম্যাচে খুঁজে পেয়েছেন কাবরেরা। বললেন, প্রথমার্ধে যেভাবে খেলেছে বাংলাদেশ, তাঁর সময়ে এটিই সেরা পারফরম্যান্স, ‘এই হারের কারণ বুঝিয়ে বলা কঠিন, তবে শুরুটা ভালোই ছিল। গুছিয়ে উঠতে আমাদের কিছুটা সময় লেগেছে। কিন্তু প্রথম পাঁচ মিনিটের পর আমরা দারুণ খেলেছি। আমার এখানে আসার পর থেকে সম্ভবত এটিই সবচেয়ে ভালো প্রথমার্ধ ছিল।’

শেষ সময়ে নিজেদের ভুলে গোল হজম করেছে বাংলাদেশ। যেটা কোচের চোখেও লেগে আছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের চেয়ে হংকংয়ের খেলোয়াড়েরা যে শারীরিকভাবে শক্তিশালী, সেটাও বললেন তিনি, ‘একদম শেষ মুহূর্তে একটা অপ্রয়োজনীয় ভুল আমাদের বিপদে ফেলে দিয়েছে। তবে তাদের ফরোয়ার্ড ও উইঙ্গাররা শারীরিকভাবে শক্তিশালী। তারা সহজেই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।’

আরও পড়ুন

পুরো ম্যাচে কাবরেরার কৌশলেও কিছু ভুল ছিল। শুরুর একাদশে তিনি মাঝমাঠে দুই সোহেল রানার সঙ্গে হামজা চৌধুরীকে রেখেছেন। কিন্তু কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলা শমিতকে সাইড বেঞ্চে রেখে দেন। এ ছাড়া দারুণ ফর্মে থাকা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জায়ান আহমেদকেও শুরু থেকে নামাননি কাবরেরা।

যোগ করা সময়ের নবম মিনিটে শমিত সোমের গোলের পর শমিত ও হামজার উল্লাস। তবে একটু পরেই মিলিয়ে গেছে এই উৎসব
শামসুল হক

এসবের ব্যাখ্যায় বাংলাদেশ কোচ বলেন, ‘শমিত প্রায় দুই মাস ইনজুরিতে ছিল। তাই আমরা আগেই আলোচনা করেছিলাম, ওকে যেন দ্বিতীয় ম্যাচে সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় নামানো যায়। ওর ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। সে জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর হংকংয়ের এভারটন ক্লান্ত হয়ে পড়লে দ্বিতীয়ার্ধে জায়ানকে নামাব, সেটাই ভেবে রাখি। প্রথমার্ধে এভারটনকে ভালোভাবে সামলেছে সাদ।’

হংকং কোচ অ্যাশলি ওয়েস্টউডও বাংলাদেশের ভুলগুলো ধরিয়ে দেন। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এই ইংলিশ কোচ বলেন, ‘প্রতিটি গোলই কোনো না কোনো ভুলের ফল। আমাদের দ্বিতীয় গোল এসেছে বাংলাদেশের গোলরক্ষকের ভুলে। প্রথম গোল এসেছে ভুল যোগাযোগ থেকে, আমাদের ব্যাকলাইনও একটু নিচে ছিল। খুব কমই দেখা যায় ম্যারাডোনার মতো কেউ পাঁচজনকে ড্রিবল করে গোল দেন! তাই আমি প্রতিপক্ষকে সমালোচনা করব না। আমি শুধু আমার দলের ভুল ঠিক করায় মনোযোগ দিতে চাই।’

আরও পড়ুন